সকাল ৮টার সময়ে ফালাকাটা থানায় খবর দিলেও, পুলিশ এসে পৌঁছয় দুপুর বারোটায়। ৪ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে জনতা চিতাবাঘকে পিটিয়ে মেরে, দাঁত ভেঙে, লেজ ও কান কেটে নিয়েছে। পুলিশ না থাকায় জনতাকে সামাল দেওয়া যায়নি। এমনই অভিযোগ বন দফতরের। শনিবার ধনীরামপুরের চ্যাঙমারিটারিতে ঢুকে পড়া চিতাবাঘকে বনকর্মীদের সামনে একাংশ গ্রামবাসীর পিটিয়ে মেরে ফেলার পরে, বন দফতরের পক্ষ থেকে পুলিশের ঘাড়েই ঘটনার দায় চাপানো হয়েছে।
শনিবার দলগাঁ জঙ্গল থেকে বেরিয়ে একটি চিতাবাঘ গ্রামে ঢুকে তিন জনকে আক্রমণ করে। বাসিন্দারা জড়ো হয়ে ঢিল ছুড়লে চিতাবাঘটি একটি গামার গাছের মগ ডালে চড়ে বসে। বনকর্মীদের ২৫ জনের একটি দল ঘুমপাড়ানি গুলি, জাল নিয়ে ঘটনাস্থলে যায়। দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, সে সময়ে গাছের কয়েকশো গ্রামবাসী লাঠি নিয়ে গাছের নীচে জড়ো হয়েছিল। ক্ষিপ্ত জনতাকে সামাল দিতে সকাল ৮টা নাগাদ ফালাকাটা থানায় ফোন করে বাহিনী পাঠানোর অনুরোধ করেন বলে বনকর্মীরা দাবি করেছেন। ঘনঘন থানায় ফোন করলে বিভিন্ন গ্রামে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন চলতে থাকায় পুলিশ যেতে দেরি হবে বলে থানা থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় বলে বনকর্মীরা দাবি করেছেন। |
পরে দুপুর ১২টায় বাহিনী পৌঁছয় বলে বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে। ততক্ষণে চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে মেরে দেহাংশ লুঠ করে নিয়েছে একাংশ বাসিন্দা। বন দফতরের জলপাইগুড়ির ডিএফও বিদ্যুৎ সরকার বলেন, “প্রতি মাসে জেলা পুলিশ কর্তাদের বৈঠক হয়। সেখানে শনিবার পুলিশের ভূমিকা নিয়ে কর্তাদের কাছে অভিযোগ করা হবে।” জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, “আমাকে বন দফতরের কেউ কিছু বলেনি। সে দিন বন দফতর কখন থানায় জানিয়েছে আর থানা থেকে কখন বাহিনী পাঠানো হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব।”
ঘুমপাড়ানি গুলি ছোঁড়ার পরে চিতাবাঘটি গাছ থেকে লাফিয়ে পড়লে ক্ষিপ্ত জনতার আক্রমণের শিকার হতে পারেন বলে আশঙ্কা করে বনকর্মীরা গুলি ছোড়েনি বলে বনদফতর জানায়। তবে গাছের ডাল ভেঙে চিতাবাঘটি নীচে পড়ে গেলে একাংশ গ্রামবাসী পিটিয়ে চিতাবাঘটিকে মেরে ফেলে। বনকর্মীদের চোখের সামনেই মৃত চিতাবাঘটি স্থানীয় কলি নদীর পাড়ে নিয়ে গিয়ে, দাঁত, নখ, জিভ, কান, কেটে গ্রামবাসীরা যে যার মতো নিয়ে যায়। বনকর্মীরা বাধা দিতে গেলে তাদের ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় এবং তাদের ক্যামেরাও কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা হয় বলে বন দফতর সূত্রে অভিযোগ করা হয়েছে। পুলিশ না থাকায় বনকর্মীরাও প্রতিবাদ করতে সাহস পাননি বলে দাবি করা হয়েছে। সে সময় ঘটনাস্থলে থাকা এক বন দফতরের অফিসারের কথায়, “সময় মত পুলিশ পৌঁছোলে হয়ত চিতাবাঘটিকে বাঁচাতে পারতাম। পুলিশ আসার পরেই আমরা দেহটি উদ্ধার করতে পারি।” চিতাবাঘটিকে পিটিয়ে মারা এবং দেহাংশ লুঠের ঘটনায় ফালাকাটা থানায় বনদফতরের থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। ফালাকাটার থানার আইসি ধ্রুব প্রধান বলেন, “দেরি করে খবর পাই। থানা থেকে বাহিনী রওনা দেওয়ার পরে যেতেও কিছুটা সময় লেগেছে।”
এই দিন বন কর্মীদের সংগঠন ওয়েস্টবেঙ্গল ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের রাজ্য কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমল সিংহ বলেছেন, “ক্ষিপ্ত মানুষদের সামাল দেবার মতো বন দফতরের প্রশিক্ষণ বা পরিকাঠামো নেই।” |