|
|
|
|
দাভলকর-হত্যার পরেই কুসংস্কার বিরোধী
অর্ডিন্যান্স আনছে মহারাষ্ট্র সংবাদসংস্থা • নয়াদিল্লি |
গত দশ বছর ধরে মহারাষ্ট্রে কুসংস্কার ও তুকতাক-বিরোধী আইন প্রণয়নের দাবিতে আন্দোলন চালাচ্ছিলেন নরেন্দ্র দাভলকর। কিন্তু সফল হননি। এ দিকে তাঁর হত্যার পর পরই কুসংস্কার এবং তুকতাক বিরোধী অর্ডিন্যান্স জারির সিদ্ধান্ত নিলেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণ। মন্ত্রিসভার বৈঠকে বিলটি নিয়ে সম্মতি জানানো হলেও আট বছর ধরে সেটি বিধানসভায় পাশ হওয়ার জন্য পড়ে ছিল। কিন্তু কোনও বারই বিধানসভার অধিবেশনে এই বিলের প্রসঙ্গই ওঠেনি। এই বিল নিয়ে টালবাহানার জন্য সম্প্রতি পৃথ্বীরাজ চহ্বাণকেও দায়ী করেছিলেন যুক্তিবাদী এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারী দাভলকর। গত কাল ভোরে পুণের ওঙ্কারেশ্বর সেতুর কাছে প্রাতর্ভ্রমণের সময়ে দু’জন অজ্ঞাতপরিচয় বন্দুকবাজ খুব সামনে থেকে গুলি ছোড়ে দাভলকরকে। ঘটনাস্থলেই মারা যান তিনি। এর পরেই তাঁর মৃত্যু নিয়ে রাজনীতি শুরু হয়ে যায়। মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীর হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে দাভলকরের হত্যাকাণ্ডের তুলনা করেন পৃথ্বীরাজ। বলেন, “ঠিক যে ভাবে মহাত্মা গাঁধীর মতাদর্শ পছন্দ না হওয়ায় তাঁকে খুন করেছিলেন নাথুরাম গডসে, সেই কারণেই খুন হলেন দাভলকর।” কেউ হত্যাকারীর খোঁজ দিতে পারলে তাঁকে ১০ লক্ষ টাকার পুরস্কার দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেছেন তিনি। দাভলকর হত্যার নিন্দা করেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। সিপিএমের তরফে বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি করা হয়েছে।
|
নরেন্দ্র দাভলকর |
এই ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেফতার করতে না পারলেও প্রত্যক্ষদর্শীদের বয়ান অনুযায়ী সন্দেহভাজন বছর পঁচিশের এক যুবকের স্কেচ প্রকাশ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের পর আজ দাভলকরের দেহ তুলে দেওয়া হয় তাঁর পরিবারের হাতে। সাতারায় তাঁর শেষকৃত্যের সময়ে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। দাভলকরের হত্যার প্রতিবাদে পথে নামেন মানুষ। পুণেতে আজ বন্ধ পালন হয়।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দাভলকরের হত্যার ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে যে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে তাতে ভয় পেয়ে গিয়েছেন পৃথ্বীরাজ। সামনের বছরই লোকসভা নির্বাচন। নিজের গদি বাঁচাতে তড়িঘড়ি কুসংস্কার ও তুকতাক-বিরোধী অর্ডিন্যান্স চালুর সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। ফলে এই বিল পাশে এক ধাপ এগিয়ে গেল রাজ্য। যদি এই বিল পাশ হয় তবে তা হবে দেশের মধ্যে প্রথম।
কুসংস্কার-বিরোধী বিল পাশ হলে রাজ্যের বিভিন্ন রক্ষণশীল ধর্মীয় সংগঠনের অসুবিধা হত বলে মনে করছেন অনেকে। আর সেই কারণেই দাভলকরের মুখ বন্ধ করা হল বলেই তাঁদের মত। এক ধর্মীয় সংগঠনের মুখপাত্র সুনীল ঘনাভাট পাল্টা দাবি করেছেন, “দাভলকরের মতের সঙ্গে আমাদের মতের অনেক বিরোধ ছিল। সে কারণে আমরা প্রকাশ্যে দাভলকরের সমালোচনাও করতাম। ওই বিলের বিরুদ্ধে আমরা। কিন্তু তার জন্য আমরাও পাল্টা প্রচার শুরু করেছিলাম। তাঁকে গত্যা করে আমাদের কোনও লাভ নেই।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সবাই জানে দাভলকরকে হত্যা করা হলে এই সব ধর্মীয় সংগঠনের দিকেই আঙুল তুলবে লোকে। কেউ কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশেও যদি তাঁকে হত্যা করে সে বিষয়ে তদন্ত হবে না। মূল অপরাধী লোকচক্ষুর আড়ালেই থেকে যাবে। আর এক পুলিশ আধিকারিক জানান, নাসিকে একটি প্রচার সভায় তাঁকে খুনের হুমকি দিয়ে ফোন আসছে বলে দাভলকর এক বার জানিয়েছিলেন। তাঁরা সব সম্ভাবনাই খতিয়ে দেখছেন।
|
পুরনো খবর: কুসংস্কারের বিরুদ্ধে লড়াই, গুলিতে হত |
|
|
|
|
|