একের পর নিম্নচাপ। তার ফলে আকাশ মেঘলা। মাঝেমধ্যেই নামছে বৃষ্টি। আর তাতেই দুশ্চিন্তায় কুমোরটুলি।
খড়ের উপরে দু’বার মাটি পড়ে গিয়েছে। শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমার হাত-পায়ের আঙুল লাগানোর কাজ। আগামী দিন পনেরোর মধ্যে এই কাজটা শেষ না হলে মহালয়ার আগে প্রতিমা সম্পূর্ণ হবে না। রবিবার দুপুরে প্রতিমার আঙুল বসাচ্ছিলেন সুন্দর পাল। আকাশ কালো করে তখনই নামল বৃষ্টি। কুমোরটুলি থেকে ফোন গেল আলিপুর আবহাওয়া দফতরে। সেখান থেকে যে খবরটা এল, তাতে মুখ শুকিয়ে গেল সুন্দর পাল ও তাঁর কারিগরদের।
কেন? আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, বঙ্গোপসাগরে ফের তৈরি হয়েছে একটি নিম্নচাপ। তার ফলে আগামী দু’দিন কলকাতা-সহ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হতে পারে। তার পরে আবহাওয়া কেমন যাবে, তা নির্ভর করছে ওই নিম্নচাপটি কী ধরনের ব্যবহার করে, তার উপরে। অর্থাৎ, সপ্তাহের প্রথম ক’টা দিন আকাশ কুমোরটুলিকে স্বস্তি দেবে না, এমনটাই আশঙ্কা। |
কুমোরটুলির এক কারিগর সুশান্ত পাল বলছিলেন, “গত পনেরো দিনের মধ্যে রোদ পেয়েছি সাকুল্যে দুই কিংবা তিন দিন। এ সময়ে টানা পাঁচ-ছ’দিন রোদ না পেলে মাটিই শুকোবে না। পুরো কাজ পিছিয়ে যাবে।” সুন্দরবাবু এ বার ৪৭টি প্রতিমার বরাত পেয়েছেন। তাঁর চিন্তা, “আমার ছোট ছাউনি। তাতে সব প্রতিমা রাখা যাচ্ছে না। বেশির ভাগই রাখতে হচ্ছে বাইরে অস্থায়ী আচ্ছাদনে। বৃষ্টিতে সেগুলির কাজ করাই যাচ্ছে না।”
দুর্গাপ্রতিমার পাশাপাশি ৩২টি বিশ্বকর্মাও তৈরি হচ্ছে সুন্দরবাবুর ছাউনিতে। সেগুলির কাজ আর এক মাসের মধ্যে কী ভাবে শেষ করা যাবে, তা নিয়েও দুশ্চিন্তা রয়েছে কুমোরটুলির ওই প্রতিমাশিল্পীর।
কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আরও বেশি কাকলি পালের। এ বার ১৫টি দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করছেন। চারটের খড়ের কাঠামোয় মাটিই চড়ানো হয়নি। বললেন, “কারিগরদের মজুরির হার বেশি ছিল বলে কাজ শুরু করতে এ বার দেরি হয়েছে। বাইরে প্লাস্টিকের ছাদ ঝুলিয়ে ক’টার কাজ করব?” খড়ের কাঠামোয় মাটি চাপানোর কাজ তদারকি করছিলেন অপূর্ব পাল। আশপাশে সারিবদ্ধ অসম্পূর্ণ প্রতিমা। বললেন, “অন্য বারের মত এ বারও ৪০টা প্রতিমার বরাত নিয়েছি। কিন্তু আটটা কাঠামোয় এখনও মাটিই চড়াতে পারিনি। কড়া রোদ না পেলে যে কী করব!”
এ দিন তিনটি পুজো কমিটিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন প্রতিমাশিল্পী মিন্টু পাল। তিনি বলেন, “গত বছর ওই তিন পুজো কমিটির মধ্যে দু’টিতে আমার তৈরি প্রতিমা গিয়েছিল। তা সত্ত্বেও আকাশের অনিশ্চিত অবস্থা দেখে ঝুঁকি নিতে পারলাম না। এ বার তো দেখছি বৃষ্টিটা থামছেই না!”
কেবল প্রতিমাশিল্পীরাই নন, ফাঁপরে পড়েছেন কুমোরটুলির মণ্ডপসজ্জার শিল্পীরাও। এঁদের অন্যতম সুমন চক্রবর্তী জানান, “বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকায় থার্মোকলের রং শুকোচ্ছে না। কেবল মণ্ডপ নয়, বরাত এসেছে বিভিন্ন শো-রুম থেকে। ওরা দ্রুত দোকান সাজাতে চায়। অথচ তেজি রোদ্দুর না পাওয়ায় আমরা ফাঁপরে পড়ছি।” সতর্কতার কারণে শোলার কাজগুলো আগেই সেরে রেখেছেন। তা জানিয়ে সুমনবাবু বলেন,“বাঁচোয়া ওই একটাই।”
কুমোরটুলির কিছু মৃৎশিল্পী তৈরি করেন মাটির হাঁড়ি-খুরি-গ্লাস-থালা। রোদ্দুর না পেয়ে তাঁরাও চিন্তিত। মিষ্টির বিভিন্ন দোকান আগেই বরাত দিয়ে রেখেছে। আকাশ ঝলমলে না হলে যে ভারী মুশকিল! |