লুকোছাপা বরাবরই ছিল। যুবরানি ডায়ানার মৃত্যু নিয়ে রাজ পরিবারের দিকে আঙুলও ওঠে বহু বার। মৃত্যুর ষোলো বছর পরে আজও তা বাকিংহামের গোপনতম রহস্য। সেই রহস্যই ফের উস্কে দিল সাত পাতার একটা চিঠি। তাতে লেখা যুবরানি ডায়ানার মৃত্যুর পিছনে হাত রয়েছে ব্রিটিশ সেনার।
১৯৯৭ সালের ৩১ অগস্ট। প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদকে নিয়ে রিৎজ হোটেল থেকে বেরোনোর পরেই ডায়ানার পিছু ধাওয়া করেন ছবি-শিকারিরা। প্যারিসের একটি সুড়ঙ্গে গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়
ডায়ানা-সহ ডোডি ও গাড়ির চালক অঁরি পলের।
যদিও প্রশ্ন ওঠে সেটি দুর্ঘটনা, নাকি তার পিছনে হাত রয়েছে রাজ পরিবারেরই। এ বার সেই প্রশ্নই নতুন করে খুঁচিয়ে দিল চিঠিটি। স্বাভাবিক ভাবেই প্রথমে মুখে কুলুপ দিয়েছিল স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড। পরে শুধু জোর
দিয়ে বারেবারে এটুকুই জানানো হয়েছে, “তথ্যের তাৎপর্য ও যথার্থতা খতিয়ে দেখা হবে। তবে এটা কিন্তু পুনর্তদন্ত নয়।” গত কাল তথ্যের অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড বিবৃতি দিয়ে জানায়, “মেট্রোপলিটন পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।”
তথ্যটি প্রকাশ্যে আসে হঠাৎই। বেআইনি বন্দুক ও কিছু অস্ত্রশস্ত্র রাখার অপরাধে কোর্ট মার্শাল হয়েছিল ড্যানি নাইটিঙ্গেল নামে সার্জেন্টের।
এক সময় এই ড্যানির রুমমেট ছিলেন স্পেশ্যাল ফোর্সের গুপ্তচর ‘সোলজার এন’ (ইনি এই নামেই পরিচিত)। ‘সোলজার এন’ আবার ড্যানির শুনানির অন্যতম সাক্ষী। শুনানি চলাকালীন হঠাৎই রয়্যাল মিলিটারি পুলিশের হাতে এসে পৌঁছয় একটি বিতর্কিত চিঠি। চিঠিটির প্রেরক ছিলেন সোলজার এন-এর প্রাক্তন শ্বশুর-শাশুড়ি।
চিঠির বক্তব্য, প্রাক্তন জামাইটি এক সময় তাঁদের খুব গর্ব করে বলেছিলেন যুবরানি ডায়ানার মৃত্যুর পিছনে রয়েছে ‘স্পেশ্যাল এয়ার সার্ভিস’ (এসএএস)। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই বিষয়টি জানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক, রয়্যাল মিলিটারি পুলিশ এবং সার্ভিস প্রসিকিউটিং অথরিটি (এসপিএ)।
সাত পাতার চিঠিটি আগাগোড়াই হাতে লেখা। মনে করা হচ্ছে, ড্যানির শুনানির শুরুর দিকে এসএএস-এর কাছে ওই চিঠি এসে পৌঁছেছিল।
তারা চিঠিটি এসপিএ-র কাছে পাঠিয়ে দেয়। সেখানে থাকা প্যারামিলিটারি ফোর্সের নামধাম
মুছে দিয়ে চিঠিটি আদালতের
হাতে তুলে দিয়েছিল এসপিএ। তাতে লেখা, “তিনি (সোলজার এন) তাঁর বউকেও গল্প করেছিলেন... ঠিক করেছিলেন কী ভাবে যুবরানিকে হত্যা করা হবে।” ডায়ানার প্রেমিক ডোডি আল ফায়েদের বাবা মহম্মদ ফায়েদ
দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ জানিয়ে এসেছিল, ডায়ানার মৃত্যু পুরোটাই রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র। দু’বার তদন্ত হয়েছিল, ব্রিটিশ পুলিশ সবিস্তার তদন্ত করেছিল। কিন্তু কোনও বারই ষড়যন্ত্রের অভিযোগ ধোপে টেকেনি।
২০০৬ সালে লর্ড স্টিভেনের নেতৃত্বে যে তদন্ত হয়েছিল, তাতে হত্যার কথা কার্যত হেলায় উড়িয়ে দেওয়া হয়। বলা হয়েছিল, চালক মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাচ্ছিলেন। তাতেই দুর্ঘটনা। পরের বছরই ফের তদন্ত হয়। তাতেও প্রায় একই কথা বলা হয়।
এ বার কী পরিণতি হয় তদন্তের, ভবিষ্যৎই বলে দেবে সেটা। |