ভাঙড়ে কর্মীদের হাতেই ঘেরাও আরাবুল
নিজের খাসতালুকে তাঁর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও তাঁর দলবলের বিক্ষোভ-হামলা-ঘেরাওয়ের মধ্যে পড়তে হল ভাঙড়ের তৃণমূল নেতা আরাবুল ইসলামকে। কারণ, একটি পঞ্চায়েতের প্রধান বাছাই। গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন নিয়ে রবিবারেও রাজ্যের নানা প্রান্তে গোলমাল হয়েছে। কিন্তু ভাঙড়-২ ব্লকের ব্যেঁওতা-২ পঞ্চায়েতের জন্য দলীয় ভাবে প্রধান বাছাইকে ঘিরে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এতটাই প্রবল হয়ে ওঠে যে হামলা-বিক্ষোভের মধ্যে পড়ে আরাবুল ও তাঁর অনুগামীদের অসহায় অবস্থায় দু’ঘণ্টা আটকে থাকতে হয় পঞ্চায়েত অফিসেই। তাঁদের সামনেই পঞ্চায়েত অফিস চত্বরে ভাঙচুর চলে। বোমাবাজি হয়। আরাবুলের গাড়ি-সহ পাঁচটি গাড়িতে ভাঙচুর চালানো হয়। পুলিশ গিয়ে আরাবুলদের উদ্ধার করে।
আক্রান্ত হওয়া আরাবুলের সেই গাড়ি। ছবি: সামসুল হুদা।
গোটা ঘটনার জন্য তাঁর এক সময়ের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জুলফিকার মোল্লা ও তাঁর দলবলকেই দায়ী করেছেন আরাবুল। তৃণমূলের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, জুলফিকার মাস দুয়েক আগেও আরাবুলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। আগের দফায় ওই পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন জুলফিকারের স্ত্রী মমতাজ বিবি। কিন্তু এ বারে তাঁকে প্রার্থী করা নিয়ে জুলফিকারের সঙ্গে আরাবুলের বিরোধ বাধে। তা সত্ত্বেও প্রার্থী হয়ে জিতে যান মমতাজ। এ বারেও তাঁকে প্রধান করার দাবি তুলেছিলেন জুলফিকার।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আজ, সোমবার ওই পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনেই জিতেছেন তৃণমূল প্রার্থীরা। রবিবার দুপুরে দলীয় ভাবে প্রধান বাছাই করার জন্য পঞ্চায়েত অফিসে আরাবুল, জুলফিকার এবং স্থানীয় তৃণমূল নেতা ওহিদুল ইসলাম, নান্নু হোসেনের উপস্থিতিতে প্রার্থীরা হাজির হন। সাত জন প্রধান হিসেবে হামিদা বিবি নামে এক প্রার্থীর পক্ষে মত দেন। বাকি ছ’জন মমতাজ বিবির পক্ষ নেন। এর পরেই আরাবুলের সঙ্গে জুলফিকারের বচসা হয়। জুলফিকাররা পঞ্চায়েত অফিস থেকে বেরিয়ে যান।
এর কিছু ক্ষণের মধ্যেই গোলমাল বাধে। জনা চল্লিশ যুবক ওই পঞ্চায়েত অফিস চত্বরে চড়াও হয়। ঘেরাওয়ের মধ্যে আরাবুলের নামে কটূক্তিও চলে। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই অবশ্য হামলাকারীরা পালায়। আরাবুল বলেন, “দুর্নীতির জন্য অনেকেই আর মমতাজকে প্রধান হিসেবে চাইছেন না। সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যেরা অন্য জনকে প্রধান হিসেবে চাওয়ায় তা মানতে না পেরে জুলফিকারের মদতে ওর লোকজন হামলা চালিয়েছে। দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে জুলফিকার ও তাঁর স্ত্রীকে দল থেকে বহিষ্কারের আবেদন জানাব।”
জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান শোভন চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ওই গোলমালের ঘটনায় দলের কারও জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর বিরুদ্ধে দলগত ভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে, একাধিকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও গোটা ঘটনা নিয়ে জুলফিকার বা তাঁর স্ত্রীর বক্তব্য জানা যায়নি। দু’জনেরই মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) কঙ্করপ্রসাদ বারুই জানিয়েছেন, রাত পর্যন্ত ঘটনা নিয়ে থানায় কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি। হামলাকারীদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
অন্য দিকে, উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে দুর্গাপুর ও কাপাসিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠনের আগে বামফ্রন্টের সাত জন নির্বাচিত সদস্যকে অপহরণ করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। রবিবার সকালে এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে সিপিএম ও তৃণমূল সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে ৩০ জন জখম হন। বোমাবাজিও হয়। অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূল গোলমালের জন্য সিপিএমের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব’কে দায়ী করেছে।
অপহৃতদের উদ্ধার, বোর্ড গঠন স্থগিত ও অভিযুক্ত তৃণমূল সমর্থকদের গ্রেফতারের দাবিতে সিপিএম সমর্থকেরা প্রায় চার ঘণ্টা দুর্গাপুর এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক ও বেলা ১২টা থেকে দু’ঘণ্টা ইটাহার-চাঁচল রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন। ইটাহার-চাঁচল রাজ্য সড়কে সিপিএম সমর্থকেরা পুলিশের একটি জিপে ভাঙচুর চালিয়ে পুলিশকর্মীদের লক্ষ করে ইট ছোড়েন বলেও অভিযোগ। তবে, বোর্ড গঠন স্থগিত হয়নি।
জেলা এসপি অখিলেশ চতুর্বেদী বলেন, ‘সিপিএমের তরফে নির্বাচিত পঞ্চায়েত সদস্যদের অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তবে যাঁরা অপহৃত হয়েছেন বলে দাবি করা হচ্ছে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের পর তাঁরা সকলেই এলাকায় ফিরে এসেছেন। বিষয়টি দেখা হচ্ছে।”
গোলমাল হয় বীরভূমের ময়ূরেশ্বরেও। ঝিকড্ডা পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন প্রক্রিয়ায় সামিল হতে যাওয়ার সময়ে বামফ্রন্টের জয়ী প্রার্থীদের লক্ষ করে বোমা ছুড়ে তাঁদের বাধা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বোমায় বীরভূমের প্রাক্তন সভাধিপতি ধীরেন লেট-সহ দলের পাঁচ জন জখম হন বলে সিপিএমের দাবি। বোমা ছোড়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল দাবি করেছে, হার নিশ্চিত জেনেই বামেরা ভোটাভুটিতে যোগ দেয়নি। তৃণমূলই বোর্ড গড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.