|
|
|
|
নেটবাজারে পুজোর গন্ধ
দরজা খুললেই ডেলিভারি মনপসন্দ জিনিসের। হাতিবাগান কী গড়িয়াহাটের ধাক্কাধাক্কিতে আর না গিয়ে
পুজোর কেনাকাটা এখন অনলাইনে। আক্ষেপ একটাই। দরদামটা যে মাঠে মারা গেল! লিখছেন অদিতি ভাদুড়ি |
দিনের শুরুতে ফেসবুক স্টেটাস চেক করতে বসে পেজ-এর ডান দিকে তাকালেই দেখতে পাবেন হাজারো বিজ্ঞাপন। কী নেই সেখানে! জুতো থেকে ঘড়ি, ইলেকট্রনিক গ্যাজেটস থেকে ঘর-গেরস্থালির জিনিসপত্র। শুধু কি তাই? একটার দামেই কিনে ফেলা যাচ্ছে দু’টো।
রেডি স্টেডি ‘পো’
এত দিনে ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমীতে কী পরছেন তার একটা ব্লু-প্রিন্ট নিশ্চয়ই করে নিয়েছেন। শপিংয়ের প্ল্যানও নিশ্চয়ই রেডি? তবে আর কী। লেগে পড়ুন কেনাকাটিতে। কেনাকাটা করতে দরকার জাস্ট একটা ইন্টারনেট কানেকশন আর বেশ অনেকটা সময়। পায়ে হেঁটে না হলেও প্রতিটা জিনিস মন দিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে হবে তো! যে জিনিসটা কিনবেন, তার সাইজ, বিস্তারিত বিবরণ সব খুঁটিয়ে দেখে নিন। মনপসন্দ হলে পেমেন্ট অপশন বেছে নিয়ে স্রেফ একটা ক্লিক। আপনার কাজ খতম। জমিয়ে পুজোর ফ্যাশনটাও সারা।
কী কিনি কোথায় কিনি
শাল্মীকে অফিসে এত ব্যস্ত থাকতে হয় যে কেনাকাটার সময়টাই পায় না। তোড়ার জন্মদিনও সামনের রোববার। এক বন্ধু পরামর্শ দিল অনলাইন স্টোর থেকে কেনাকাটা করার। পুজোর জন্য বই কিনলে দারুণ ডিসকাউন্ট দিচ্ছে ওরা। খুব জনপ্রিয় এক অনলাইন বুক স্টোরে অর্ডার দেন শাল্মী। যেমন বইয়ের সিলেকশন, তেমনই মুগ্ধ করার মতো ডিসকাউন্ট। যে সব বই দোকানে কিনতে গেলে নাজেহাল হতে হয়, সেগুলোই এই সাইটে পাওয়া যাচ্ছে ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্টে। পছন্দ না হলে বদলানোর সুযোগ তো আছেই!
রাতভোর সঙ্গে তোর
বিকিকিনির হাটে এই সওদা বন্ধ হওয়ার নয়। তাই রাত হোক কী ভোর, পুজোর শপিং এখানে সব সময়ই চালু। পুজোর শপিং মানে ইদানীং প্রাণ ভরে গ্যাজেট কেনাকাটাও বটে। স্টোর-এর সাইটে গিয়ে পছন্দের ক্যাটেগরিটা খালি বেছে নেওয়ার অপেক্ষা। তাই রাতে আচমকা ঘুম ভেঙে বরকে পাশে না পেলে আতিপাতি করে খুঁজবেন না। দেখবেন হয়তো সোফার কোণে ঘাপটি মেরে বসে আইপ্যাডে বা ল্যাপটপে পছন্দের আইফোন বা এসএলআর ক্যামেরার অর্ডার দিতে ব্যস্ত। উইশলিস্টে ৪২ ইঞ্চি এলইডি টিভি বা মাল্টিডোর রেফ্রিজারেটরের চাহিদাও আকাশছোঁয়া। নামী এক অনলাইন স্টোরের মার্কেটিং হেড মঞ্জুলা বেঙ্গালুরু থেকে জানালেন, “পুজোতে কলকাতার বাইরেও গ্যাজেট, হোম অ্যাপ্লায়েন্সেস-এর খুব চাহিদা থাকে। আমরা অর্ডার সামলাতে নাজেহাল হয়ে যাই। তবে প্রচুর অফারও রাখি কাস্টমারদের কথা ভেবে।” |
|
এই দেখো এগিয়ে আছি
জনপ্রিয় এক অনলাইন স্টোরের গুরগাঁও অফিসের ওয়্যারহাউস ইনচার্জ অমরজ্যোত সিংহ কিছুটা এ রকমই দাবি করলেন। পুজোর জন্য এখন দিনপ্রতি তাদের সাইটে কম করে সাত-আট হাজার অর্ডার রেজিস্টার্ড হচ্ছে। গুরগাঁও ছাড়াও, দ্বারকা, মুম্বই মিলিয়ে দেশের বহু জায়গাতেই এদের ওয়্যারহাউজ রয়েছে। রয়েছে অসংখ্য পিক আপ স্টোরও যেখান থেকে এদের সেনাবাহিনী প্রায় প্রতি দিনই ব্যাকপ্যাকে মালপত্র বেঁধে কাস্টমারদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেয়। কিন্তু জামা বা জুতো তো সাইজে গড়বড় করতে পারে! তখন? অমরজ্যোত কথায় কথায় জানালেন, “আমাদের একটা সার্ভিস ডোমেইন আছে যারা আপনার জিনিস এক্সচেঞ্জ করে। এরা যেমন আপনার বাড়ি গিয়ে মাল দিয়ে আসবে, তেমনই আপনি সঙ্গে সঙ্গে ট্রায়াল দিয়ে চেক করে নিতে পারবেন ঠিক জিনিসটা পেলেন কিনা। না হলে ফেরত। তবে পছন্দসই জিনিসটা বদলি হয়ে পেতে আরও দিন দু’য়েক অপেক্ষা করতে হবে আপনাকে।” তা এত অফার, বাইরে গিয়ে কেনার ঝক্কি নেই, আপনারা কি দৌড়ে তা হলে এগিয়ে। ঠিক সহমত নন অমরজ্যোত। “দিস শপিং ট্রেন্ড ইজ গ্রোয়িং স্টেডিলি। তবে শপিং মল-এর সঙ্গে তুলনার দরকার নেই। ইট’স আ ফ্যাক্ট যে যাঁদের হাতে সময় খুব কম, যাঁরা খুব চ্যালেঞ্জিং শিডিউলে কাজ করেন, তাঁরা আমাদের কাছে কেনাটা খুব প্রেফার করছেন।”
নাই বা হলেন টেক স্যাভি
পূর্ণা বসু। আটপৌরে এই ভদ্রমহিলা জীবনে কখনওই নেটচক্করে পড়েননি। তবে অনলাইন শপিং করতে ওস্তাদ। বলেন, “ছেলেই আমাকে ডেকে দেখায়। অফারগুলোও কী ভাল দেয় না? ঠাসাঠাসি ভিড়ে মার্কেটিং করতে আর ভাল লাগে না। পুজোতেও এখানেই উপহার কিনব ভাবছি।” বছর পঞ্চাশের অনুরাধা বাগচি কিছু দিন আগেই এক জনপ্রিয় অনলাইন স্টোর থেকে চশমার ফ্রেম কিনলেন। “আপনার কম্পিউটার ওয়েবক্যামে থ্রি-ডি ফরম্যাটে দেখে নিতে পারবেন ফ্রেমটা চোখে দিয়ে কেমন লাগছে নিজেকে। অন্তত পঞ্চাশ রকম ভ্যারাইটি পেয়ে যাবেন। কী দারুণ ব্যাপার বলুন তো?” সহাস্যে বললেন তিনি।
কম্পিউটার মনিটরই শো-উইন্ডো
কস্টিউম জুয়েলারি হোক বা আস্ত সোনা-হিরের গয়না। অনলাইনেই কিনছেন অনেকে। কলেজপড়ুয়া দিব্যানী বাবা-মা’র অ্যানিভার্সারিতে পয়সা জমিয়ে গয়না কিনে দিয়েছেন মাকে। “কী দারুণ কালেকশন! পছন্দ হবেই। দামও কিন্তু যথেষ্ট রিজনেবল।” বহুজাতিক নানান অলঙ্কার বিপণি বাড়ি বসেই অনলাইনে গয়না কেনার সুযোগ করে দিচ্ছেন ক্রেতাদের। এমনই এক বহুজাতিক সংস্থার এক্সিকিউটিভ শতাব্দী বললেন, “আমাদের সাইটে ক্রেতারা কেনাকাটা করতে পারেন। তবে স্টোরের মতো ভ্যারাইটি পাবেন না। আর ডেলিভারি নিতে গেলে আপনার লোকেশনের কাছাকাছি একটা স্টোরে এসে গয়নাটা আপনাকে কালেক্ট করে নিতে হবে।” পুজোর জন্যও অঢেল অফার দিচ্ছেন এঁরা।
ফিউচার ভ্যালু রিটেল লিমিটেডের বিজনেস হেড মণীশ অগ্রবাল একটা অন্য রকম তথ্য দিলেন। বললেন, “আমাদের অনলাইন সাইটে কেনাকাটা করছেন এমন বেশির ভাগ কাস্টমারই কিন্তু মেট্রো সিটির বাইরে থাকেন। আসলে যাঁরা শহরে থাকেন, তাঁদের মল বা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর্সে অ্যাকসেসিবিলিটি অনেক বেশি। বাইরে যাঁরা আছেন, তাঁরাও কিন্তু এঁদের মতোই ব্র্যান্ডেড প্রোডাক্টস ব্যবহার করতে চান। বা অনেক সময় যে জিনিসটা তাঁরা খুঁজছেন, সেটা পেতে অনলাইন সাইটগুলোই এঁদের ভরসা। তাই পার্সেন্টেজের দিক থেকে অনলাইন কেনাকাটায় এঁরা বেশ এগিয়ে।”
দরদাম না করতে পারার দুঃখটা থেকেই যাবে। তবে আরাম করে ঘরে বসে কেনাকাটার মজাই বা কম কী? |
|
|
|
|
|