কাজ সেরে ফিরছিলেন ওঁরা। দু’টো মিনিবাসে মিশরের পুলিশবাহিনীর একটি দল। জঙ্গিরা পর পর গুলি চালিয়ে হত্যা করল তাঁদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন পুলিশকে। জখম হন আরও দু’জন। প্রত্যেকের পরনে ছিল সাধারণ পোশাক। মিশরের উত্তরে সিনাইয়ের কাছে এই ঘটনাটি ঘটেছে।
সন্দেহভাজন জঙ্গিরা হঠাৎ পুলিশদের বাস জোর করে আটকে দেয়। পুলিশদের নামিয়ে দেওয়া হয় বাস থেকে। তার পরে পিছমোড়া করে বেঁধে শুইয়ে দেওয়া হয় রাস্তায়। পরমুহূর্তে শুরু হয় গুলিবৃষ্টি। সেখানেই প্রাণ হারান ২৫ জন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নিরাপত্তা অফিসার ঘটনা সম্পর্কে সব তথ্য দিয়ে জানান, প্রথমে ঘটনাটি নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছিল। জানা গিয়েছিল, জঙ্গিরা পুলিশকর্মীদের মিনিবাস লক্ষ্য করে রকেট থেকে গ্রেনেড ছুড়ে ২৫ জনকে মেরেছে। পরে অবশ্য জানা যায় গুলি করে মারা হয়েছে তাঁদের। |
মিশরে সিনাইয়ের রাস্তায় পড়ে পুলিশকর্মীদের দেহ। ছবি: রয়টার্স। |
পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসে কারাবন্দি ৩৬ জন মুরসি সমর্থকের মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পরেই এই ঘটনা ঘটেছে। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড এতে জড়িত নয় বলেই খবর মিলেছে। তাদের দাবি, তারা যে কোনও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এক দিকে ২৫ জন পুলিশকর্মীর মৃত্যু আর অন্য দিকে ৩৬ বন্দির প্রাণহানি এই ঘটনায় ফের কিছুটা চাপে মিশরের অন্তর্বর্তী সরকার। তারই মধ্যে এ দিন খবর মিলেছে, একটি দুর্নীতি মামলার রায়ে মুক্তি পেতে পারেন ক্ষমতাচ্যুত একনায়ক শাসক হোসনি মুবারক। দেশের এই পরিস্থিতিতে যে খবর আরও উত্তাপ বাড়িয়ে তুলবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। ওই মামলায় দু’বছর কারাবাসের পরে ৮৫ বছরের মুবারককে আর আটকে রাখা যাবে না বলে জানিয়েছে মিশরের কোর্ট। তবে ২৫ অগস্ট আর একটি মামলায় তাঁর পুনর্বিচার হওয়ার কথা। সে ক্ষেত্রে তাঁর ভাগ্যে কী অপেক্ষা করছে, তা জানা যাবে কয়েক দিন পরেই।
মুবারকের পতনের পর থেকেই সিনাই অঞ্চলে সশস্ত্র জঙ্গিদের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। আর এ বছর জুলাইয়ে মুরসিকে সরানোর পর থেকে হামাস শাসিত গাজা স্ট্রিপ এবং ইজরায়েলের মাঝামাঝি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় থাকা এই অঞ্চলটিতে প্রায় রোজই কোনও না কোনও হামলার ঘটনা ঘটছে। যে কারণে এই অঞ্চলে জঙ্গিদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশ এবং সেনা যৌথ ভাবে সক্রিয়। সম্ভবত সেই জন্যই পুলিশদের নৃশংস ভাবে এ দিন হত্যা করেছে জঙ্গিরা। পাচার আর অন্যান্য অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত এখানকার জঙ্গি এবং উপজাতিভুক্ত মানুষ। ইজরায়েলে মাঝে মাঝেই এই জঙ্গিরা রকেট হামলা চালায়। ইজরায়েলের এক অফিসারের দাবি, সিনাই উপদ্বীপের বিশেষ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে মিশরের সেনা সমর্থিত সরকার চায় ইউরোপ এবং আমেরিকা তাদের সমর্থন করুক।
বুধবার থেকে চলতে থাকা হিংসা আর হত্যার জেরে মিশরে মৃতের সংখ্যা এ বার হাজার ছুঁয়েছে। কায়রোর কেন্দ্রে রামসেস স্কোয়ারে বিক্ষোভ দেখানোয় গ্রেফতার হয় অসংখ্য মুরসি সমর্থক। এই রকম ছ’শো বন্দিকে নিয়ে গত কাল ট্রাকের কনভয় যাচ্ছিল মিশরের উত্তরে আবু জাবাল কারাগারের দিকে। নিরাপত্তা বাহিনীর দাবি, একটি ট্রাকে হঠাৎই মারামারি শুরু করে দেয় বন্দিরা। সেই সুযোগে এক জন পুলিশ অফিসারকে ট্রাকের মধ্যেই আটক করে তারা। তার পর শুরু হয় বেধড়ক মারধর। ওই অফিসারকে উদ্ধার করতে ট্রাকের মধ্যেই কাঁদানে গ্যাস ছোড়া হয়। সেই গ্যাসেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে ৩৬ জনের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনী।
কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনাকে ভাল চোখে দেখছে না মুসলিম ব্রাদারহুড। তাদের মতে, এটা ঠান্ডা মাথায় করা খুন ছাড়া আর কিছুই নয়। সামরিক অভ্যুত্থান বিরোধী জোটের দাবি, ‘৩৬ জন বিক্ষোভকারীকে পরিকল্পিত ভাবে হত্যা করা হয়েছে। ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্ত হওয়া দরকার। সেনার বিরোধিতা করলেই মরতে হচ্ছে। এই হত্যার দায় নিতে হবে সেনাবাহিনীর প্রধান আব্দেল ফাতা আল সিসিকে।’
মিশরের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার বিষয় পুনর্বিবেচনা করতে আজ জরুরি বৈঠক করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আমেরিকা অথবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাশে না থাকলেও এখনও মিশরের বড় ভরসা তেল-সমৃদ্ধ দেশগুলি। পারস্য উপসাগরীয় এলাকার বিশেষত, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরশাহি এ দেশের নতুন সরকারকে প্রচুর অর্থ সাহায্য করেছে। মিশরের প্রতিকূল অবস্থাতেও তারা পাশে আছে বলে জানিয়েছে।
|