রাজনৈতিক সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ইসলামপুর ও আলিপুরদুয়ার। ইসলামপুর থানার মাটিকুণ্ডায় মঙ্গলবার দুপুরে সিপিএম সমর্থকদের উপরে তির, গুলি ও বোমা ছুঁড়ে কংগ্রেসিরা হামলা চালায় বলে অভিযোগ। পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় সাত জন সিপিএম সমর্থক আক্রান্ত হয়েছেন। তাঁদের একজনের পায়ে তির ও গুলি লেগেছে। অন্যদিকে, গত সোমবার রাতে আলিপুরদুয়ার থানার নোনাই গ্রামে এক তৃণমূল কর্মীকে হামলার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। বাঁশের আঘাতে জখম এক তৃণমূল সমর্থককে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ইসলামপুরের মাটিকুণ্ডা এলাকার সিপিএম সমর্থকদের অভিযোগ, ভ্যানে বোঝাই করে পাট নিয়ে যাওয়ার সময় কংগ্রেসিরা তাদের সমর্থকদের বাধা দেয়। এর প্রতিবাদ করলেই হামলা শুরু হয় বলে অভিযোগ। সিপিএমের দাবি তাদের সমর্থকদের উপর বোমাও ছোঁড়া হয়। এই ঘটনায় ৩ মহিলা সহ ৭ জন জখম হয়েছে বলে সিপিএম সূত্রে দাবি করা হয়েছে। জখমদের একজনের পায়ে তির এবং ছররা গুলি লেগেছে বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে। সিপিএম-এর প্রাক্তন উপপ্রধান মহমম্মদ দাবিরুদ্দিনও জখম হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। যদিও কংগ্রেস হামলার বিষয়টি অস্বীকার করে পাল্টা সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে বাড়ি ভাঙচুরের অভিযোগ করেছে।
ইসলামপুরের এসডিপিও সুবিমল পাল বলেন, “এলাকাতে পুলিশ পিকেট বসানো রয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।” সিপিএম সমর্থক আহত এক তরুণী রূপসানা খাতুন বলেন, “আমাদের পাট রাস্তায় আটকে, হামলা চালানো হয়েছে।” সিপিএমের ইসলামপুর জোনাল কমিটির সদস্য আবদুল সাত্তার বলেন, “এলাকাতে কংগ্রেসের ওই দুষ্কৃতীরা বেশ কিছু দিন ধরেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল। বিষয়টি পুলিশকে জানালেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।” জেলা কংগ্রেস নেতা জাকির হুসেন বলেন, “এলাকায় গোলমালের জন্য সিপিএম বহিরাগতদের নিয়ে এসেছে। এলাকার পঞ্চায়েতটি সিপিএম এর দখলে থাকায় ওরা সন্ত্রাস শুরু করেছে।” যদিও কংগ্রেসের দাবি, তাদের এক সমর্থক মেয়ের বিয়ের সমন্ধ করতে এক সিপিএম সমর্থকের বাড়িতে গেলে, তাদের উপর হামলা চালানো হয়। তাদের বাড়ি-ঘরও ভাঙচুর করা হয় বলে অভিযোগ। যদিও সিপিএমের দাবি কংগ্রেসি পরিবার মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। অন্যদিকে, সিপিএম ছেড়ে তৃণমূল কংগ্রেস যোগ দেওয়ায় এক রিকশা চালক যুবককে মারধর করার অভিযোগ উঠেছে সিপিএম সমর্থকদের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের অভিযোগ, পেশায় রিকশা চালক নফুরুউদ্দিন মিঞাকে সিপিএমের এক প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যের নেতৃত্বে মারধর করা হয়। জখম তৃণমূল কর্মীকে আলিপুরদুয়ার মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে, অভিযুক্ত সিপিএম নেতাকে গ্রেফতার করতে গেলে এলাকার মহিলাদের বাধায় তাকে গ্রেফতার করা যায়নি। তবে অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবিতে রাতেই তৃণমূল কর্মীরা পুলিশের গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। মঙ্গলবার সকালেও এলাকায় উত্তেজনা ছিল। মঙ্গলবার দুপুরে সিপিএম সমর্থকরা অভিযুক্ত কাজল দাস নির্দোষ বলে দাবি করে আলিপুরদুয়ার থানায় পাল্টা বিক্ষোভ দেখায়। কাজলবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই। গত সোমবার সন্ধ্যায় আমি বাড়ি ফিরছিলাম। ওই সময় নফিরুদ্দিন আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে। আমি প্রতিবাদ করেছি মাত্র। অথচ তৃণমূল রাজনীতি শুরু করেছে। ওঁর স্ত্রীকে দিয়ে মিথ্যে অভিযোগ করিয়েছে।” নফুরুদ্দিন মিঞা বলেন, “সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই কাজল দাস আমাকে হুমকি দিতে শুরু করে। আমাকে রাস্তায় পেয়ে বাঁশ দিয়ে মারধর করে।” আলিপুরদুয়ারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আকাশ মেঘারিয়া বলেন, “তদন্ত শুরু হয়েছে।” |