|
|
|
|
এক সময় পাওলিকে ভালবাসতাম |
তবে দেড় বছর আগে সেটা শ্রদ্ধা মিশ্রিত গভীর বন্ধুত্বে পরিণত হয়েছিল। তবে এর জন্য বিগ বস-এর
আইরিস মাইতি দায়ী নন।
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়-এর সঙ্গে খোলামেলা আড্ডায় প্রিয়াঙ্কা দাশগুপ্ত |
বিক্রম চট্টোপাধ্যায়ের ফ্ল্যাটে ঢুকলে বিগ বস-এর বাড়ির কথা না মনে হওয়াটা অসম্ভব। বাড়িতে পাঁচটা ল্যাব্রাডর। লিফ্ট থেকে কেউ নামলে প্রথমেই ঘেউ ঘেউ করে তারা সমস্বরে অভ্যর্থনা জানায়। মনে পড়ে যায় যে ভাবে কুকুররা ডেকে ওঠে বিগ বস-এর বাড়িতে যদি কেউ দিনের বেলা ঘুমোয়! ফ্ল্যাটের আলোগুলো অনেকটাই বিগ বস-এর বাড়ির মতো। লাল আর নীল নিয়ন আলো। এমনকী চেয়ারগুলো বিগ বস-এর ডাইনিং টেবিল চেয়ারগুলোর মতো দেখতে। তবে দরজাগুলোর রং অবশ্য আলাদা। কনের বেনারসির মতো টুকটুকে লাল। মেঝেতে বসে সেই লাল দরজায় হেলান দিয়ে শুরু হল আড্ডা।
|
লাল তো অনেকের কাছেই প্রেমের রং। তাই এই রং পছন্দ করেছেন?
না না। এই ফ্ল্যাটটা তৈরি হয়েছে জাস্ট তিন মাস হল। বাবাই সব করেছেন।
তিন মাসে তো কত কিছুই পালটে গেল। চব্বিশ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বাড়ল। একজন প্রেমিকা...
আরে! এ সব আবার কী বলছেন! টাকার অঙ্ক নিয়ে কিছু বলব না। আর প্রেমিকা মানে?
আইরিস মাইতির কথা বলছিলাম...
আমি একজন ভাল বন্ধু পেয়েছি।
উফ্! একদম অ্যান্টিসেপ্টিক লোশনের গন্ধ পাচ্ছি এই উত্তরে...
মানে?
এই বন্ধু, বিশেষ বন্ধু— এ সব এত শুনেছি যে মনে হয় অ্যান্টিসেপ্টিক লাগিয়ে উত্তর দিচ্ছেন...
কিন্তু এটাই তো সত্যি। আইরিস আমার খুব ভাল বন্ধু। এই তো বিগ বস-এর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে আমরা চুটিয়ে আড্ডা মারলাম একদিন মুম্বইতে। গল্প করলাম। কিছুটা বাড়ির লোকদের নিয়ে চর্চা করলাম।
প্রেম করলেন না?
বলছি তো না। বাড়ির ওই পরিবেশে যে আমি এ রকম একজনকে বন্ধু হিসেবে পেলাম, এটাই আমার কাছে দামি। ওই খেলাটা যে জিতবে, সে তো সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট গেম-এ জিতবে না। সারভাইভাল অব দ্য ডার্টিয়েস্ট গেম-এ বিজয়ী হবে সে। |
|
ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল |
আপনি তো বলেছিলেন আইরিস নাকি সেই মানুষ, যাকে দেখলে আপনার মুখে হাসি ফোটে। কেমন হালকা
প্রেম-প্রেম গন্ধ ছিল না এই সংলাপে?
আমার দিক থেকে প্রেম ছিল না। আগেও ছিল না। এখনও নেই।
অবশ্য থাকবেই বা কী করে? আইরিস তো সন্দেহ করেছিলেন আপনি ওকে এভিকশনের জন্য মনোনীত করেছিলেন...
মানে? এটা তো জানতাম না।
(বিক্রমের মা ঘরে ঢুকেছেন সেই মুহূর্তে। মাকে জিজ্ঞেস করাতে তিনিও একই কথা বিক্রমকে বলেন)
তা হলে? যিনি ক্যামেরার সামনে বলেছিলেন যে ভালবাসেন, তিনি আবার আপনাকে সন্দেহ করছেন! সেখানে প্রেম হবে কী করে?
দেখুন ওই বাড়িতে অনেক রকমের ব্রেনওয়াশ চলতে থাকে। হয়তো কেউ ওকে কিছু বলেছিল আমার সম্পর্কে। আমি এ সব নিয়ে ভাবি না। ওটা একটা খেলা। ওখানে থাকাকালীন আমি কারও সম্পর্কে এমন কিছু বলিনি যার ভার আমি সারাজীবন বইতে পারব না। বাড়ি ফেরার পর আমি বিগ বস-এর কোনও এপিসোড দেখিনি।
কেমন নিরাসক্ত লাগছে আপনাকে...
হ্যাঁ।
আচ্ছা, যদি বলি যে ঘরের কোনও কোনও সদস্য আপনার আর আইরিসের একটা লেপ শেয়ার করে বসে আড্ডা মারার কথা তুলেছেন, তা হলে কিছু যায় আসবে না?
সে তো অনেকে অনেক কথাই বলেছে। আপনি ওখানে গিয়েছিলেন। ভেতরটা কী ঠান্ডা সেটা তো জানেন। বাইরে সব সময় বৃষ্টি পড়ছে। সেখানে আমাকে আর আইরিসকে একই লেপের তলায় বসে থাকতে দেখা গিয়েছে। আমাকে আর সম্পূর্ণাকেও দেখা গিয়েছে সে ভাবে। বা কার্লিটা আর কনীদিকেও। এমনকী রুদ্রদা আর পটাদাকেও। তাঁদের সবার মধ্যেই কি কোনও সম্পর্ক আছে? কার্লিটা তো প্রকাশ্যে সবাইকে চুমু খেয়ে বেরিয়েছে। তার মানে কি অন্য কিছু নাকি? কই, সমকামিতা নিয়ে তো কেউ কিছু বলছেন না? সমকামিতাকে আমরা সম্মান করি ঠিকই। তবে যত গুজব, সবই কি একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বসে থাকলেই হবে?
পাওলি আর আপনাকে নিয়ে অনেক জল্পনা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছে যে আপনাদের সম্পর্কটা ভেঙে গিয়েছে। প্রেমে পড়েছিলেন কবে?
এটা কি বলতেই হবে?
প্রেমে পড়া তো পাপ নয়। সত্যি বলাটাও ভাল অভ্যেস...
এ ভাবে বলতে কেমন লাগছে... (একটু থেমে) প্রায় দু’বছর আগে আমি পাওলির প্রেমে পড়ি। ইয়েস, আই হ্যাড ফলেন ফর হার। কিন্তু কোনও দিন সেটা প্রকাশ করতে পারিনি। প্রেমটা পুরোটাই আমার তরফ থেকে ছিল। তখন আমরা একসঙ্গে ‘এলার চার অধ্যায়’ করছি। পাওলিকে দেখে আমি মুগ্ধ। সত্যি বলতে কী আমার সিনেমা সম্পর্কে তেমন জ্ঞান ছিল না। পাওলি আমাকে শিখিয়েছে। ওর ব্যক্তিত্ব, ওর হাসি, ওর ক্যামেরার দিকে তাকানো— সব কিছু ভাল লাগত। আমাকে অনুপ্রেরণা দিত কী ভাবে নিজেকে গ্রুম করতে পারব। আমি অ-স্ট্রাক হয়ে গিয়েছিলাম।
এ সব বলতে পারেননি কেন?
এটা আমার স্বভাবেই নেই। বলার প্রয়োজনও ছিল না। |
প্রতি সপ্তাহে কত |
• রুদ্রনীল: ২ লক্ষ
• অনীক: ২ লক্ষ
• সম্পূর্ণা: ১ লক্ষ ৫০ হাজার |
• কনীনিকা: ১ লক্ষ ৫০ হাজার
• সুদীপ্তা: ১ লক্ষ ৫০ হাজার
• পটা: ১ লক্ষ, • মল্লিকা: ১ লক্ষ |
(ইন্ডাস্ট্রি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী) |
|
কখনও মনে হয়নি যে পাওলিরও হয়তো সেই একই অনুভূতি রয়েছে। কিন্তু তিনিও সেটা প্রকাশ করছেন না?
না। আমি ওকে যতটা চিনি, আমি জানি যে ওর মধ্যে কিছু থাকলে সেটা প্রকাশ পেত। আমি প্রেমে পড়েছিলাম ঠিকই, কিন্তু যত দিন যেতে লাগল আমি বুঝতে পারলাম যে ও আর আমি খুব ভাল বন্ধু, একবার মনে হয়েছিল প্রোপোজ করি। কিন্তু বলতে গিয়েও বলিনি। আস্তে আস্তে, আমি আমার প্রেমিক সত্তাটাকে পিছনে সরিয়ে রাখি।
সেটা কত দিন আগে?
প্রায় দেড় বছর আগের কথা। পাওলিকে আমি চিনি আড়াই বছর হল। তবে ওর দরকারে আজও রাত তিনটের সময় আমাকে ফোন করতে পারে। আমিও সেটা পারি। আমার দিক থেকে অন্তত আমি সারা জীবন এ ভাবেই থাকতে চাইব। তথাকথিত যশরাজ ছবির মতো প্রেমটা আমি করিনি। সে অর্থে বলতে হলে বলব আজ ওর প্রতি প্রেম নেই। শ্রদ্ধা আছে। বিগ বস প্রতিযোগী অনীক (ধর) যশরাজ ঘরানার মতো প্রেম করতে পারে। প্রেমিকার জন্য দুঃখে দরজাতে মাথা ঠুকতে দেখেছি ওকে। জানেন, টাস্কের জন্য পাঠানো পেন্সিল- কাগজ চুরি করে প্রেমিকাকে চিঠি লিখে স্টোর রুমে রেখে আসত। যদি বিগ বস ওটা পড়ে অনীকের প্রেমিকাকে পাঠিয়ে দেন! এ সব আমাকে দিয়ে হবে না।
তবু আপনার একটা ক্যাসানোভা ইমেজ তৈরি হয়েছে। বিগ বস-এ আইরিসের ঘনিষ্ঠ হলে টিআরপি বাড়বে। আর ফিল্ম কেরিয়ারের জন্য পাওলির সান্নিধ্য দরকার। আপনি কি ওপেন রিলেশনশিপে বিশ্বাসী?
না না। একদম না। দু’টো মেয়ের সঙ্গে একসঙ্গে প্রেম করিনি। পাওলি আর আইরিসের সঙ্গে আমি একসঙ্গে প্রেম করতে পারব না। করিওনি সেটা।
আপনার শত্রুরা তো বলেন যে পাওলির সঙ্গে আপনার বন্ধুত্ব করাটা মেনে নেওয়া ছাড়া আর উপায়ও ছিল না। কেরিয়ারের ওই অবস্থায় পাওলির মতো অভিনেত্রীর কাছে প্রেম না পেয়ে যদি বন্ধুত্ব পাওয়া যায়, সেটাও তো অনেক কিছু পাওয়া...
আমি পাওলিকে ছাড়াও অনেক ফিল্ম করেছি। ‘চারুলতা ২০১১’তে অফার ছিল। করতে পারিনি কারণ ‘সাত পাকে বাঁধা’ থেকে ছুটি পাইনি। ‘বেডরুম’ করার পরেও মৈনাক ভৌমিক আমাকে ‘আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ডস’য়ে কাস্ট করেছে। আমার অভিনয় তাঁর ভাল লেগেছিল বলেই সেটা করেছিল। বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে আবার আরও একটা ফিল্মে কাস্ট করেছেন।
যদি হঠাৎ কোনও মেয়েকে দেখে ভাল লেগে যায়? প্রেমে পড়া থেকে আটকাবেন নিজেকে?
এখন কেরিয়ারের দিকে নজর দেব। এই দু’মাসে অনেক পিছিয়ে গিয়েছি। এখন অপেক্ষা করছি ‘অজানা বাতাস’ আর ‘ক্যাকটাস’য়ের মুক্তির জন্য।
আপনি তাহলে সিঙ্গল থাকতে চান?
একদম।
আইরিস তো রাখির দিন আসছেন কলকাতায়। ও যদি হঠাৎ প্রোপোজ করে বসে? ওকে কি বলবেন- ‘না। থাক। তুই রাখি পরিয়ে দে?’
না না। আমার বোন পরাবে রাখি। বাড়ির বাইরে আমি কারও থেকে রাখি পরতে ভালবাসি না। আইরিসকে বন্ধু হিসেবে পছন্দ করি খুব। ওর দিক থেকে ভালবাসা থাকলে সেটাকে আমি কখনও অশ্রদ্ধা করব না। কারণ ভালবাসা খুবই বিরল। তবে এটা বলব যে আমার ওর প্রতি সে রকম কোনও ফিলিংস নেই। আইরিসকে সম্মান করেই বলছি কাউকে ভালবাসলে তার মানে এই নয় যে সে-ও একই ভাবে রেসপন্ড করবে। যে ভালবাসে এটা একান্তই তার দায়িত্ব যে, সে ঠিক করবে কী ভাবে তার ইমোশনগুলোকে ডিল করবে। সে ক্ষেত্রে অন্য মানুষটির কোনও দায় থাকার কথা নয়।
যে আপনাকে ভালবাসে, তাকে এ ভাবে কথাগুলো বলতে পারবেন?
সত্যি কথাটা সত্যি ভাবেই বলা ভাল। আমার এ রকম অনেক মেয়েবন্ধু আছে, যারা আমাকে ভালবেসেছে। কিন্তু আমি তাদের সে ভাবে দেখিনি। পাওলির ক্ষেত্রে আমাকেই ঠিক করতে হয়েছিল কী ভাবে নিজের অনুভূতিগুলো ব্যাকসিটের দিকে ঠেলে দেব। আর সেটা করেছিলাম কারণ আমি জানতাম যে, আমাদের বন্ধুত্বটা অমূল্য সম্পদ। সি ইজ মাই বেস্ট ফ্রেন্ড।
আচ্ছা এই যে পাওলির প্রতি আপনার একতরফা প্রেম আর তার পর বন্ধুত্ব। যে মহিলাদের ভালবাসায় আপনি সাড়া দেননি, তাঁরা কি এটা শুনে বলবেন ‘দ্যাখ কেমন লাগে!’?
(হেসে) সবাই বলবে না। তবে দু’তিন জন সেটা বলতেই পারে!
পুনশ্চ: চলে আসার আগে বিক্রমকে অনুরোধ করলাম যদি একবার আইরিসকে ফোন করে জিজ্ঞেস করেন নমিনেশন নিয়ে। বিক্রম কথা রাখলেন। ফোন তুলেই বললেন: ‘মাইটি, হোয়াটস আপ?’ আমি শুনলাম তুই না কি এভিকশনের পরে সন্দেহ করেছিলি যে আমি তোকে নমিনেট করেছি!’ উলটো দিকে আইরিসের কথা শোনা গেল না। তবে ফোন রাখার পরে বিক্রম বললেন: ‘আইরিস বলছে ওর এভিকশনের পরে ওকে ক্রু থেকে কেউ এটা বলেছিল! তাই মিঠুনদাকে ও সেটা বলেছিল।’
এ দিকে বিক্রমের এই সাক্ষাৎকারের কথা শুনে পাওলি বলছেন, “হিরো হিসেবে ছেলেদের ক্যাসানোভা ইমেজটা থাকা ভাল। আমার ওর প্রতি যে অনুভূতিটা ছিল, সেটাই আছে। আমরা ভাল বন্ধু।” |
|
|
|
|
|