সারা দিন চেষ্টা করেও রক্ষা করা গেলে না নদীর বাঁধ। পূর্ণিমার ভরা কোটালে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকার নদীর জল বাড়ায় সন্দেশখালির মেখোখালি গ্রামে রামপুর নদীর বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হল বিস্তীর্ণ এলাকা। মঙ্গলবার দুপুরে বাঁধ ভাঙার পর থেকে সরবেড়িয়া-আগারআটি পঞ্চায়েতের সাহায্যে গ্রামের মানুষ বাঁশ, বস্তা, টিন দিয়ে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব হয়নি। জলের তোড়ে বারবার ভেঙে গিয়েছে বাঁধ। বুধবার রাতে জল ঢুকে যায় গ্রামে। সরকারি উদ্যোগে বাঁধ মেরামত ও ত্রাণের দাবিতে ক্ষোভ জানান মানুষ। ভেড়ি এলাকা জলে ভেসে যাওয়ায় কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে মত্স্যজীবীদের দাবি। দুর্গতদের অভিযোগ, ত্রাণের পলিথিন বা খাবার তো দূরের কথা, প্রশাসনিক কর্তাদের দেখাই নেই। |
মহকুমাশাসক শ্যামল মণ্ডল বলেন, “বাঁশ পুঁতে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা বার বার ব্যর্থ হওয়ায় দ্রুত শালবল্লার পাইলিং করে বাঁধ রক্ষায় সেচ দফতরকে বলা হয়েছে। ত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্ট দুই ব্লকের বিডিওদের বলা হয়েছে।”
ব্লক প্রশাসন সূত্রের খবর, মঙ্গলবার বেলা ১১টা নাগাদ বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে প্লাবিত হয় সন্দেশখালির সড়বেড়িয়া-আগারহাটি ও বেড়মজুর পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। ওই এলাকাগুলিতে ভেড়ি থাকায় মাছ চাষের প্রভূত ক্ষতি হয়েছে।
এ দিন সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, প্রায় ৭০ ফুট এলাকা জুড়ে বাঁশ টিন ও মাটির বস্তা দিয়ে তৈরি বাঁধ ভেঙে প্রবল গতিতে জল ঢুকছে এলাকায়। মেখোখালি গ্রামের রহমান আকুঞ্জি, আমজেদ হোসেন, সাহেব মোল্লা, মোতালেব শেখ বলেন, “ঝুপখালি, আকুঞ্জিপাড়া, রামপুর, মেখোখালি, মোল্লাপাড়া, লস্করপাড়া, শিমূলআটি, হাটগাছি-সহ বড় এলাকায় চাষের জমি ও মাছের ভেড়িতে জল ঢুকে গিয়েছে। মানুষ সর্বস্বান্ত হতে বসেছে। তিন দিন হয়ে গেল, কোনও সরকারি সাহায্য মেলেনি। সকলের কাছে চেয়েচিন্তে প্রধান ও উপপ্রধানের সাহায্যে গ্রামের মানুষ, বিশেষ করে যাঁরা বাঁধ তৈরির কাজ করছেন, তাঁদের জন্য খিচুড়ির ব্যবস্থা করেছিলাম।”
মেখোখালি, মোল্লাপাড়া জলমগ্ন হলেও বিডিও কিংবা সেচ দফতরের কোনও আধিকারিকের দেখা মেলেনি বলে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। সফিকুল ইসলাম, রহমত সর্দার, ফজের আলি মোল্লা, নুর আলি মোল্লাদের বক্তব্য, “এই অবস্থায় খাবার, পলিথিন কিছুই দেওয়া হয়নি। গ্রাম ছেড়ে অনেকে আত্মীয়ের বাড়ি বা দু’নম্বর বেড়মজুরের ভাঙাচোরা গেস্ট হাউসে আশ্রয় নিয়েছেন।” খালেক বৈদ্য নামে এক বাসিন্দার কথায়, “জলে ঘর ভেসেছে। স্ত্রী-পুত্র নিয়ে রাস্তায় বাস করছি।”
তবে বাঁধ তৈরি নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। সরবেড়িয়া-আগারআটি পঞ্চায়েতের তৃণমূলের উপপ্রধান শেখ সাজাহান বলেন, “রাত জেগে কেবল বাঁধ রক্ষার চেষ্টাই নয়, দুর্গতদের খিচুড়ি খাওয়ানো হয়েছে।” পঞ্চায়েতের প্রাক্তন প্রধান তথা সিপিএম নেতা মোসলেম শেখের অবশ্য বক্তব্য, “গ্রামবাসীরা বাঁধ বাঁচানোর চেষ্টা করেছে। খিচুড়ি খাওয়ানোর কথা সত্যি নয়।”
জেলা পরিষদ সদস্য রণজিত্ মণ্ডল বলেন, “দুর্গতদের ত্রাণের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলিকে বলা হয়েছে।” |