পঞ্চায়েত ভোটের হিসেব দেখে আসন্ন লোকসভা নির্বাচন নিয়ে চিন্তায় কংগ্রেস। মুর্শিদাবাদে ৭০টির মধ্যে ৪২টি আসন পেয়ে জেলা পরিষদ দখল করলেও আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে যে তিনটি আসনে জয়লাভের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে দলকে কঠিন সমস্যায় পড়তে হবে তা স্বীকার করছেন কংগ্রেস নেতারাও।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাসের কথা, “পঞ্চায়েত ভোটের অঙ্কের হিসেব তো অস্বীকার করা যাবে না। জঙ্গিপুর ও মুর্শিদাবাদ আসন দুটি নিয়ে অবশ্যই চিন্তায় রয়েছে দল। তবে লোকসভা নির্বাচনের এখনও কিছুটা সময় হাতে রয়েছে। দলীয় কর্মীদের প্রথম থেকেই কাজে নামিয়ে দলকে আরও সুসংহত করার চেষ্টা হচ্ছে।”
পঞ্চায়েত ভোটের অঙ্কে কংগ্রেস সবচেয়ে সমস্যায় পড়বে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রে। পঞ্চায়েত ভোটের হিসেবে ওই লোকসভা এলাকায় কংগ্রেস পেয়েছে সাকুল্যে ৪ লক্ষ ৮ হাজার ভোট। অন্য দিকে বাম ভোট দাঁড়িয়েছে ৪ লক্ষ ৪০ হাজার ভোট। অর্থাৎ প্রায় ৩২ হাজার ভোটে পিছিয়ে রয়েছে কংগ্রেস গ্রামীণ এলাকায়। এই এলাকার মধ্যে রয়েছে দুটি পুরসভা। আজিমগঞ্জ-জিয়াগঞ্জ এবং মুর্শিদাবাদ। প্রথমটি বামেদের দখলে, দ্বিতীয়টি কংগ্রেসের। মুর্শিদাবাদ পুরসভায় কংগ্রেস গত পুর নির্বাচনে ৩৩ শতাংশ এবং বামেরা ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। জিয়াগঞ্জে বামেদের ভোট ছিল ৫০ শতাংশ, কংগ্রেসের ৪১ শতাংশ। তাই অঙ্কের হিসেব অনুযায়ী লোকসভা এলাকাগুলিতে অনেকটাই পিছিয়ে কংগ্রেস।
ওই দুই পুরসভায় ভোটারের সংখ্যা বড়জোর ৬০ হাজার যা ভোটের ফলাফলকে সে ভাবে প্রভাবিত করার সম্ভাবনা কম। জঙ্গিপুর লোকসভায় কংগ্রেস আড়াই হাজারে জিতে উপনির্বাচনে কোনও রকমে আসনটি বজায় রেখেছে। এ বারে লোকসভা এলাকায় পঞ্চায়েতের হিসেবে কংগ্রেস পেয়েছে ৩ লক্ষ ৪২ হাজার ভোট। অন্য দিকে বামেদের ভোট ৩ লক্ষ ৩৭ হাজার। অর্থাৎ ৫ হাজার ভোটে কংগ্রেস এগিয়ে থাকলেও এই লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যেই রয়েছে জঙ্গিপুর পুরসভা, যা তিন দশক ধরে বামেদের দখলে। গত পুরসভা নির্বাচনেও জঙ্গিপুর পুর এলাকায় বাম ভোট ছিল ৪৮ শতাংশের উপরে। যেখানে কংগ্রেস ভোট ৪২ শতাংশ। জঙ্গিপুর লোকসভা উপনির্বাচনে পুরসভা এলাকায় কংগ্রেসের এই ভোটও তলানিতে এসে ঠেকেছিল। স্বভাবতই জঙ্গিপুর নিয়ে চিন্তা বেড়েছে কংগ্রেসের।
বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরীর দুর্গে অবশ্য পঞ্চায়েত সে ভাবে কোনও প্রভাবই ফেলতে পারেনি। এ বারের পঞ্চায়েতে বহরমপুর লোকসভা এলাকায় কংগ্রেস পেয়েছে ৪ লক্ষ ৪৩ হাজার ভোট। সেখানে বাম ভোট ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার অর্থাৎ ৫৬ হাজার বাড়তি ভোট রয়েছে কংগ্রেসের। এর উপরে এই লোকসভা এলাকায় যে তিনটি পুরসভা রয়েছে কান্দি, বহরমপুর ও বেলডাঙাসবগুলিই কংগ্রেসের দুর্গ। ক্ষমতায় কংগ্রেসই। সে ক্ষেত্রে লোকসভা ভোট নিয়ে সেখানে অনেকটাই চিন্তামুক্ত কংগ্রেস। কংগ্রেসের এই চিন্তার কারণ যে অনেকাংশেই তৃণমূল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তৃণমূল এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে জঙ্গিপুরে ১ লক্ষ ৬৭ হাজার, মুর্শিদাবাদ এলাকায় ২ লক্ষ ৮ হাজার এবং বহরমপুর কেন্দ্রে ১ লক্ষ ৯৪ হাজার ভোট পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে জেলায় তাদের ভোটের অঙ্ক ৫ লক্ষ ৭০ হাজার। এখন আগামী লোকসভা নির্বাচনে ৩টি কেন্দ্রে প্রার্থী দিলে এই ভোট কিছুটা হলেও বাড়বে। অন্তত তৃণমূলের মন্ত্রী সুব্রত সাহা মনে করেন, “রাজ্য থেকে মুর্শিদাবাদ জেলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই প্রার্থী ঠিক করে পাঠাবেন। লোকসভায় তৃণমূলের ভোট নিঃন্দেহে অনেক বাড়বে।” মুর্শিদাবাদের কংগ্রেসের সাংসদ মান্নান হোসেন মনে করেন, “দুটি আসনে পিছিয়ে থাকলেও পঞ্চায়েত ও লোকসভা ভোট এক নয়। কংগ্রেস সাংগঠনিক শক্তিকে কাজে লাগিয়ে এই ঘাটতি পূরণ কতে পারবে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “পঞ্চায়েত ভোট দিয়ে লোকসভার ভোটের ফলাফলকে মেলানো ঠিক নয়। আমরা তা মেলাচ্ছিও না। তবে বলতে পারি এ বারে মুর্শিদাবাদ ও জঙ্গিপুর দুটি কেন্দ্রেই কঠিন লড়াই হবে। আমরা দুটি কেন্দ্র নিয়েই যথেষ্ট আশাবাদী।” |