শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মীদের হাজিরা দেওয়ার জন্য কিছু দিন আগে চালু হয়েছিল বায়োমেট্রিক পদ্ধতি। কিন্তু তাঁদেরই একাংশের বিক্ষোভের জেরে বর্ধমান রাজ কলেজে তা স্থগিত হয়ে গেল। ১৩ দিন চলার পরে গত ১৪ অগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে এই পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়া বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে কলেজকে।
গত ১ অগস্ট কলেজ পরিচালন সমিতির সিদ্ধান্ত অনুসারে এই পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়া শুরু হয়। কিন্তু যন্ত্রের মাধ্যমে এই হাজিরা নেওয়া নিয়ে প্রবল আপত্তির মুখে পড়েন অধ্যক্ষ ও পরিচালন সমিতি। শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের একাংশ দাবি করেন, এ ভাবে হাজিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মবিরোধী এবং শিক্ষকদের সার্ভিস রুলেও নেই। তাই এ ভাবে হাজিরা নেওয়া হতে থাকলে ভবিষ্যতে তাঁদের পেনশন পেতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কলেজ কর্তৃপক্ষ এই প্রতিবাদে কর্ণপাত না করায় কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সংগঠন ‘ওয়েবকুপা’-র তরফে কয়েকটি কলেজের শিক্ষকেরা মিলিত ভাবে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দফতরের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ শুরু করেন।
রাজ কলেজের অধ্যক্ষ সুভাষচন্দ্র নন্দীর দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ প্রায় দেড়শো কলেজে এই প্রথম বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়া শুরু হয়েছিল। তিনি আরও বলেন, “হাজিরার ব্যাপারে কড়াকড়ি থেকে আমরা কিন্তু সরছি না। সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই হাজিরা খাতা আমার কাছে রাখা থাকবে। তার পরে তা ফের ৩টে নাগাদ রাখা হবে।”
ওয়েবকুপা-র জেলা সম্পাদক শ্রীধর বন্দোপাধ্যায় বলেন, “আমরা যন্ত্রের মাধ্যমে হাজিরার বিপক্ষে নই। কিন্তু যে ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না নিয়ে এই পদ্ধতিতে হাজিরা শুরু হয়েছে, আমরা তার বিরোধিতা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে হাজিরার অনুমোদন দিলে আমরা তা মাথা পেতে নেব।”
শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের বামপন্থী সংগঠনের দুই নেতা প্রদ্যোত মাইতি ও বুদ্ধদেব মণ্ডলের দাবি, “সরকারি নিয়মকে অগ্রাহ্য করে এই যন্ত্র-হাজিরা শুরু হয়েছে। তাই আমরাও কলেজের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছি।”
তবে কলেজ পরিচালন সমিতির সদস্য তারকেশ্বর মণ্ডল ও প্রধান করণিক সুব্রত চৌধুরীর বক্তব্য, “কলেজের শিক্ষকদের হাজিরা নিয়ে অনেক গরমিলের কথা উঠছিল। তাই আমরা চেয়েছিলাম হাজিরা নিয়ে স্বচ্ছতা বজায় থাকুক। কিন্তু কলেজেরই একাংশের কর্মীরা এই পদ্ধতির বিরোধিতা করেছেন।”
এই পরিস্থিতিতে গত ১৪ অগস্ট বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্মৃতিকুমার সরকারের নির্দেশে কলেজসমূহের পরিদর্শক দেবকুমার পাঁজা রাজ কলেজকে একটি চিঠি দিয়ে জানান, বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়া আপাতত বন্ধ রাখতে হবে। দেবকুমারবাবুর বক্তব্য, “আমাদের নিয়মে হাজিরা রেজিস্টারেই নিতে হবে বলা আছে। তবে ভবিষ্যতে কর্মসমিতির বৈঠকে বিকল্প পদ্ধতিতে যাতে হাজিরা নেওয়া যায়, তার চেষ্টা করব আমরা।” রেজিস্ট্রার শ্রীপতি মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ভবিষ্যতে ওই বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতেই হাজিরা নিতে চাই। তাই কর্মসমিতি ও কোর্টে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে আমরা ওই পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়ার জন্য আচার্য তথা রাজ্যপালের সম্মতি নেব। যাতে ওই আধুনিক পদ্ধতিতে হাজিরা নেওয়া সম্ভব হয়।”
|