বদল জীবনযাত্রায়
ভিন রাজ্যের টাকায় হাল ফিরছে ডোমকলের গ্রামে
গালে পান। হাতে পদ্মার জোড়া ইলিশ। খানাখন্দে ভরপুর মেঠো রাস্তা ধরে টানা পায়ে বাড়ির পথে হাঁটছিলেন রহিম চাচা। রহিমুদ্দিন শেখ। মোড়ের মাথায় আসতেই রাস্তার ধারের চায়ের দোকানের মাচায় বসা জটলার সকলের চোখ চাচার হাতের দিকে। মাচা থেকে কামাল হাসান নামের এক যুবক হাঁক ছাড়লেন, “ও চাচা জোড়া ইলিশ কী হবে?” পান চিবোতে চিবোতে এক গাল হেসে চাচা বললেন, “কেরল থেকে ছোট ছেলেটা বাড়ি ফিরেছে। ওর জন্যই নিয়ে যাচ্ছি।” শুরু হল গুনগুনানি। ফিসফিস করে কে যেন বলে উঠলেন, ছেলেটা মনে হচ্ছে এ বার ভাল টাকা কামিয়েছে। এক সময় নুন আনতে পান্তা ফুরতো রহিমুদ্দিন শেখের। এখন দিন বদলেছে তাঁর।
রহিম চাচা কোনও ব্যতিক্রমী চরিত্র নন। মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক মহকুমা ডোমকলের প্রায় সব পরিবার থেকেই এখন অনটন উধাও হয়ে গিয়েছে। সৌজন্যে, বাড়ির কর্মক্ষমদের ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়া। পড়শি রাজ্যের কাঁচা টাকায় পিছিয়ে পড়া ডোমকলের আর্থ-সামাজিক অবস্থা গেছে বদলে। সীমান্তের গ্রামগুলিতে মাটি বা পাটকাটির বেড়ার ঘর আর তেমন চোখে পড়ে না। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িই ইটের গাঁথনি। টিনের ছাউনি বা টালির চালের বদলে ছাদ বানিয়েছেন পিছিয়ে পড়া মানুষ। ভিন রাজ্যে নির্মাণকর্মী হিসেবে পাড়ি দেওয়া মজুরদের আর্থিক অবস্থার পাশাপাশি বদলেছে সামাজিক জীবনও। খেটে খাওয়া বাড়ির ছেলেমেয়েরাও এখন গ্রামের প্রাথমিক স্কুলমুখো হওয়ার পরিবর্তে গাড়িতে চেপে যাচ্ছে বেসরকারি স্কুলে। লোকজনের পোশাকেও জেল্লা বেড়েছে আগের থেকে। সবার হাতে নামী কোম্পানির মোবাইল সেট। ঘরে শোভা পাচ্ছে রঙিন টেলিভিশন। ছাদের উপর ডিস অ্যন্টেনাও চোখে পড়ে কোনও কোনও বাড়িতে। ধর্মীয় অনুষ্ঠানেও লেগেছে জাঁকজমকের ছোঁয়া। দিন কয়েক আগে হয়ে গেল ঈদ-উল ফিতর। কুপিলা গ্রামের ঈদগাহ সেজেছিল আলোকসজ্জায়। গ্রামের মাতব্বরদের বক্তব্য, আগে ঈদগাহ সাজানোর চাঁদা উঠত মেরেকেটে হাজার ছয়েক টাকা। এ বছর প্রায় দ্বিগুণ চাঁদা উঠেছে। হঠাৎ করে গ্রামবাসীরা কেন ঈদগাহ সাজাতে হাত উপুর করে চাঁদা দিতে গেলেন? উত্তর দিলেন ঈদ কমিটির এক কর্তা। তিনি বললেন, “গ্রামের মানুষের হাল ফিরেছে। গ্রামের ছেলেরা এখন ভিন রাজ্যে কাজে যাচ্ছেন। মাস গেলে মোটা টাকা কামাচ্ছেন। তাই তাঁরা এ বছর চাঁদাও দিয়েছেন বেশি করে।” এ বছর ঈদে সীমান্তের বাজারে কেনাকাটাও হয়েছিল যথেষ্ট। রহস্য একটাই। ভিন রাজ্যের টাকায় শ্রী ফিরেছে গ্রামের।
ডোমকলের মানুষ এখন আর হাপিত্যেশ করে তাকিয়ে থাকে না পঞ্চায়েতের দেওয়া একশো দিনের কাজের দিকে। বরং তাঁরা বিভিন্ন কাজ নিয়ে পাড়ি জমান কেরল, মুম্বই, পুনে ও রাজধানী দিল্লিতে। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের দু’বারের জয়ী গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসের বাবলু মণ্ডল বলেন, “গ্রামের মানুষ এখন আর একশো দিনের কাজের উপর নির্ভরশীল নন। তাঁরা কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন রাজ্যের বাইরে। ভিন রাজ্যে কোনও শ্রমিক অনায়াসেই দিনে ৪০০-৬০০ টাকা উপার্জন করতে পারেন।” প্রশাসনও মানছে, কাজের সন্ধানে বাইরে যাওয়া পরিযায়ী মানুষদের অর্জিত অর্থে পাল্টে যাচ্ছে গাঁ-গঞ্জের আর্থ-সামাজিক জীবন। ডোমকলের মহকুমা শাসক প্রশান্ত অধিকারী বলেন, “বেশি টাকা অর্জনের জন্যই ঘর ছেড়ে বিদেশ বিঁভুইয়ে যান গ্রামের মানুষ। স্বভাবতই তাঁর বাড়ি ফেরেন থোক টাকা সঙ্গে নিয়ে। সেই টাকাতেই পাল্টে যাচ্ছে গ্রামীণ জনজীবন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.