মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা(এনএসএ)-র গোপন নজরদারি কাগজে ফাঁস করে দিয়েছিলেন যে সাংবাদিক, ম্যারাথন জেরার মুখে পড়লেন তাঁর সঙ্গী। রবিবার বার্লিন থেকে ব্রাজিল যাওয়ার পথে হিথরো বিমানবন্দরে সাংবাদিক গ্রিনওয়াল্ডের লিভ-ইন সঙ্গী ডেভিড মাইকেল মিরান্ডাকে জঙ্গি দমন আইনে আটকায় ব্রিটিশ পুলিশ। সকাল আটটা থেকে শুরু হয়ে জেরা পর্ব চলে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত। পরে অবশ্য ছেড়ে দেওয়া হয় তাঁকে।
ব্রিটেনের জঙ্গি দমন আইনের ৭ নম্বর তালিকা অনুযায়ী, সন্দেহভাজন যে কাউকেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সর্বোচ্চ ন’ঘণ্টা আটকে রাখতে পারেন গোয়েন্দারা। কিন্তু ৯৭% ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই শেষ হয়ে যায় জেরা। মিরান্ডা অবশ্য ছাড়া পাননি পুরো ৯ ঘণ্টার আগে। জেরার সময় তাঁর মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, ডিভিডিও নিজেদের জিম্মায় রেখে দেয় পুলিশ। এমনকী, মেলেনি কোনও আইনজীবীর সাহায্যও। আইনের নামে হেনস্থা করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ইতিমধ্যেই। |
জেরা শেষে সঙ্গী মাইকেল মিরান্ডাকে (ডান দিকে) নিয়ে যাচ্ছেন সাংবাদিক গ্রিনওয়াল্ড। ছবি: রয়টার্স। |
গ্রিনওয়াল্ডের অভিযোগ, তাঁর সঙ্গীর বিরুদ্ধে জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশের কোনও প্রমাণ ছিল না। তা ছাড়া, বিমানবন্দরে যে অফিসাররা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, তাঁদের নজর ছিল এনএসএ-র কাগজের উপর। “স্নোডেনকে সাহায্য করতে আমরা কী পদক্ষেপ করতে চলেছি, তা বোঝার জন্যই যে মিরান্ডাকে আটকানো হয়েছিল, সেটা স্পষ্ট” জানিয়েছেন গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড।
দীর্ঘ জেরা পর্ব সামনে আসার পর এ নিয়ে পুলিশের কাছে জবাব চেয়েছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট কমিটির চেয়ারম্যান কিথ ভাজ। ভারতীয় বংশোদ্ভূত এই লেবার এমপি’র কথায়, “জটিল গল্পের এটা অভূতপূর্ব মোচড় বলা যায়।” তিনি বলেন, যাঁকে আটকানো হয়েছে তিনি যে গ্রিনওয়াল্ডের সঙ্গী, তা জানতেন অফিসাররা। জঙ্গি দমন আইনে এমন এক জনকে আটক করা হল জঙ্গিদের সঙ্গে যাঁর কখনওই নাম জড়ায়নি। ফলে শুধু সাংবাদিকরা নন, তাঁদের সঙ্গীদের উপরও যে রীতিমতো নজর রাখা হচ্ছে, হেনস্থার শিকার যে তাঁরাও হবেন, এই বার্তাই দেওয়া হল রবিবার। সন্ত্রাস দমন আইনে কাউকে আটকানো হলে তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা আদৌ আছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কিথ।
এনএসএর প্রাক্তন গুপ্তচর এডওয়ার্ড স্নোডেনের জোগান দেওয়া নথির উপর ভিত্তি করে এক ব্রিটিশ দৈনিকে একাধিক খবর লিখছিলেন গ্রিনওয়াল্ড। মার্কিন চিত্র-পরিচালক লরা পয়ত্রাসের সঙ্গে স্নোডেনের বিষয়ে আলোচনা করতেই কিছু দিন আগে বার্লিন যান গ্লেনের সঙ্গী। আলোচনার পর ফিরছিলেন তাঁর দেশ ব্রাজিলে। পথে এই ঘটনা। দেশের নাগরিককে হেনস্থা করায় চটেছে ব্রাজিলের বিদেশ মন্ত্রকও। বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, অকারণে মাইকেল মিরান্ডাকে যে ভাবে আটকে করে রাখা হয়েছিল, তা নিয়ে বিদেশ মন্ত্রক উদ্বিগ্ন। যদিও এ নিয়ে মুখ খুলতে চায়নি ব্রিটিশ পুলিশ। মাইকেল মিরান্ডাকে বিমানবন্দরে আটকানো হয়েছিল, তবে পরে ছাড়াও পেয়ে গিয়েছেন তিনি শুধু এটুকুই জানান স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের মুখপাত্র।
তবে খবর জোগাড়ে যতই বাধা আসুক না কেন, রণে ভঙ্গ দিচ্ছেন না গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড। |
পুরনো খবর: স্নোডেনের দাবি |