দুর্গাপুজোর ‘ড্রেস রিহার্সাল’ একাই ভেস্তে দিল নিম্নচাপ। নবদ্বীপের মতো মন্দির-প্রধান শহরে চার দিনের ঝুলনযাত্রা কার্যত দুর্গাপুজোর একটি প্রাথমিক মহড়া। নবদ্বীপের ঝুলনে পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চল থেকে ভিড় জমান হাজারো মানুষ। পুজোর ঠিক আগে নবদ্বীপকে ঘিরে থাকা গ্রামীণ বাজারের বড় অংশ একই সঙ্গে পুজোর বাজার এবং ঝুলন দেখার দু’টি কাজই সেরে নেন। কিন্তু প্রবল বৃষ্টিতে এ বার কিন্তু অন্য বারের মতো সেই ভিড় চোখে পড়েনি।
মায়াপুরের ইসকন মন্দিরে শ্রাবণের ভেজা দিনগুলিতেও পর্যটকের অভাব হয় না, কিন্তু তাঁদের একটি বড় অংশও এ বারের ঝুলনে অনুপস্থিত থাকলেন লাগাতার বৃষ্টির কারণে। ইসকনের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, “বৃষ্টির কারণে এ বার পর্যটকদের ভিড় ঝুলনের চার দিনে এ বার সে ভাবে চোখে পড়েনি। ”
|
রাধা গোপীনাথ জীউড়ে ঝুলন। —নিজস্ব চিত্র। |
নবদ্বীপের মোহন্তবাড়ি, হরিসভা, বলদেব মন্দির, মদনমোহন মন্দির, গোবিন্দবাড়ি, মহাপ্রভু মন্দির, জন্মস্থান আশ্রম তাই ঝুলনের চোখ-ধাঁধানো সাজ নিয়েও কার্যত ভক্তশূন্য রইল এই ক’দিন। মহাপ্রভু মন্দির বা হরিসভা মন্দিরে এই চার দিন চার রকমের সাজে সাজানো হয় বিগ্রহকে। জনস্রোত সামাল দিতে পুলিশের ব্যবস্থা করতে হয়।
নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম সাহা বলেন, “নবদ্বীপকে ঘিরে চার পাশে যত গ্রামীণ এলাকা রয়েছে, তার বাসিন্দাদের উৎসব থেকে চিকিৎসা সবই এই শহরকেন্দ্রিক। তাই ঝুলনের ক’টি দিনেও ‘রথ দেখা, কলা বেচা’ দু’টি কাজই সেরে নেন তাঁরা। তবে এ বার বৃষ্টির জন্য ঝুলন তেমন জমলই না!” তবে উৎসবে যতই জল ঢেলে দিক না কেন মেঘাসুরখামতি পড়েনি দেবতার ভোগে। চার দিনে নানা ধরনের ভোগ। মালপোয়া থেকে মিহিদানা, চানা মশলা থেকে চানাচুর, তালের লুচি এমনকী পিৎজা থেকে পাস্তা!
যশোদানন্দন মোহন্তের বাড়ির ঝুলন শহরের ঝুলনগুলির মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ। বর্তমান সেবাইত বাবু মোহন্ত বলেন, “একাদশীর দিন ঝুলন বসে। সে দিন অন্নভোগ হয় না। মালপোয়া, লুচি, পুরি, জিলিপি, নাড়ু ভোগ দেওয়া হয়। সঙ্গে থাকে নিরামিষ পদ। ছানার রসা, চানা মশালা, ধোঁকার ডালনা, পনিরের তরকারিও দেওয়া হয়। একাদশীর পরদিন অন্নভোগের এলাহি ব্যবস্থা থাকে বিভিন্ন মন্দিরে।” ইসকনে ভোগে দেওয়া হয় পিৎজা।
হরিসভা মন্দিরের প্রধান বিবেকবন্ধু ব্রহ্মচারী বলেন, “দ্বাদশীর দিন ভোগের পদে ছিল নারকেল দিয়ে কচুর শাক, শুক্তো, ছোলা দিয়ে মোচার ঘণ্ট, ধোঁকার ডালনা, গোবিন্দভোগ চালের অন্ন। এর পর পোলাও, বেগুনি, ছানার ডালনা, চাটনি, পাঁপড়ভাজা, পায়েস, মালপোয়া, রসগোল্লা, বাদাম-বরফি আর সাদা দই।” মেঘ রাগে গাওয়া ঝুলন-কীর্তন শুনতে শুনতে এমন প্রসাদ পান দূরদূরান্ত থেকে আসা ভক্তেরা। |