শেষ পর্যন্ত অরুণাচলপ্রদেশে চিনের পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)-র অনুপ্রবেশের কথা স্বীকার করল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও সেনাবাহিনী। তবে সেনা সূত্রের দাবি, এটা নিতান্তই ভুলবশত ঘটে যাওয়া ঘটনা। একে আগ্রাসনের ঘটনা বলা ঠিক হবে না। কেন্দ্রীয় সূত্রের বক্তব্য, পিএলএ এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর মধ্যে ফ্ল্যাগ মিটিং-এর পর চিনা বাহিনী এলাকা ছেড়ে নিজ ভূখণ্ডে ফিরে গিয়েছে। বিদেশ মন্ত্রকও বিষয়টিকে তুচ্ছ ঘটনা হিসেবেই দেখছে। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র সৈয়দ আকবরউদ্দিনকে এ নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, “কূটনৈতিক শিষ্টাচার অনুযায়ী তুচ্ছ ঘটনা (নন ইভেন্ট) নিয়ে মন্তব্য করা হয় না। আমরা তা নিয়ে মাথাও ঘামাই না। সীমান্তে আমাদের সেনাবাহিনী রয়েছে। তারাই যা করার করেছে।”
বিরোধী বিজেপি যে ভাবে এই ঘটনাকে চিনা আগ্রাসন বলে আখ্যা দিয়েছে, তা মানতে নারাজ কেন্দ্রীয় সরকারি সূত্র। বরং সেনাবাহিনীর ৪ নম্বর কোরের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল এন এন জোশী বলেন, ওই এলাকায় চিনা আগ্রাসন নিয়ে সেনাবাহিনীর কাছে কোনও খবর নেই। অনেক সময় ম্যাকমাহন লাইনে স্থায়ী বেড়া না থাকায়, চিনা বাহিনী সীমানার কাছাকাছি বা পার হয়ে চলে আসে। একই ভাবে সীমানায় প্রহরারত ভারতীয় সেনাও কখনও কখনও চিনা ভূখণ্ডে ঢুকে পড়ে। ওরা ঢুকলে আমরা সতর্ক করি, আমরা ঢুকলে ওরা। স্থানীয় ভাবে ফ্ল্যাগ মিটিং করেই তা মিটিয়ে ফেলা হয়। এমন কোনও ঘটনাকে চিনা আগ্রাসন হিসাবে দেখানো ভিত্তিহীন। গ্রামবাসীদের সাক্ষ্যের উপরে ভিত্তি করে বিজেপি ও স্থানীয় একটি সংগঠন দাবি করেছে, গত এক সপ্তাহের মধ্যে অরুণাচলের আনজাও জেলায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা থেকে অন্তত ৬০ কিলোমিটার ভিতরে ঢুকে পড়েছে চিনা সেনা। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার, সেনাবাহিনী ও রাজ্য সরকারের তরফে সেই দাবি উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। |
ঘটনার সূত্রপাত গত ১১ অগস্ট। বিজেপির সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা অরুণাচলের প্রাক্তন সাংসদ তাপির গাও-এর দাবি, “আনজাও জেলার ছাগলা গাম সেক্টরে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার এ পারে চলে আসে চিনের সেনাবাহিনী। ওই সময় সেখানে ভারতীয় সেনা ছিল না। গ্রামবাসীরাই ঘটনাটি প্রথম দেখেন। পরে ১৩ থেকে ১৬ অগস্টের মধ্যে চিনা সেনা ম্যাকমাহন লাইন অতিক্রম করে ভারতীয় ভূখণ্ডের প্রায় ষাট কিলোমিটার ভিতরে চলে আসে।” প্রশাসনিক সূত্রে খবর, ওই এলাকায় কোনও বসতি নেই, এমন কী ভারতীয় সেনার কোনও স্থায়ী শিবিরও নেই। শেষ প্রশাসনিক কেন্দ্র ও বসতি বলতে ছাগলা গাম। ওই সেক্টরে ১০৮ কিলোমিটার সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে ভারত-তিব্বত সীমান্ত পুলিশ (আইটিবিপি)। সেনাবাহিনীর স্থায়ী ঘাঁটি রয়েছে ওয়ালং-এ। ছাগলা গাম থেকে ম্যাকমাহন লাইন পর্যন্ত ভারতের ৯টি অস্থায়ী শিবির আছে। যার চার নম্বর শিবির অবধি চিনা পিএলএ বাহিনী এসে গিয়েছে বলে তাপিরের দাবি। তিনি জানান, স্থানীয় কয়েক জন গ্রামবাসী পশুচারণে গিয়ে চিনা তাঁবু ও সাঁজোয়া গাড়ি দেখে এসেছেন। তাপিরের পাশাপাশি, ‘ইন্ডিজেনাস ফেথ অ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি অফ অরুণাচল প্রদেশ’ নামে একটি সংগঠনও দাবি করেছে, স্থানীয় গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ চিনা সেনা প্লাম প্লাম-এলাকার ৪ নম্বর শিবিরে ঘাঁটি গেড়েছে।
তবে ভারতীয় ভূখণ্ডের ৬০ কিলোমিটার ভিতরে চিনা সেনার ঢুকে আসার কথা খারিজ করে দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানিয়েছেন, লং রেঞ্জ পেট্রলিং-এ বেরিয়ে সেনাবাহিনী সেনা তাদের একটি অস্থায়ী শিবিরে চিনা সেনাদের দেখতে পায়। তাদের সরে যেতে বলা হয়। প্রথমে তারা আপত্তি জানায়। পরে ভুল বুঝতে পেরে তারা সীমান্তের ও পারে চলে যায়।
|