বারাসতের তৃণমূল নেতা প্রদীপ ঝা-এর অস্বাভাবিক মৃত্যুর ঘটনায় এক ট্যাক্সিচালককে গ্রেফতার করল হেয়ার স্ট্রিট থানার পুলিশ। ধৃতের নাম অজয় যাদব (৩৫)। বাড়ি টালিগঞ্জে।
গত ৩ অগস্ট ভোরে স্ট্র্যান্ড রোডের একটি রেস্তোরাঁর সামনের ফুটপাথ থেকে প্রদীপের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছিল। প্রদীপের মা পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, তাঁর ছেলেকে খুন করা হয়েছে। এ-ও জানানো হয়, ২ অগস্ট সকালে প্রদীপ জয়দেব নামে এক বন্ধুর সঙ্গে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন। ৩ অগস্ট জয়দেব প্রদীপের বাড়িতে গিয়ে প্রদীপ রাতে বাড়ি ফিরেছেন কি না জানতে চান। তিনি জানান, ২ অগস্ট সন্ধ্যার পর থেকে প্রদীপের সঙ্গে আর তাঁর যোগাযোগ হয়নি। তখনই প্রদীপবাবুর পরিবারের সন্দেহ হয়, এটি খুনের ঘটনা। তবে ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট দেখে পুলিশের অনুমান, প্রদীপবাবু হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তাঁর দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। ধস্তাধস্তির চিহ্নও মেলেনি।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ২ অগস্ট দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত প্রদীপ ও জয়দেব ডেকার্স লেনের একটি পানশালায় ছিলেন। রাত সাড়ে ১০টার পরে তাঁরা সেখান থেকে বেরিয়ে যান। পুলিশের দাবি, ধৃত ট্যাক্সিচালক অজয় জেরায় জানান, ওই রাতে জয়দেব বারাসত যাবেন বলে অজয়ের ট্যাক্সিতে ওঠেন। জয়দেব নেশাগ্রস্ত ছিলেন। তবে তাঁর সঙ্গে প্রদীপ ছিলেন না। অজয় জয়দেবকে বলেন, বারাসত যাওয়ার জন্য তাঁকে ১০০০ টাকা দিতে হবে। জয়দেব রাজি হয়ে যান।
পুলিশের দাবি, জেরায় ট্যাক্সিচালক অজয় জানিয়েছেন, দমদম অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরির কাছে জয়দেব গাড়ি থামাতে বলে তাঁকে এটিএম কার্ড ও তার পিন নম্বর দিয়ে ৫০০০ টাকা তুলে আনতে বলেন। টাকা নিয়ে এলে জয়দেব অজয়কে ভাড়ার বাকি পাঁচশো টাকা দেন। বাকি টাকা পকেটে রাখেন। কিন্তু ট্যাক্সিতে ওঠার পরে অজয় জয়দেবের পকেট থেকে ৪৫০০ টাকা ও এটিএম কার্ড কৌশলে সরিয়ে নেন। তার পরে ধাক্কা মেরে জয়দেবকে গাড়ি থেকে ফেলে দেন। তদন্তে পুলিশ জেনেছে, ওই এটিএম কার্ড জয়দেবের স্ত্রী-র এবং সেটি হাতে পেয়ে অজয় খিদিরপুর, বাবুবাজার ও ডায়মন্ডহারবার রোডের বিভিন্ন এটিএম থেকে কয়েক দফায় সাড়ে ১৭ হাজার টাকা তোলেন।
কিন্তু তা হলে ২ অগস্ট রাতে প্রদীপ কোথায় ছিলেন? এ ব্যাপারে এখনও ধন্দে পুলিশ। তবে পুলিশ জানিয়েছে, মৃত প্রদীপের পায়ে পরিচ্ছন্ন সাদা মোজা ছিল, জুতো ছিল না। তা দেখে পুলিশের অনুমান, কোনও এক জায়গায় প্রদীপ জুতো খুলে ঢুকেছিলেন। সেখানেই তিনি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হন বলে ভাবছে পুলিশ। তিনি মারা গিয়েছেন দেখে ভয় পেয়ে তাঁকে অন্য গাড়ি করে স্ট্র্যান্ড রোডে ফুটপাথে ফেলে দিয়ে যাওয়া হতে পারে।
|