ওদের আপন বলতে কেউই নেই। সারা বছর ওরা হোমে চার দেওয়ালের ভিতরে বন্দি থাকে। বুধবার এরকমই ৮৩ মূক ও বধির আবাসিক কিশোর-কিশোরীকে রাখিবন্ধন উৎসবে সামিল করলেন সমাজ কল্যাণ দফতরের রায়গঞ্জের সূর্যোদয় হোম কর্তৃপক্ষ। আবাসিকদের হাতে নতুন পোশাক দেওয়ার পাশাপাশি বিশেষ খাবারেরও ব্যবস্থা করালহয়। রাজ্যের নারী ও সমাজ কল্যাণ দফতরের মন্ত্রী সাবিত্রী মিত্র বলেন, “শারীরিক ও মানসিক বিকাশের স্বার্থে আমরা চাই হোমের মূক ও বধির আবাসিকেরা আনন্দে থাকুক। সূর্যোদয় হোম কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে রাখিবন্ধন উৎসব করে খুব ভাল কাজ করেছেন। হোম কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছি।” তিনি জানান, মূক ও বধির আবাসিকদের ভবিষ্যতে স্বনির্ভর করে তুলতে রাজ্য সরকার হোমে কারিগরি বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ চালুর পরিকল্পনাও নিয়েছে।
হোম সূত্রের খবর, আদালতের নির্দেশে বাড়ি থেকে হারানো ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী মূক ও বধির কিশোর কিশোরীদের সূর্যোদয় মূক ও বধির আবাসিক হোমে রাখা হয়। একমাত্র এই হোমে আবাসিকদের চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়া ও খেলাধূলার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে। বর্তমানে হোমে ৮৩ জন মূক ও বধির আবাসিকের মধ্যে ৪৪ কিশোর ও ৩৯ জন কিশোরী। |
এ দিন সকালে নতুন জামা-প্যান্ট ও চুড়িদার পড়ে মূক ও বধির কিশোর-কিশোরীরা হোমের বারান্দায় পরপর বসে। প্রথমে কিশোরীরা কিশোরদের ও পরে কিশোররা কিশোরীদের হাতে রাখি বেঁধে দেয়। মাথায় ধান ও দূর্বা ছড়িয়ে দই, কাজল ও চন্দনের ফোঁটা পরিয়ে প্রদীপ আর ধূপকাঠি ঘুরিয়ে আরতিও করার পর একে অপরকে মিষ্টি মুখ করায়। সমস্ত আবাসিকদের জন্য সকালে লুচি, পায়েস, তরকারি ও দুপুরে ফ্রাইড রাইস, ভাত, মাংস, সবজি, ডাল, মাছ, মাংস, চাটনি, দই ও মিষ্টি’র ব্যবস্থা করা হয়। পরে রাতে বিরিয়ানি ও ডিমের কালিয়া খাওয়ানো হয়। হোমের অধ্যক্ষ পার্থসারথি দাস বলেছেন, “সারা বছর হোমের চার দেওয়াল ও নানা নিয়মের ফাঁসে বন্দি থেকে আবাসিকেরা হাপিয়ে ওঠে। তাদের ওই একঘেয়েমি কাটিয়ে তুলে ওদেরকে উৎসবের আনন্দ দিতেই হোমের নিজস্ব তহবিলের টাকায় এই প্রথম বড় মাপের রাখিবন্ধন উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।” সারা দিন ধরে নানা অনুষ্ঠান ও পরে দু’বেলাই বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা থাকায় তারাও খুশি বলে আবাসিকেরা জানিয়েছে। |