সন্ধ্যা নামলেই ওদের গতিবিধি বেড়ে যায়। সবার পকেটে মোবাইল ঘনঘন বেজে উঠছে। একবার করে ফোন তুলছেন আর উধাও হয়ে যাচ্ছে ওরা। কিছুক্ষণ পর আবার হাজির। এবারে চালচলন একটু অন্য ধরণের। একটু সর্তক যেন। বারবার নজর যাচ্ছে ঢোলা প্যান্টের পকেটের দিকে। কোমরের দিকেও চোখ যাচ্ছে। একটু পরে হাজির আরেকজন ইশারায় অন্ধকারে মিলিয়ে গেল দুজন। একটু পরে আবার ফোন। শোনা গেল, কী লাগবে দাদা, দিশি না বিদেশি? বিদেশিতে ডিসকাউন্ট হবে। দিশি ভেঙে বিক্রি হবে। ফোনের ওপার থেকে অর্ডার মিলতেই আবার উধাও।
কোচবিহার জেলার ছোটছোট বাজারগুলিতে এভাবেই জাঁকিয়ে বসেছে মদের বেআইনি কারবার। সিতাই, দিনহাটা, মাথাভাঙা থেকে শুরু করে জেলা শহরের কাছের বাণেশ্বর, বোকালি, পুন্ডিবাড়ি, ঘুঘুমারি, দেওয়ানহাট সর্বত্র একই ছবি। পুলিশ, প্রশাসন, আবগারি দফতরের চোকের সামনেই এই ব্যবসা চললেও তাঁদের খুব একটা মাথাব্যাথা নেই বলে অভিযোগ।
যদিও কোচবিহারের পুলিশ সুপার অনুপ জয়সওয়াল বলেন, “মাঝে মধ্যেই অভিযান চালানো হয়। আবগারি দফতরের সঙ্গে যৌথভাবেও অভিযান হয়। খবর পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” আবগারি দফতরের জেলা আধিকারিক মিলন বিশ্বাস বলেন, “টানা অভিযান চলছে। অসম, ভুটান থেকে বেআইনিভাবে মদ ঢোকা বন্ধ হয়েছে। খুব চুপিসাড়ে দু-এক জায়গায় বিক্রি হচ্ছে। উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আবগারি দফতর সূত্রের খবর, দাম সস্তা হওয়ায় কোচবিহারে অসম ও ভুটানে তৈরি মদের ব্যপক চাহিদা রয়েছে। একটি ছোট বোতলে প্রায় ৩০-৪০ টাকার পার্থক্য রয়েছে। বড় বোতলে দামের পার্থক্য আরও বেশি। সেগুলি চোরাপথে আলিপুরদুয়ার, বক্সিরহাট হয়ে কোচবিহারে ঢোকে। তার পরে চাহিদা অনুযায়ী নানা জায়গায় ছড়িয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি সব ধরণের খদ্দের ধরার জন্য বিদেশি মদও বেআইনিভাবে মজুত করে রাখা হয়। একবারে ২ লিটার, ৫ লিটারের বোতল কিনে রাখা হয়। দিশি মদের ক্ষেত্রে ১০-৪০ টাকার বিক্রি করা হয়।
সিতাইয়ের এক চোরা ব্যবসায়ী জানান, বোতল খুলে অল্প অল্প ঢেলে বিক্রি করলে আমাদের একটি ২ লিটারের বোতলে ২০০ টাকার উপরে লাভ হয়। অসম ভূটান মদে আরও লাভ অনেক বেশি। টেলিফোনে অর্ডার পেলে খদ্দেরের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। তাতে আমাদের লোকসান হয় না। দেওয়ানহাতের এক চোরা ব্যবসায়ী জানান, এক জায়গায় বসে মদ বিক্রি করতাম। বারবার ধরা পড়ে যাওয়ায় তা বন্ধ করে দিয়েছি। এখন মোবাইলে ব্যবসা চলছে। ধরা পড়ার ভয় অনেক কম। আবগারি দফতরের এক জেলাক কর্তা জানান, এক সময় সব জায়গাতেই পানের দকানে বা চায়ের দোকানে মদ বিক্রি হত। সহজেই তাদের ধরা যেত। মদও বাজেয়াপ্ত করা সহজ হত। সম্প্রতি সেই ব্যবসার ধরণ বদল হয়েছে। মদ লুকিয়ে রেখে মোবাইল ফোন নিয়ে ঘুরে বেড়ায় ব্যবসায়ীরা। এতে চট করে তাদের চিহ্নিত করা যায় না। কাউকে ধরলেও অনেক সময় মদ বাজেয়াপ্ত করা যায় না। |