যেখানে অন্য রাজনৈতিক দলের লোকজন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন, সেখানে বেশ কিছু কর্মী-সমর্থক নিয়ে দল ছেড়ে কংগ্রেসে যোগ দিলেন দুবরাজপুরের তৃণমূল নেতা মিলন(আস্তিক) নায়ক। রবিবার সন্ধ্যায় দুবরাজপুর ধর্মশালায় ওই দলবদল অনুষ্ঠানটি হয়। প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী ও দলের দুবরাজপুর ব্লক সভাপতি অরুণ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে মিলনবাবুদের দলীয় পতাকা দিয়ে বরণ করেন স্থানীয় কংগ্রেস নেতা তথা দুবরাজপুর পুরভোটের আহ্বায়ক শেখ নাজিরউদ্দিন। তাঁর কথায়, “ওঁরা দলে যোগ দেওয়ায় দল শক্তিশালী হল।”
কেন দলবদল?
তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন ‘শহর সভাপতি’ মিলন নায়ক বলেন, “শহরে যখন সেই অর্থে তৃণমূলের সংগঠন ছিল না, তখন থেকে আমরা অনেকে খেটে তা তৈরি করেছি। এবং বিদায়ী কংগ্রেস পুরবোর্ডের দুর্নীতির প্রতিবাদ করতেই ওই সংগঠন তৈরি করা হয়েছে। আশা ছিল, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেই দল প্রার্থী বাছাই করবে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল সহ-সভপতি মলয় মুখোপাধ্যায়ের সামনে এ ব্যাপারে আমাদের কথাও দিয়েছিলেন।” মিলনবাবুর অভিযোগ, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করে সদ্য দলে ঢোকা (দিন কয়েক আগে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ গিয়েছিলেন দুবরাজপুরের বিদায়ী পুরপ্রধান-সহ একাধিক কাউন্সিলর) কংগ্রেস কাউন্সিলরদেরই পুরভোটে প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করাচ্ছে দল। তাই দলত্যাগের সিদ্ধান্ত। অনুব্রতবাবু অবশ্য বলছেন, “কে এই শহর সভাপতি? তাঁকে তো চিনিই না! আর যাকে চিনি না, তাঁর দলবদল নিয়েও কিছু বলতে চাই না।” যদিও মিলনবাবুর দাবি, ২০০১ সালের ২২ জুন নিজের হাতে তাঁকে শহর সভাপতির পদ দিয়েছিলেন অনুব্রত মণ্ডলই। সেই নথিও তাঁর কাছে রয়েছে।
তৃণমূলের দলের অন্দরের খবর অবশ্য অন্য কথা বলছে। তৃণমূলের তেমন প্রভাব দুবরাজপুর পুর-শহরে না থাকলেও পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান পীযূষ পাণ্ডে-সহ কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা দলে ঢোকায় পুরভোটে ভাল ফল করার ব্যাপারে অনেকটাই নিশ্চিত তৃণমূল। তাই এই দলবদল নিয়ে খুব একটা মাথা ঘমাতে রাজি নন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। দুবরাজপুর শহরে তৃণমূলের দুই প্রভাবশালী নেতা প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও মলয় মুখোপাধ্যায়ের মধ্যে বিরোধ দীর্ঘদিনের। একটা সময় মলয়বাবুর তুলনায় রাজনৈতিক গুরুত্বে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছিলেন প্রভাতবাবু। সেই সময় থেকেই মলয়বাবুর সঙ্গী ছিলেন সদস্য দলছাড়া মিলন নায়ক ও তাঁর সঙ্গীরা। পুরভোটে তিনি দলের টিকিটও পেয়ে যাবেন ভেবেছিলেন অনেকে।
কিন্তু পীযূষ পাণ্ডেদের দলে আনতে পেরে ফের স্বমহিমায় প্রভাতবাবু। ব্লক তৃণমূল সভাপতি ভোলা মিত্রের সঙ্গে আসন্ন পুরভোটে দায়িত্বও পেয়েছেন প্রভাতবাবু। তৃণমূল সূত্রের খবর, মলয়বাবুর কথার উপরে আর ভরসা রাখতে পরেননি মিলন নায়কের মতো বেশ কিছু কর্মী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মলয়বাবু বলেন, “যে কেউ দলবদল করতেই পারেন। প্রত্যেকের সেই স্বাধীনতা রয়েছে।” |