সালানপুর ও বারাবনির ত্রিশঙ্কু হয়ে থাকা পঞ্চায়েতগুলির বোর্ড গঠন নিয়ে অশান্তির আশঙ্কায় এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করার দাবি তুলেছে সিপিএম ও কংগ্রেস। সোমবার বোর্ড গঠন হওয়ার কথা। তবে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস। শুক্রবারই সালানপুরের বাসুদেবপুর-জেমারি পঞ্চায়েতে প্রধান নির্বাচন নিয়ে গণ্ডগোলের জেরে প্রায় সাত ঘণ্টা ঘেরাও করে রাখা হয় বিডিও এবং যুগ্ম বিডিওকে। কিন্তু সোমবার এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সেজন্য কড়া ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
সালানপুর ব্লকের কাল্লা, আল্লাডি, এথোড়া এবং উত্তর রামপুর-জিৎপুর এই চারটি পঞ্চায়েত এবারের নির্বাচনে ত্রিশঙ্কু হয়ে আছে। পঞ্চায়েত আইন মোতাবেক নির্বাচিত সদস্যরা প্রধান পদের জন্য পছন্দের প্রার্থীর নাম প্রস্তাব করতে পারেন। অন্য একজন তাঁকে সমর্থন করবেন। কিন্তু একাধিক প্রার্থীর নাম প্রস্তাব বা সমর্থন করা যাবে না। এই পরিস্থিতিতে এথোড়া ও কাল্লা পঞ্চায়েতে প্রধান পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। কারণ দুটিতেই দু’টির বেশি আসন পায়নি তাঁরা। ফলে তাঁদের আশঙ্কা, প্রস্তাবক পেলেও সমর্থক জোটাতে পারবেন না তাঁরা। আবার এই দুই পঞ্চায়েতে কাউকে সমর্থনও করবে না ও সমর্থন নেবেও না বলেও ঠিক করেছে কংগ্রেস। ফলে কোনও ভাবেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকছে না তাঁরা। তবে ময়দান ছাড়তে রাজি নয় তৃণমূল। সিপিএম ও কংগ্রেস দু’দলেরই অভিযোগ, সিপিএম যাতে কংগ্রেসের সমর্থন জুটিয়ে প্রধানের পদ দখল করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে তৃণমূল একদিকে কংগ্রেসের নির্বাচিত সদস্যদের নিজেদের দলে ভেড়ানোর তোড়জোড় শুরু করেছে, অন্যদিকে সিপিএমের নির্বাচিত সদস্যদের সোমবার প্রধান নির্বাচনের ভোটাভুটিতে যোগ দিতে বাধা দিচ্ছে। কংগ্রেসের প্রদেশ সদস্য শ্যামল মজুমদার বলেন, “অর্থবল, লোকবল খাটিয়ে আমাদের কর্মীদের বাগে আনতে চাইছে তৃণমূল।” সিপিএমের বারাবনি জোনাল কমিটির সম্পাদক অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “ওরা আমাদের সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রধান নির্বাচনের ভোটাভুটিতে না আসার হুমকি দিচ্ছে।” ফলে সোমবার পঞ্চায়েত কার্যালয়গুলির সামনে ভিড় জমিয়ে নির্বাচিত সদস্যদের ঢুকতে বাধা দেওয়া হবে বলে আশঙ্কা করছে সিপিএম কংগ্রেস দু দলই। তাই তাঁদের দাবি, এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করে নির্বিঘ্নে বোর্ড গঠন পর্ব শেষ করুক প্রশাসন।
বারাবনি পঞ্চায়েতের ১৩টি আসনের মধ্যে সিপিএম ও তৃণমূল ছ’টি করে ও একটিতে জিতেছে কংগ্রেস। কংগ্রেসের অভিযোগ, তৃণমূল এখানেও লোকবল, অর্থবল দেখিয়ে তাঁদের সদস্যদের পকেটে পুড়তে চাইছে। আর সিপিএমের অভিযোগ, তাঁদের নির্বাচিত সদস্যদের ভোট দিতে ঢুকতে না দেওয়ার কৌশল নিয়েছে তৃণমূল। সদস্যদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পুচড়ায় দশটি আসনের মধ্যে পাঁচটি করে আসন পেয়েছে সিপিএম ও তৃণমূল। নিয়ম অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে প্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের দু’এক সদস্যকে আটকে প্রধান নির্বাচনে তৃণমূল কিস্তিমাত করতে চাইছে বলে সিপিএমের অভিযোগ।
যদিও এই অভিযোগ মানতে চায়নি তৃণমূল। দলের এই দুই নির্বাচন ক্ষেত্রের পর্যবেক্ষক পাপ্পু উপাধ্যায় বলেন, “কেউ যদি আমাদের সমর্থন করেন বা প্রধানের ভোটাভুটিতে যোগ না দিতে পারেন তার দায় আমাদের নয়। তবে আমরা নিশ্চিত ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতগুলির দখল আমরাই পাব।” আসানসোলের মহকুমাশাসক অমিতাভ দাস জানিয়েছেন, আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। উপযুক্ত প্রশাসনিক পদক্ষেপ করেই প্রধান নির্বাচন নির্বিঘ্নে শেষ হবে। |