দাবিমতো চাঁদা মেলেনি, চেম্বারে মার ডাক্তারকে |
অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত জানা • উলুবেড়িয়া |
ঈদ ও স্বাধীনতা দিবসে নানা অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দাবি মতো চাঁদা দেননি চিকিৎসক। তাই রবিবার সকালে ভরা চেম্বারে ঢুকে তাঁকে যথেচ্ছ কিল-চড়-ঘুষি মারার অভিযোগ উঠল উলুবেড়িয়ার একটি ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
|
সৌরভ মান্না
—নিজস্ব চিত্র |
সৌরভ মান্না নামে ওই শিশু বিশেষজ্ঞ থানায় অভিযোগ দায়ের করলেও রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ক্লাবের সদস্যেরা অবশ্য মারধরের কথা অস্বীকার করেছেন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ঈদ উপলক্ষে গত ৮ অগস্ট বস্ত্র বিতরণ ও ৯ অগস্ট ক্যুইজ-সহ নানা প্রতিযোগিতার আসর বসায় উলুবেড়িয়া জুনিয়র স্পোর্টিং ক্লাব। ১৫ অগস্ট সারা দিন ফুটবল প্রতিযোগিতার আয়োজন করে তারা। উলুবেড়িয়া স্টেশন রোডের বাসিন্দা সৌরভবাবু অভিযোগ করেন, এই সব অনুষ্ঠানের জন্য ক্লাবের তরফে তাঁকে ৩০০১ টাকা চাঁদার বিল ধরানো হয়। কিন্তু তিনি জানান, এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। পরে সাড়ে সাতশো টাকা পাঠিয়ে দেন ক্লাবে। এর পরেই বাধে বিপত্তি।সৌরভবাবুর অভিযোগ, সেই টাকা ফেরত পাঠিয়ে দেন ক্লাবের সদস্যেরা। এর পরে ১৪ অগস্ট বাড়ি গিয়ে হুমকি দেন, দাবি মতো চাঁদা না দিলে ফল ভাল হবে না। তাঁকে মারধরও করা হতে পারে। পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে জেনারেল ডায়েরি করেন তিনি। কিন্তু লাভ হয়নি। ১৬ অগস্ট ফের বাড়ি এসে চাঁদা চান যুবকেরা। না দেওয়ায় শাসায়।
রবিবার সকালে আবাসনের একতলায় নিজের চেম্বারে রোগী দেখছিলেন সৌরভবাবু। রোগী ও তাঁদের আত্মীয় মিলিয়ে হাজির ছিলেন ৬০-৭০ জন। তাঁর অভিযোগ, “হঠাৎই ওই ক্লাবের ২৪-২৫ জন আসে। প্রথমে সবাইকে বাইরে বের করে দেয় তারা। তার পরে আমাকে মারধর শুরু হয়। উল্টে দেওয়া হয় চেয়ার, টেবিল, নথিপত্রও।” উপস্থিত লোকজন বাধা দেওয়ার সাহস পাননি। তাণ্ডব চালিয়ে বিনা বাধায় পালায় ওই যুবকেরা।
খবর পেয়ে পুলিশ ওই চেম্বারে যায়। সৌরভবাবু গোটা ঘটনা জানিয়ে অভিযোগ করেন। চেম্বারের সিসিটিভি ফুটেজও তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন পুলিশকে। হুমকির কথা আগে জানানো সত্ত্বেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তার কোনও সদুত্তর দিতে পারেনি পুলিশ। উলুবেড়িয়ার এসডিপিও শ্যামলকুমার সামন্ত
বলেন, “একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত চলছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওই এলাকায় বছর দশেকেরও বেশি সময় ধরে রয়েছেন সৌরভবাবু। চিকিৎসক হিসেবে এলাকায় বেশ নামও রয়েছে। এ দিনের ঘটনার পরে আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, “চাঁদা না দেওয়ায় এক জন নামী চিকিৎসককে যদি এ ভাবে হেনস্থা হতে হয়, অন্যদের কী হবে!”
১৫ অগস্ট ওই ক্লাবের ফুটবল প্রতিযোগিতায় হাজির ছিলেন উলুবেড়িয়া দক্ষিণ কেন্দ্রের তৃণমূল বিধায়ক পুলক রায়। এ দিন তিনি বলেন, “ক্লাবের দু’এক জন তৃণমূল সমর্থক হতেই পারেন। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। ডাক্তারকে মারধর করা হয়ে থাকলে তা সমর্থনযোগ্য নয়।”
শেখ সুজাউদ্দিন নামে ক্লাবের এক সদস্যের যদিও দাবি, “আমরা ডাক্তারবাবুর কাছে চাঁদাও চাইতে যাইনি, মারধরও করিনি। এক জন রোগীর ব্যাপারে কথা বলতে গিয়েছিলাম। উনি আমাদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করছেন। কেন এমন করছেন জানি না।” |