সারা দিন চেষ্টা করেও রক্ষা করা গেলে না নদীর বাঁধ। পূর্ণিমার ভরা কোটালে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার নদীর জল বাড়ায় সন্দেশখালির মেখোখালি গ্রামে রামপুর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার দুপুরে বাঁধ ভাঙার পর থেকে সরবেড়িয়া-আগারআটি পঞ্চায়েতের সাহায্যে গ্রামের মানুষ বাঁশ, বস্তা, টিন দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। জলের তোড়ে বারবার ভেঙে গিয়েছে বাঁধ। বুধবার রাতে জল ঢুকে যায় গ্রামে। সরকারি উদ্যোগে বাঁধ মেরামত ও ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভ জানান মানুষ। ভেড়ি এলাকা জলে ভেসে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মত্স্যজীবীদের দাবি। দুর্গতদের অভিযোগ, ত্রাণের পলিথিন বা খাবার তো দূরের কথা, প্রশাসনিক কর্তাদের দেখাই নেই। |
নামেই সড়ক। কিন্তু বনগাঁ শহরের মতিগঞ্জ থেকে বয়রা পর্যন্ত বনগাঁ-বাগদা সড়কের অবস্থা দীর্ঘদিন ধরেই বেহাল। বহু জায়গাতেই পিচ উঠে গিয়েছে। তৈরি হয়েছে বড় বড় গর্ত। বৃষ্টিতে সেগুলিতে জল জমে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে। ফলে দুর্ঘটনার যে কমতি নেই তা বলাইবাহুল্য। যানচালক থেকে যাত্রী সকলেরই নাভিশ্বাস ওঠার জোগাড়। কিন্তু রাস্তা খারাপের জন্য তা এড়ানোরও উপায় নেই। কারণ, বনগাঁ মহকুমার বাগদা ব্লকের কয়েক লক্ষ বাসিন্দার বনগাঁ শহরে আসার একমাত্র উপায় এই বনগাঁ-বাগদা সড়ক। দীঘর্দিন ধরে রাস্তা সারানোর দাবি জানানো হলেও প্রশাসন তাতে আমল না দেওয়ার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার ওই রাস্তায় বাস-অটো চলাচল বন্ধ করে দেন গাড়ির মালিকেরা। তাঁদের বক্তব্য, এর পরেও প্রশাসনের টনক না নড়লে তাঁরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন। এমনিতে রাস্তার কারণে দুর্ভোগ ছিলই। তার উপর এ দিন বাস-অটো বন্ধের জেরে সেই দুর্ভোগ চরমে পৌঁছয়। বাধ্য হয়ে কাজে বের হওয়া মানুষজন লরি, ম্যাটাডর, মিনিট্রাকে করে যাতায়াত করেন।
ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, রাস্তার জন্য দুর্ভোগের অন্ত নেই। যানবাহন কমে গিয়েছে। কিন্তু রাস্তা সারানোর ব্যাপারে হুঁশ নেই প্রশাসনের। রাস্তার অবস্থা নিয়ে প্রচণ্ড ক্ষোভ রয়েছে যানচালক থেকে মালিকেরও। তাঁদের অভিযোগ, সরকারকে নিয়মিত রোড ট্যাক্স দিতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তার যা অবস্থা তাতে গাড়ির যন্ত্রাংশের দফারফা হচ্ছে। সরকার কি সেই ক্ষতি পুষিয়ে দেবে? এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে অনেকে ওই রাস্তা থকে গাড়ি তুলে নিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাস্তা সংস্কারের দাবি প্রশাসন না মানায় বাধ্য হয়েই তাঁদের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে বলে জানালেন বাস-অটো মালিকেরা। |
বনগাঁ থেকে বাগদার বয়রা, দত্তফুলিয়া, বেয়ারা-সহ বিভিন্ন রপটে ৪০টি মতো বাস চলাচল করে এই রাস্তায়। অটো চলে প্রায় সাড়ে তিনশোর মতো। বনগাঁ-বয়রা বাস সিন্ডিকেটের সম্পাদক ও মতিগঞ্জ এলপিজি অটো ইউনিয়নের সভাপতি দেবদাস মণ্ডল বলেন, “রাস্তা দীর্ঘদিন ধরে না সারানোয় তা আর বাস-অটো চালানোর অবস্থায় নেই। জোর করে চালালে গাড়ির যন্ত্রাংশের ক্ষতি হচ্ছে। তা ছাড়া বনগাঁ থেকে বয়রা পর্যন্ত দূরত্ব যেতে স্বাভাবিক সময় লাগে এক ঘণ্টা দশ মিনিটের মতো। রাস্তার জন্য তা প্রায় দু’ঘণ্টা লাগছে। অবিলম্বে রাস্তা সংস্কারের দাবি জানিয়ে শুক্রবার সংশ্লিষ্ট সহ মহলে চিঠি দেওয়া হবে। সাত দিনের মধ্যে কাজ শুরু না হলে লাগাতার ধর্মঘট শুরু হবে।” এর পাশাপাশি সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই রাস্তায় বেআইনি যান চলাচল বন্ধের জন্যও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দাবি জানানো হয়েছে।
পূর্ত দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, দু’টি পর্যায়ে ওই রাস্তা সারানো হবে। প্রথম পর্যায়ে মতিগঞ্জ থেকে হেলেঞ্চা পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার অংশের সংস্কার করা হবে। দ্বিতীয় পর্যায়ে হেলেঞ্চা থেকে বয়রা পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার অংশ সারানো হবে। ইতিমধ্যেই প্রথম পর্যায়ের জন্য ১০ কোটি ৭৫ লক্ষ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ১১ কোটি টাকা বিএডিপি প্রকল্পের মাধ্যমে পাওয়া গিয়েছে। জেলা সড়ক সুরক্ষা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গোপাল শেঠ জানিয়েছেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে এখনও কাজ শুরু করা যায়নি। সমস্যার কতা পূর্তমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। বনগাঁ উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাস বলেন, “অর্থ অনুমোদন হয়ে যাওয়ার পরেও কাজ শুরু না হওয়ার জন্য পূর্ত দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছি। আজ থেকেই যাতে কাজ শুরু হয় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ওই রাস্তায় মানুষকে যে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাতে কোনওমতেই কাজে দেরি করা যাবে না।”
কী বলছে মহকুমার পূর্ত দফতর? দফতরের সহকারী বাস্তুকার মল্লিনাথ মজুমদার বলেন, “প্রথম পর্যায়ের কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারের গাফিলতি ও বর্ষার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। বৃহস্পতিবার থেকে খানাখন্দ বোজানোর কাজ শুরু হয়েছে। পুরোপুরি সংস্কারের কাজ শীঘ্রই শুরু করা হবে।” |