পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে করিডর করায় ক্ষোভ
চিনের কাজকর্ম নিয়ে কড়া হচ্ছে ভারত
ঘাড়ের কাছে ড্রাগনের নিঃশ্বাস ঝেড়ে ফেলে এ বার চিনের উপর পাল্টা চাপ দেওয়ার কৌশল
নিল নয়াদিল্লি।
ইসলামাবাদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে পাক অধিকৃত কাশ্মীরকে করিডর হিসেবে ব্যবহার করছে বেজিং। অথচ ভারতের ঘোষিত অবস্থান (ওয়ান ইন্ডিয়া পলিসি) অনুযায়ী পাক অধিকৃত কাশ্মীর ভারতের অঙ্গ। সেই অবস্থানের বিরোধিতা করার জন্য চিনকে এ বার প্রতিবাদপত্র (ডিমার্শ) দিতে চলেছে ভারত। সরকারি সূত্রের খবর, আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই তা দেওয়া হবে।
ভারত ও চিনের মধ্যে সম্পর্ক এখন যে মোড়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, তাতে এই ঘটনাকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। গত আড়াই মাসে একের পর এক নাটকীয় পটপরিবর্তন ঘটছে দু’দেশের সম্পর্কে। ভারতীয় ভূখণ্ডের দৌলত বেগ সেক্টরে চিনা সেনা পাঠিয়ে নয়াদিল্লিকে টানা একুশ দিন চূড়ান্ত অস্বস্তিতে রেখেছিল বেজিং। দীর্ঘমেয়াদি দৌত্যের ফলে চিনা সেনা ফিরে গেলেও, গত ১৭ জুন ফের তারা ভারতীয় সীমান্তে হানা দিয়েছে। দক্ষিণ পূর্ব লাদাখে চুমার পোস্ট এলাকায় প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) বরাবর সীমান্ত টপকে আসে পিপলস লিবারেশন আর্মি (পিএলএ)। ভারতের নজরদারি ক্যামেরা খুলে নিয়ে এলাকাটি তছনছ করে। পরে ৩ জুলাই ভারতীয় সেনার সঙ্গে ফ্ল্যাগ মিটিং-এর পর ক্যামেরাটি ফেরত পায় ভারত।
ওই ঘটনা নিয়ে ভারত যে ষথেষ্ট উদ্বিগ্ন, ইতিমধ্যেই তা চিনা নেতৃত্বকে জানানো হয়েছে। তবে নয়াদিল্লি এখন মনে করছে, কৌশলে কিছু বদল না আনলে চিনের ক্ষেত্রে কাজের কাজটি হবে না। সাউথ ব্লক লক্ষ্য করছে যে, চিনের পিএলএ-র গুরুত্ব সে দেশের রাজনৈতিক নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রেও ক্রমশ বাড়ছে। আর তাই পিএলএ-র সঙ্গে আলোচনার একটি নতুন রাস্তা খুলছেন ভারতীয় কূটনীতিকরা। সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে ভারতের সংশ্লিষ্ট কূটনৈতিক কর্তাদের সঙ্গে চিনা সামরিক নেতৃত্বের একাধিক বার আলোচনাও হয়েছে সম্প্রতি। জানা গিয়েছে যে তাইওয়ান এবং জাপানের সঙ্গে ভারতের ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতার দিকে কড়া নজর রাখছে পিএলএ। ভিয়েতনামের বিদেশমন্ত্রীর চলতি ভারত সফরকেও তারা গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। যদিও এ সবে আমল না দিয়ে ভারত অবিলম্বে পাকিস্তানকে ডিমার্শ পাঠাতে চাইছে। কারণ ভারতকে চাপে রাখার কৌশল হিসেবে বরাবরই ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখে বেজিং। এখন আবার পাকিস্তানের নতুন নেতৃত্বের সঙ্গে তাদের সখ্য বাড়ছে। সম্প্রতি পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের চিন সফর থেকে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে। বিদেশ মন্ত্রক এটাকে মোটেই ভাল চোখে দেখছে না। কারণ, ভারতীয় গোয়েন্দাদের কাছে এমন খবরও যে পাক অধিকৃত কাশ্মীর দিয়ে পাকিস্তানে অস্ত্রও পাঠাচ্ছে চিন।
বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, ডিমার্শ পাঠানোর পদক্ষেপ করায় চিনের সঙ্গে নরম-গরম কূটনীতির সাবেকি পথটির সঙ্গে সঙ্গতি রেখেই। গত মে মাসে চিনের নতুন প্রধানমন্ত্রী লি খ্যছিয়াং তাঁর প্রথম বিদেশ সফরে ভারতে এসে নয়াদিল্লির সঙ্গে কৌশলগত বোঝাপড়া বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারসাম্যের অভাব দূর করা থেকে শুরু করে সীমান্তে অশান্তি নিয়ে ভারতের শর্ত অনুযায়ী বিশেষ প্রতিনিধি স্তরে আলোচনার প্রশ্নে ঐকমত্য হয়েছে দু’দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে। সেই মোতাবেক বৈঠকও হয়ে গিয়েছে এক দফা। সীমান্তের পাশাপাশি সমান গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ককেও। কিন্তু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে ইতিবাচক আবহাওয়া তৈরির এই সব চেষ্টা সত্ত্বেও লাদাখে সেনা পাঠানো এবং ২১ দিন ধরে তাদের বসিয়ে রাখার কোনও সদুত্তর কিন্তু এখন পাওয়া যায়নি চিনের কাছ থেকে। আলোচনায় এখনও পর্যন্ত যেটা বোঝা গিয়েছে, তা হল বেজিং-এর শীর্ষ নেতৃত্ব ওই কৌশল তৈরি করেননি। আঞ্চলিক সেনা কম্যান্ডার এই নক্সা তৈরি করেন। তিনিই এ ব্যাপারে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন সেনাদের।
সীমান্ত নিয়ে পিএলএ-র অন্যতম আপত্তি পূর্ব লাদাখের চুমার ভারতীয় চেকপোস্টে একটি নজরদারি ক্যামেরা রাখা নিয়ে। চিনের অভিযোগ, ওই ক্যামেরা পাহাড়ের উপর এমন ভাবে রাখা হয়েছে, যাতে ভারত এ পার থেকেই চিনের সীমান্ত এলাকার সমস্ত কার্যকলাপ দেখতে পায়। গত ১৭ জুন এসে এই এলাকাতেই হামলা করে পিএলএ। সীমান্ত-বিরোধের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত আবারও হামলার আশঙ্কা রয়েছে বলেই মনে করছে বিদেশ মন্ত্রক। তাই সতর্ক আলোচনা ও প্রতিবাদপত্র পাঠানোর মতো কড়া অবস্থান নেওয়া দু’টিই পাশাপাশি চালাতে চাইছে মনমোহন সরকার।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.