পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে বুধবার তালা পড়ল পুড়শুড়া ব্লকের চিলাডাঙী গ্রাম পঞ্চায়েতের অফিসে। তালা দিলেন স্থানীয় তৃণমূলেরই একাংশ। দু’দিন আগেই পদত্যাগ করেছেন পুড়শুড়া ২ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান। ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদটি নিয়েও অশান্ত এলাকা। বোর্ড গঠনের পরেই পঞ্চায়েতের অচলাবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকার মানুষ। পুড়শুড়ার বিডিও সমর দত্ত বলেন, “বিষয়গুলি এলাকায় জানানো হয়েছে। স্থানীয় প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বিধায়কের সাহায্য চাওয়া হয়েছে।”
পুড়শুড়ার তৃণমূলের বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে। সমস্যা না মেটা অবধি পঞ্চায়েতের দলনেতা (নির্বাচিত সদস্য, যাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে দলনেতা বেছে দেয় রাজনৈতিক দল) পঞ্চায়েত পরিচালনা করবেন বলে বিডিওকে বলা হয়েছে।
ব্লক তৃণমূল ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, চিলাডাঙী পঞ্চায়েতে কাজলী সিং প্রধান ও হাসান আলি মল্লিক উপপ্রধান হবেন বলে ঠিক হয়েছিল। গত সোমবার বোর্ড গঠনের সময়ে প্রধানের পদটি নিয়ে কোনও আপত্তি না থাকলেও উপপ্রধান পদটিতে ভোটাভুটি হয়ে উপপ্রধান হন সৌমিত্র ঘড়া। এর পরেই দলের দু’পক্ষের মধ্যে মারপিট ও বোমাবাজি হয়। দু’পক্ষই অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ, এ দিন সকালে হাসান আলি মল্লিকের অনুগামীরা দলের সিদ্ধান্ত মানার দাবিতে পঞ্চায়েতে তালা মেরে দেন। পঞ্চায়েত কর্মীরা অফিস এলে তাঁদের বলে দেওয়া হয় স্থানীয় সমস্যা না মেটা অবধি তাঁরা যেন অফিস না আসেন। পঞ্চায়েত কর্মীরা ব্লক অফিসে গিয়ে হাজিরা দেন। ব্লক প্রশাসনের পঞ্চায়েত উন্নয়ন আধিকারিক মোহনলাল বর বলেন, “বিষয়টা জেলায় জানানো হয়েছে, বিধায়ককেও জানিয়েছি।”
বিধায়ক পারভেজ রহমান বলেন, “একাধিকবার বৈঠক করে দলীয় নেতা কর্মীদের কাছ থেকে প্রধান ও উপপ্রধানের নাম চাওয়া হয়েছিল। সেই মতই ঠিক হয়েছিল হাসান আলি মল্লিক উপপ্রধান হবেন। কিন্তু দলের একটা অংশ নির্দলদের সঙ্গে নিয়ে ভোটাভুটি করে তাঁকে এক ভোটে হারিয়ে দেয়। নির্বাচিত উপপ্রধান স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করতে চেযেছেন।”
পুড়শুড়া ২ পঞ্চায়েতে আবার তৃণমূল থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় প্রধান ও উপপ্রধান হবেন বাবলু বাগ এবং মারুফা বেগম। কিন্তু পরে সেখানেও ভোটাভুটি হয়। একটি করে ভোটে জিতে প্রধান ও উপপ্রধান হন পাঁচুগোপাল রায় ও মমতা আদক। অভিযোগ, ওই সোমবার বিকেলেই পাঁচুগোপালবাবু ও মমতাদেবীর বাড়িতে দলেরই একাংশ হামলা করে। বাড়ির আসবাবও ভাঙচুর করা হয়। সেই রাতেই দু’জন ব্লক অফিসে পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেন। মোহনলাল বর বলেন, “দু’জনেই পারিবারিক অসুবিধার কথা জানিয়ে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করছেন বলে জানিয়েছেন। জেলাশাসকের নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।” ভাঙামোড়া পঞ্চায়েতেও সিদ্ধান্ত হয়, প্রধান হবেন সুমিত্রা পাত্র। কিন্তু ভোটাভুটির পরে প্রধান নির্বাচিত হন রুমা সাঁতরা। এ নিয়ে ওই পঞ্চায়েত এলাকায় তৃণমূলের দুই গোষ্ঠী পরস্পরের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তৃণমূল নেতার অভিযোগ, “প্রধান বা উপপ্রধান পদ নিয়ে বিধায়কের চাপানো সিদ্ধান্ত মানুষের পছন্দ না হওয়াতেই পরে ভোট করে নির্বাচন হয়। এখন সন্ত্রাস করে তাঁদের পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হচ্ছে।” |