তরুণীকে অশালীন এসএমএস,
হুমকি দেওয়ার অভিযোগ পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে
বিবাহবিচ্ছেদের মামলার সূত্রে মুর্শিদাবাদের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মৃণাল মজুমদারের সঙ্গে গত বছর পরিচয় হয়েছিল আজিমগঞ্জের বাসিন্দা এক তরুণীর। সেই পুলিশকর্তার বিরুদ্ধেই অশালীন এসএমএস পাঠানো এবং হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুললেন ওই তরুণী। মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য পুলিশের ডিজি থেকে শুরু করে ডিআইজি (মুর্শিদাবাদ রেঞ্জ) এবং রাজ্য মহিলা কমিশনে ডাকযোগে লিখিত অভিযোগ করেছেন বিবাহ-বিচ্ছিন্না ওই তরুণী। শুধু তাই নয়, তাঁকে চাপে ফেলার জন্য তাঁর বন্ধুকে গাড়ি চুরির মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে বলেও তরুণীর দাবি।
রবিবার বহরমপুরে পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ জমা দেন ওই তরুণী। পুলিশ সুপার বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।” অতিরিক্ত পুলিশ সুপার অবশ্য সমস্ত
মৃণাল মজুমদার।
—নিজস্ব চিত্র
অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। রাজ্য পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট বিএসএনএল মোবাইল নম্বর থেকে ওই তরুণীকে কিছু অশালীন এসএমএস করা হয়েছে। ওই নম্বরটি কার, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ওই তরুণী বর্তমানে কলকাতার মুকুন্দপুরে থাকেন। তিনি জানান, বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে সাহায্য চেয়ে ২০১২ সালে তিনি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালবাগ ও মুর্শিদাবাদ) মৃণাল মজুমদারের দারস্থ হয়েছিলেন। তরুণীর অভিযোগ, “মৃণাল মজুমদার ফোনে আমাকে কুপ্রস্তাব দেন। এমনকী, আমার প্রেমে নিজের হাত কেটেছেন বলে দাবি করে ব্যান্ডেজ বাঁধা হাতের ছবি এমএমএস করেন। ঘুমের ওষুধ খাওয়ার কথাও বলেন। ওই পুলিশ কর্তা কখনও রাত ২টোয়, কখনও ভোর ৪টেয় মেসেজ করতেন।” সরকারি যে আবাসনে মৃণালবাবু থাকেন, সেটির ল্যান্ডলাইন থেকেও রাতে ফোন করে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে ওই তরুণীর অভিযোগ।
এ দিন পুলিশ সুপারের অফিসের বাইরে বেরিয়ে ওই তরুণী বলেন, “প্রস্তাবে সাড়া না দিলে আমাকে ও আমার বন্ধুদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকিও দেন। এর পরেই আমার প্রাক্তন স্বামীর গাড়ি চুরির অভিযোগে আমার বন্ধু শান্তনু মুর্মুকে গ্রেফতার করা হয়।” ওই তরুণী এ দিন তাঁর মোবাইলে আসা অশালীন এসএমএস-ও দেখান সাংবাদিকদের। সেগুলি চলতি বছরের ১৩ জুন থেকে ২১ জুনের মধ্যে পাঠানো হয়েছিল। এত দিন অভিযোগ করেননি কেন? ওই তরুণীর বক্তব্য, “কলকাতায় একা থাকি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস পাইনি।”
মৃণালবাবু অবশ্য দাবি করেছেন, “বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা করার সময় ওই তরুণী সাহায্যের জন্য এসেছিলেন। মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে কখনও সখনও ওই তরুণী এসএমএস করে জানতে চাইতেন। তার উত্তর আমি দিয়েছি এসএমএসেই। কোনও অশালীন এসএমএস করিনি। হুমকিও দিইনি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ২০০৫ সালে জিয়াগঞ্জ থানার আজিমগঞ্জের বাসিন্দা ওই তরুণীর বিয়ে হয় প্রতিবেশী রকি সাহার সঙ্গে। ২০১০ সালে ওই তরুণী কলকাতা চলে যান। এর পরেই স্বামীর সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি হয়। ২০১২ সালের নভেম্বরে রকি সাহার বিরুদ্ধে জিয়াগঞ্জ থানায় বধূ নির্যাতনের অভিযোগ দায়ের করেন ওই তরুণী। পুলিশ এ বছর জানুয়ারিতে রকিকে গ্রেফতার করে। তাঁর জেল হাজতও হয়। পরে তিনি জামিনে মুক্তি পান। এর পরে তাঁদের আপসে বিচ্ছেদ হয়। রকির দাবি, তাঁর একটি গাড়ি আটকে রেখেছিলেন ওই তরুণী। গাড়ি ফেরত চেয়ে জুলাই মাসে লালবাগ আদালতে মামলা করেন তিনি। জিয়াগঞ্জ থানাতেও অভিযোগ করেন।
রকির দাবি, ৫ অগস্ট নিউ আলিপুর গেলে ওই তরুণী এবং তাঁর দুই বন্ধু শান্তনু মুর্মু ও অরিদীপ্ত ঘোষ তাঁকে মারধর করেন। নিউ আলিপুর থানায় অভিযোগ করেন রকি। যদিও ঘটনা হল, ৫ অগস্ট রাতেই রকি ও তাঁর সঙ্গীরা গাড়িটি উদ্ধার করে নিউ আলিপুর থানায় পুলিশি হেফাজতে রেখে দেন। পরে গাড়িটি পাঠিয়ে দেওয়া হয় জিয়াগঞ্জ থানায়। এখনও সেখানেই পড়ে রয়েছে গাড়িটি। কিন্তু, হঠাৎ শনিবার (১৭ অগস্ট) রাতে জিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ ওই গাড়ি আটকে রাখার অভিযোগে নিউ আলিপুর চত্বর থেকে শান্তনুুকে গ্রেফতার করতে যায়। পুলিশের দাবি, সেই সময় ওই মহিলা সাদা পোশাকে থাকা পুলিশকর্মীদের বাধা দেন। খবর পেয়ে নিউ আলিপুর থানার পুলিশ শান্তনু এবং ওই তরুণীকে থানায় নিয়ে আসে। পরে শান্তনুকে গ্রেফতার করে জিয়াগঞ্জ থানায় নিয়ে আসা হয়। ওই তরুণী জিয়াগঞ্জ থানার পুলিশের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন নিউ আলিপুর থানায়। জিয়াগঞ্জ থানার পুলিশও ওই তরুণী ও শান্তনুুর বিরুদ্ধে মারধর ও কাজে বাধা দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ দায়ের করে। শান্তনুকে লালবাগ এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক এক দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
ওই তরুণী এ দিন বলেন, “আমি কুপ্রস্তাবে সাড়া না দিলে শান্তনুকে গ্রেফতারির যে হুমকি মৃণাল মজুমদার দিয়েছিলেন, পুলিশ সেটাই সত্যি করে দেখাল।” মৃণালবাবু অবশ্য বলেন, “ওই তরুণীকে গাড়ি ফেরত দিয়ে দিতে বলেছিলাম। এখন ওই গাড়ি চুরির ঘটনায় জড়িয়ে যাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ করছেন তিনি। তাঁর প্রাক্তন স্বামী আমার পরামর্শে ওই সব ঘটনা ঘটাচ্ছে, ভেবে হয়তো তিনি আমার বদনাম করার চেষ্টা করছেন।” যা শুনে ওই তরুণী বলছেন, “আমি হাল ছাড়ব না। উর্দির জোর বেশি, নাকি সাধারণ মানুষের, তা দেখতে চাই!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.