মালদহে চরম বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইতে শুরু করেছে গঙ্গা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফুলহারের জল। ফুলহার নদীর জল বাড়ায় হরিশ্চন্দ্রপুর, রতুয়া ও মানিকচকে লাল সতর্কতা জারি করা হয়েছে। গঙ্গায় জলস্ফিতির কারণে নতুন করে মানিচকের গদাইচরে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়ে পড়েছে। চরম বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটারে উপর দিয়ে বইছে গঙ্গা। বস্তুত, কলকাতায় বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে নিম্নচাপ অবস্থান বদলাতেই মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে উত্তরবঙ্গ জুড়েই বৃষ্টি শুরু হয়েছে। তাতেই নদীগুলিতে জলস্তর বেড়ে গিয়েছে। সেচ দফতরের নিবার্হী বাস্তুকার (গঙ্গা) অমরেশ কুমার সিংহ বলেন, “আজ রাত থেকে গঙ্গার জলস্তর স্থিতিশীল হতে শুরু করবে এবং শুক্রবার থেকে কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি।’ গঙ্গার জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় গদাইচরের নিচু এলাকায় বসবাসকারী প্রায় দুই হাজার মানুষ গবাদি পশু, বাড়ির জিনিসপত্র রক্ষা করতে বিপাকে পড়েছেন। ভূতনির কালুটোনটোলার প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনে তলিয়ে যাওয়ার মুখে। গঙ্গার গ্রাসের মুখে বাগদানটোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়-ও। এদিকে রাজকুমারটোলার, কালুটোনটোলার তৃতীয় বাঁধের পিছনে আরও একটি চতুর্থ বাঁধ তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। |
জেলা পরিষদের স্থানীয় সদস্য গৌর মণ্ডল বলেন, “পরিস্থিতি যা তাতে তৃতীয় বাঁধের এক, দুই ফুট কোথাও কোথাও জেগে রয়েছে। জল বাড়লে ওই বাঁধ উপচে জল চতুর্থ বাঁধের গোড়ায় ধাক্কা মারবে।”
মঙ্গলবার বিকেল থেকে পাহাড় ও সমতলে একটানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জলপাইগুড়ি শহর-সহ ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ এলাকার জনজীবন। চেল, ডায়না, নেওরা, মূর্তি, জলঢাকা নদীর জলস্তর বাড়তে শুরু করেছে। নদীর লাগোয়া অনেক এলাকায় জল ঢুকে পরার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বুধবার সকালেও অঝোরে বৃষ্টি হয়েছে জলপাইগুড়ি, ময়নাগুড়ি, ধূপগুড়ি, মালবাজার, ক্রান্তি, ওদলাবাড়ি, নাগরাকাটা, বানারহাট, কোচবিহার জেলা জুড়েই। বিকেল নাগাদ বৃষ্টি থামলেও আকাশ ছিল মেঘাচ্ছন্ন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের জলপাইগুড়ি শাখা সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। উত্তরবঙ্গ বন্যা নিয়ন্ত্রণ কমিশনের চেয়ারম্যান গঙ্গাধর দে বলেন, “মঙ্গলবার বিকেল থেকে বৃষ্টিপাতের ফলে কিছু নদীতে জল বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বঙ্গোপোসাগরের উপরে থাকা নিম্নচাপটি গত রবিবার থেকে ক্রমশ কলকাতার দিকে ঘেঁষতে শুরু করে। তার জেরে সোমবার, মঙ্গলবার কলকাতায় প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যে থেকে নিম্নচাপটি অবস্থান বদলাতে শুরু করে উত্তরদিকে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের শিক্ষক সুবীর সরকার বলেন, “কলকাতায় যে কারণে বৃষ্টিপাত হয়েছে, একই কারণে উত্তরবঙ্গও বৃষ্টি হচ্ছে। উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই বৃষ্টি হয়েছে।” আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, উত্তরবঙ্গের ৬ জেলাতেই গত ২৪ গণ্টায় গড়পরতা ৩০ থেকে ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাত থেকে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে আলিপুরদুয়ারে। বৃষ্টির পরিমাণ ১১৫.৮০ মিলিমিটার। ময়নাগুড়িতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫৮.০৮ মিলিমিটার, মেটেলিতে বৃষ্টি হয়েছে ৩৮ মিলিমিটার, নাগরাকাটায় ৩০ মিলিমিটার, মালবাজারে ২৯ মিলিমিটার। দিনভর বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার রাস্তাঘাট ছিল সুনসান। স্কুল, কলেজ, অফিসে উপস্থিতি ছিল কম। এই দিন ময়নাগুড়ি কলেজের ভূগোল বিভাগের প্রধান মধুসূদন কর্মকার বলেন, “নিম্নচাপের অক্ষরেখা উত্তরবঙ্গ এবং বিহারের উপরে চলে আসে। তার টানেই বঙ্গোপোসাগর থেকে মৌসুমি বায়ু ঢুকে পরায় বৃষ্টি এখানে হচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।” এরই পাশাপাশি, পাহাড়ে বৃষ্টির জেরে জলঢাকা, নেওরা, মূর্তি, চেল নদীর জলস্তর বেড়েছে। জল বেড়েছে নাগরাকাটায় কচি ডায়না, শামুকতলার ধারসি নদীতে। বেশ কিছু এলাকা নদী ভাঙনের কবলে। কোচবিহার কৃষি দফতর জানিয়েছে, চলতি বছরে এখনও জেলায় মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৭২৫ মিলিমিটার। যা গত বছরের তুলনায় অন্তত ৬০০ মিলিমিটার কম। তবে গত দু’দিনের বৃষ্টি আমন চাষের পক্ষে লাভজনক। |