বহু পুরনো ঝুলন মেলা জমে উঠেছে উখড়ায়।
১২৪৪ বঙ্গাব্দে জমিদার হান্ডা পরিবার উখড়ায় এই ঝুলনের সূচনা করেন। সেই থেকে মেলাও শুরু। তবে কয়েক বছর পরে উখড়ার গোপালবাড়িতে চট্টোপাধ্যায় এবং রায়পাড়ার বাসিন্দারা আরও একটি ঝুলন উৎসবের আয়োজন করেন। একই সময়ে নিম্বাক সম্প্রদায় মহন্তস্থলে বৃন্দাবন জিউ মন্দিরে আরও একটি ঝুলন শুরু করেন। সেই থেকে তিনটি ঝুলনই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে। উখড়ার মেলা আগে পরিচালনা করত জমিদার পরিবার। ওই পরিবারের সদস্য তথা ১৯৮৩ সাল থেকে দীর্ঘদিনের কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রধান শোভনলাল সিংহ হান্ডা জানান, তাঁদের পূর্বপুরুষ বক্তার সিংহ হান্ডার মেয়ে বিষেণকুমারীর বিয়ে হয় বর্ধমানের মহারাজার সঙ্গে। সেই সূত্রেই তাঁরা উখড়ায় জমিদারির স্বত্ব পান। বর্ধমানে রাজবাড়িতে তখন মানব-ঝুলন হত। তাতে আকৃষ্ট হয়েই বক্তার সিংহের ছেলে শম্ভুলাল সিংহ হান্ডা উখড়ায় তাঁদের গোপীনাথ জিউ মন্দিরে ঝুলন শুরু করেন। সে বছর থেকেই মেলা শুরু। |
মেলায় লক্ষ্যভেদ।—নিজস্ব চিত্র |
আগে মেলা হত গ্রামের ভিতর। কিন্তু জায়গা কমে আসায় মেলা বাইরে করা হয়। ৪০ বছর ধরে সেটাই চলছে। তিনি জানান, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত কোনও বছর দু’টি আবার কোনও বছর তিনটি সার্কাস দল এখানে আসত। সারারাত ধরে চলত মেলা। মেলা উপলক্ষে পাঁচ দিন বাস চলত বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মেলায় শুধু জেলার নানা জায়গা থেকেই নয় লাগোয়া বীরভূম থেকেও প্রচুর লোক আসেন। ১৯৮৩ সালে গ্রাম পঞ্চায়েত গঠন হওয়ার পর থেকেই পঞ্চায়েতের উদ্যোগে একটি মেলা কমিটি গঠিত হয়। জমিদার বাড়ির ঝুলনে আবার একেক দিন কৃষ্ণের এক একটি লীলা মডেলের মাধ্যমে প্রদর্শীত হয়। এই মেলায় ৭০ বছর ধরে সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাব তিন দিনের বাউলের আখড়ার আয়োজন করে। তবে বেশ কয়েক বছর তা দু’দিনে নেমে এসেছে। এছাড়া আঠেরো বছর ধরে কলা, শিল্প প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করছে নেতাজি স্পোর্টিং ক্লাব। স্থানীয় চিত্রকরদের আঁকা ছবিও প্রদর্শীত হয়।
এ বছর স্থানীয় বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সংবর্ধনা ও মাধ্যমিকে কৃতীদের সংবর্ধনা দেওয়ারও পরিকল্পনা করেছে তারা। ২১ অগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনই সন্ধ্যায় থাকছে নানা অনুষ্ঠান। রাখী পূর্ণিমার দিন সুকান্ত স্পোর্টিং ক্লাব রাস্তার ঠেলাওয়ালা থেকে পড়ুয়া সকলকে নিয়ে রাখী উৎসবের আয়োজন করে। এলাকার নাট্যকার সুব্রত বাজপেয়ী, চিত্রশিল্পী বিকাশ কুণ্ডু, গায়ক দীপঙ্কর মুখোপাধ্যায় এবং কবি মহম্মদ মানিকরা জানান, বাউলের আখড়া লোকসংস্কৃতির স্বাদ মেটায়। ফলে বাউলের আখড়া থেকে ছবি প্রদর্শনী সবমিলিয়ে সাংস্কৃতিক মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে উখড়ার এই ঝুলন মেলা। |