|
|
|
|
মজুরি বেড়েছে, তাই কমেছে দারিদ্র, মত বিশেষজ্ঞের
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
গ্রামের মানুষের দারিদ্র কমছে। আর তার একটা প্রধান কারণ, একশো দিনের কাজের প্রকল্পের জন্য গ্রামের মানুষের মজুরি বেড়েছে। এমনই মনে করছেন ন্যাশানাল স্ট্যাটিসটিক্যাল কমিশনের চেয়ারম্যান প্রণব সেন।
জুলাইয়ে যোজনা কমিশন জানিয়েছে, ২০০৪-০৫ বর্ষে দেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল জনসংখ্যার ৩২.৭%। ২০১১-১২ বর্ষে তা দাঁড়িয়েছে ২১.৯%। অর্থাৎ, দেশে দারিদ্রের হার কমেছে উল্লেখযোগ্য ভাবেই। বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছিল, দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা কম দেখিয়ে নানা কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুযোগ-সুবিধা থেকে অনেককে বঞ্চিত করতে চেয়েছে সরকার।
কিন্তু সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে প্রণববাবু জানান, গ্রামীণ ভারতবর্ষে একশো দিনের কাজের প্রকল্প একটি ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করে দিয়েছে। তার ফলে গ্রামাঞ্চলে কৃষিজ জিনিসপত্রের দামের তুলনায় মজুরি বেড়েছে অনেক বেশি হারে। দেশে দারিদ্রের হার কমার পিছনে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। |
|
চলছে কাজ। —ফাইল চিত্র। |
প্রণববাবু জানান, একশো দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার মতো প্রকল্পগুলির জন্য গত কয়েক বছরে গ্রামীণ এলাকায় চাষাবাদ ছাড়া অন্য নানা ধরনের কাজের সুযোগ বিপুল ভাবে বেড়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে মজুরিও। দেশের আর্থিক বৃদ্ধি তো হয়েইছে। তবে গরিবি কমার পিছনে আরও দু’টি বিষয় কাজ করেছে। প্রথমত, ২০০৪ সাল থেকে কৃষি থেকে উৎপন্ন পণ্যের বাণিজ্যে গতি এসেছে। কেন্দ্রীয় সরকার ‘ন্যূনতম সহায়ক মূল্য’ বেশ খানিকটা বাড়িয়ে দেওয়ায় কৃষিজ পণ্যের ব্যবসার অনুকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর দ্বিতীয় কারণটি হল, গ্রামীণ এলাকায় মজুরি বেড়েছে অনেক দ্রুত হারে, এমনকী কৃষিজাত জিনিসপত্রের দামের থেকেও দ্রুত। এর ফলে, জমির মালিকদের থেকে জমিহীন শ্রমিকদের হাতে ক্রয় ক্ষমতার কিছুটা হস্তান্তর হয়েছে।
কিন্তু বহু রাজ্যেই একশো দিনের কাজের প্রকল্প চলছে খুঁড়িয়ে, শ্রমিকরা কাজ চেয়েও পাচ্ছেন না। তা হলে এই প্রকল্পের জন্য দারিদ্র কমছে, দাবি করা চলে কী করে? প্রণববাবু মনে করেন, অনেক জায়গায় সে ভাবে কাজ না করলেও এই প্রকল্প মজুরদের পারিশ্রমিক নিয়ে দর কষাকষির অস্ত্র জুগিয়েছে। নিয়ম অনুসারে, ১৫ বা তার বেশি সংখ্যক শ্রমিক এক যোগে যে কোনও সময়ে একশো দিনের কাজ চাইলে তা দিতে হবে। তাই প্রধানত চাষের মরসুম বাদ দিয়ে অন্য সময়ে একশো দিনের কাজ দেওয়া হলেও এই প্রকল্প গ্রামীণ এলাকায় একটি ন্যূনতম মজুরি স্থির করে দিয়েছে।
প্রণববাবু আরও জানিয়েছেন, কৃষিজ পণ্যের বাণিজ্যিক পরিস্থিতি বা একশো দিনের কাজ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (এমএসএমই) গ্রামীণ এলাকার অর্থনীতি পাল্টেছে। ২০০৪-০৫ সালের ‘ইকনমিক সেনসাস’ থেকে দেখা গিয়েছে, কৃষির সঙ্গে সম্পর্ক নেই এমন উদ্যোগ অনেক বেড়েছে। তার পিছনে আবার প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা ও ক্ষুদ্র ঋণ আন্দোলনের ভূমিকা রয়েছে। তাঁর মতে, গ্রামের রাস্তাঘাট উন্নত হওয়ায় এমন অনেক কাজের সুযোগ বেড়েছে, আগে মানুষের কাছে যে সবের কোনও অস্তিত্বই ছিল না। গ্রামে চাষাবাদ এখনও বেশির ভাগ মানুষের রুজিরুটি হলেও ছোট ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ বাড়ায় জমিহীন শ্রমিকদের কাছে অন্য জীবিকার দরজা খুলে গিয়েছে।
একশো দিনের কাজের ফলে মজুরি বৃদ্ধি এবং ছোট-মাঝারি উদ্যোগে নানা কাজের সুযোগ সৃষ্টি, মজুরি বাড়াতে এই দু’টি বিষয় বড় কারণ হলেও কোনটির ভূমিকা বেশি তা এখনই আলাদা করে বলা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন প্রণববাবু। তবে তাঁর মতে, এই পরিস্থিতি ধরে রাখার জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়তে থাকা ভীষণ ভাবে জরুরি।
|
পুরনো খবর: দারিদ্রের সংখ্যাতত্ত্ব নিয়ে বিতর্ক কেন্দ্রে |
|
|
|
|
|