টানা পনেরো দিন ধরে লালগড় ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দলমার পালের প্রায় একশোটি হাতি। ইতিমধ্যে লালগড়ের নেতাই, বীরকাঁড়, বড়পেলিয়া, জামশোল, খয়রাশুলি, আমলিয়া, আমডাঙা, বাঁধগোড়া, পডিহা, ভাঙাডালি ও সাঁওতাল ধানশোলা গ্রামের কয়েকশো হেক্টর জমির ধান ও সব্জি চাষের ব্যাপক ক্ষতি করেছে হাতিরা। হাতির হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গোটা দশেক মাটির বাড়ি। শুক্রবার রাতে বড় পেলিয়া গ্রামের একটি মুদি দোকান ভেঙে চালের বস্তা বের করে খেয়ে ও ছড়িয়ে নষ্ট করে হাতিরা। পার্শ্ববর্তী শালবনি ব্লকের বাবুইডাঙা, খয়েরডাঙা, আঁধারমারা, বীরভানপুরের মতো গ্রামগুলিতেও ক্ষয়ক্ষতি চালিয়েছে হাতিরা। শনিবার সন্ধ্যায় লালগড় ব্লক সদর লাগোয়া জঙ্গলে একটি হস্তিনী একটি শাবক প্রসব করায় রীতিমতো চিন্তিত বন দফতর। বনকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, সঙ্গে সদ্যোজাত শাবক থাকলে হাতির পাল এলাকা ছাড়তে দেরি করে। সেক্ষেত্রে হাতির পালটি আরও কয়েক দিন লালগড়ে থেকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বন দফতর। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, শনিবার সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ লালগড় ব্লক সদর লাগোয়া জঙ্গলে একটি হস্তিনী একটি শাবক প্রসব করে। এরপরই বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাকি হাতিগুলিও ওই জঙ্গলে চলে আসে। পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, সদ্যোজাত শাবক থাকলে হাতিরা এলাকা ছেড়ে যেতে গড়িমসি করে। এমন হলে আরও ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। |
লালগড়ের জঙ্গলে হাতির পাল।—নিজস্ব চিত্র |
বন দফতর সূত্রের খবর, গত ২ ও ৩ অগস্ট দু’দফায় গোয়ালতোড় রেঞ্জের জঙ্গল থেকে একশোটি হাতি লালগড় রেঞ্জে ঢোকে। তারপর থেকে মেদিনীপুর বন বিভাগের অন্তর্গত লালগড় রেঞ্জের একের পর এক গ্রামে রাতের বেলা চড়াও হচ্ছে হাতিরা। আমন ধান চাষের মরশুমে হাতির পাল ধানখেত মাড়িয়ে দেওয়ায় মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে চাষিদের।
লালগড়ের রেঞ্জ অফিসার অমিয়ময় দে বলেন, “লোকালয়ে হাতির ঢোকা ঠেকাতে গ্রামবাসীদের হুলা (মশাল) জ্বালানোর জন্য পোড়া মোবিল ও বাজি-পটকা দেওয়া হচ্ছে। শনিবার রাতে হাতির পালের একটি হস্তিনী একটি শাবক প্রসব করেছে। সঙ্গে সদ্যোজাত থাকায় হাতির পালটির স্বাভাবিক গতিপথের বিরুদ্ধে জোর করে খেদাতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় হাতির পালটিকে যতটা সম্ভব জঙ্গলমুখি রেখে ক্ষয়ক্ষতি এড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
এলাকাবাসীর অবশ্য বক্তব্য, হাতির পালকে বাগে আনা যাচ্ছে না। দিনের বেলা হাতির পালটি জঙ্গলে থাকছে। রাত হলেই চার-পাঁচটি দলে ভাগ হয়ে হাতিরা লোকালয়ে ঢুকে তাণ্ডব চালাচ্ছে। |
পুরনো খবর: নেতাইয়ে জোড়া হাতি |