দুই শিশুকন্যাকে পুড়িয়ে মেরে
মায়ের গায়ে আগুন
রপর দু’টি কন্যাসন্তানের জন্ম দেওয়ার ‘অপরাধে’ বাড়ির বৌয়ের উপর রাগ আগে থেকেই ছিল। তার উপরে বৌয়ের বাপের বাড়ি থেকে দাবি মতো টাকা না পাওয়ায় সেই রাগ আরও বেড়ে যায়। শেষে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা দুই শিশুকন্যাকে আগুনে পুড়িয়ে বধূটির গায়েও আগুন ধরিয়ে দিলেন বলে অভিযোগ।
জামাই ও শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে শনিবার বীরভূমের সাঁইথিয়া থানায় এমনই অভিযোগ করেছেন বধূটির মা। প্রথমে শ্বশুরবাড়ির তরফে তাঁদের খবরও দেওয়া হয়নি। অন্য সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার বিকেলে হাসপাতালে যান বলে তিনি নিজে জানিয়েছেন।
ঘটনাটি কিন্তু ঘটে শনিবার সকালে। সাঁইথিয়ার খাঁয়েরপাড়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বছর চব্বিশের কাজল গড়াই, তাঁর তিন বছরের মেয়ে বৃষ্টি ও দেড় বছরের মেয়ে পূজা গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হন। তাঁদের বোলপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু পরেই দুই শিশুর মৃত্যু হয়। হাসপাতাল সুপার সুদীপ মণ্ডল বলেন, “কাজলের দেহের ৯০ শতাংশ পুড়ে গিয়েছে। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক।” সন্ধ্যায় কাজলের বিধবা মা পদ্ম গড়াই পুলিশের কাছে জামাই বাপ্পাদিত্য ও তাঁর বাবা, মা-সহ ৫ জনের বিরুদ্ধে তাঁর দুই নাতনিকে খুন ও মেয়েকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন। বীরভূমের পুলিশ সুপার সি সুধাকর বলেন, “অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়েছে। বধূটির জবানবন্দি নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।”
কাজলের বাপের বাড়ি বর্ধমানের মঙ্গলকোট থানার দীর্ঘসেঁয়া গ্রামে। তাঁর মায়ের অভিযোগ, “যথাসাধ্য পণ দিয়েই মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু নানা ছুতোয় জামাই ও তাঁর বাড়ির লোকেরা মেয়ের উপর অত্যাচার চালাত।” এর আগে কাজল বেশ কয়েক বার শ্বশুরবাড়ি থেকে চলে এসেছিলেন। প্রতিবারই ওঁকে বুঝিয়েসুঝিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছিল। কাজলের মায়ের দাবি, প্রথম বার মেয়ে হওয়ার পরে তেমন গোলমাল না করলেও, দ্বিতীয় বারও কাজল একটি মেয়ের জন্ম দেওয়ার পরে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা খেপে ওঠেন। মেয়ের উপর মারধর বেড়ে যায়। “জামাই এসে বারবার টাকা দাবি করত। সাধ্যমতো টাকাও দিয়ে এসেছি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওরা আমার দুই নাতনিকে পুড়িয়ে খুন করে মেয়েটাকেও মেরে ফেলার চেষ্টা করল।”
বধূর মামা বরুণ গড়াই এবং স্থানীয় স্কুলশিক্ষক ধ্রুব চট্টোপাধ্যায়রাও অভিযোগ করেন, ছেলের বদলে মেয়ের জন্ম দেওয়াতেই কাজলের উপর ওঁদের আক্রোশ বেড়ে গিয়েছিল। মাস ছয়েক আগে পুলিশের উপস্থিতিতে ওদের পারিবারিক অশান্তি নিয়ে খাঁয়েরপাড়া গ্রামে একটি বৈঠকও হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হল না।
কাজলের শ্বশুরবাড়িতে অবশ্য এই অভিযোগ স্বীকার করা হয়নি। কাজলের স্বামী পেশায় রঙের মিস্ত্রি বাপ্পাদিত্য দাবি করছেন, “কাজল মেয়েগুলোকে সামান্য কারণে বকাঝকা করায় আমার সঙ্গে ওর কথা কাটাকাটি হয়। কাজল মেয়ে দু’টিকে সঙ্গে নিয়ে ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়। পরে ওদের চিৎকার শুনে দরজা ভেঙে দেখি তিন জনের গায়ে আগুন জ্বলছে। পড়শিদের সাহায্যে ওদের উদ্ধার করি।” কাজলদের উদ্ধার করতে গিয়ে বাপ্পাদিত্যর দুই হাত ঝলসে গিয়েছে বলেও দাবি। বাপ্পাদিত্য নিজেও বোলপুর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। কাজলের শ্বশুর স্বপন গড়াই দাবি করেন, “ওই সময় মাঠে কাজ করছিলাম। খবর পেয়ে বাড়ি এসে দেখি বউমা সব শেষ করে দিয়েছে। আমরা কোনও দিন ওকে নির্যাতন করিনি।” বাপ্পাদিত্যর হাত কী করে পুড়ল, পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.