শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (এসজেডিএ)-র অন্দরে এবার জোড়াপানি নদী সংস্কারে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। সংস্থা সূত্রের খবর, অফিসার-ইঞ্জিনিয়রদের একাংশ চান, ওই ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করে তদন্ত পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হোক। কিন্তু, অন্য পক্ষ বিষয়টি নিয়ে ধীরে চলার পক্ষপাতি। কিন্তু, অপসারিত চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, বোর্ড সদস্যদের কয়েকজন বিষয়টি নিয়ে দ্রুত এফআইআর করার জন্য মত দিলেও অন্যপক্ষ এগোতে চাইছেন না। প্রসঙ্গত, এসজেডিএ-এর অন্য চারটি প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। সেই মামলায় ইতিমধ্যেই ৩ জন ইঞ্জিনিয়র সহ ১০ জন গ্রেফতার হয়েছেন। সেই মামলায় প্রাক্তন চেয়ারম্যান-সহ ৪ জন সদস্যকে জেরা করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন, দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, তৃণমূলের জলপাইগুনি জেলা সবাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করা হয়। প্রক্তন সিইও ততা মালদহের বর্তমান ডিএম গোদালা কিরণ কুমারের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে রাড্য পুলিশের ডিজির কাছে অনুমতিও চাওয়া হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, শীঘ্রই চার্জশিট দিতে চাইছেন তদন্তকারী অফিসাররা। সে জন্য এ বার বাকি সদস্যদের একাংশকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে চাইছে পুলিশ। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “বাকিদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।”
মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি, বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরির কাজে ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ পুলিশকে জানিয়েছিল এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী। শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে বসানো ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা মান এবং বরাত প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তা নিয়ে তদন্তও শুরু হয়। এরই মাঝে গভীর রাতে ক্যামেরাগুলি বদলে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। পুলিশে এসজেডিএ’র তরফে অভিযোগ জানানো হয়। ওই সমস্ত অভিযোগের তদন্তে নেমে পুলিশ এসজেডিএ’র তিন জন বাস্তুকার এবং ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার এবং কর্মী-সহ মোট ১০ জনকে এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের জেরা করে দফতরের বাস্তুকার এবং একাধিক ঠিকাদার সংস্থার কণধাররা যোগসাজশ করেই বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। প্রকল্পগুলির অধিকাংশই বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই বোর্ড মিটিংয়ে পাস করানো হত। সে ক্ষেত্রে বোর্ডের সদস্যদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সে ব্যাপারেই সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে শুরু করেছে পুলিশ। এমনকী সদস্যদের একাংশ যোগসাজশ-এর অংশীদার রয়েছে কি না বা তার বাইরেও কেই জড়িত কি না পুরো বিষয়টি পুলিশ খতিয়ে দেখেছে। অন্য দিকে প্রশ্ন উঠলেও সে ব্যাপারে এখনও পুলিশে অভিযোগ না জানানোয় তা নিয়ে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। বিশেষ করে চেয়ারম্যান থাকার সময়ই ওই কাজ নিয়ে প্রশ্ন তুলে রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এ ব্যাপারে তদন্ত দাবি করেছিলেন। তিনিও চান পুলিশে এ ব্যাপারে অভিযোগ জানানো হোক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবকেও তিনি এ ব্যাপারে চিঠি লিখে ঘটনার তদন্ত চেয়েছিলেন। তার পরেও কেন পুলিশে অভিযোগ জানাতে দেরি করা হচ্ছে সেই প্রশ্ন উটেছে এসজেডিএ’র অন্দরেই। রুদ্রবাবু দাবি করেছিলেন তাঁকে অন্ধকারে রেখে দফতরের আধিকারিকেরা ওই কাজ করেছেন। শুধু তাই নয় সামান্য কিছু কাজ করলেও প্রায় ৯ কোটি টাকা নদী সংস্কার খাতে ঠিকাদার সংস্থা নন্দী কনস্ট্রাকশনকে মিটিয়েও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ওই সংস্থার কর্ণধার ধৃত শঙ্কর পালের দুই ভাই এবং তাঁর ভাইপো। বকলমে শঙ্করবাবুই ওই সংস্থা চালাতেন বলে অভিযোগ। |