শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কতৃর্পক্ষের নানা প্রকল্পে দুর্নীতির মামলায় সংস্থার প্রাক্তন সিইও তথা বর্তমানে মালদহের ডিএম গোদালা কিরণ কুমারকে জেরা, অভিযুক্ত করা বা গ্রেফতারের জন্য ডিজিকে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তা কেন মামলার কেস ডায়েরিতে নেই, প্রশ্ন উঠল কোর্টে। সোমবার শিলিগুড়ি আদালতে এসজেডিএ-এর আর্থিক দুর্নীতি মামলার শুনানির সময়ে ধৃত বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকারের আইনজীবী পার্থ চৌধুরী বলেন, “মামলার শুরু থেকেই এসজেডিএ’র তৎকালীন সিইও’কে পুলিশ ধরছে না কেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। পরে পুলিশের তরফে তৎকালীন সিইও’কে গ্রেফতারের অনুমতি চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়। অথচ ‘কেস ডায়েরি’তে বিষয়টির উল্লেখ নেই।” পুলিশ সূত্রের খবর, মামলার তদন্তকারী অফিসার সেলিমা লামা চিঠি কেস ডায়েরিতে নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছেন।
এ দিন ওই মামলায় ধৃতদের মধ্যে আট জনকে আদালতে তোলা হয়। তাঁরা হলেন, দুই বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার ও সপ্তর্ষি পাল, ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শঙ্কর পাল, নিউ ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্ণধার অজয় মৈত্র এবং তাপস বসু, ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ছেলে দেবব্রত, তাঁদের সংস্থার কর্মী অমলকৃষ্ণ সাহা। ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি প্রকল্পের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগে একাধিক মামলা রুজু হয়েছে। আগে যে মামলায় তাঁদের ধরা হয়েছে, তার জেরা শেষ। এ দিন পুলিশ অন্য দুর্নীতির মামলায় ধৃতদের গ্রেফতার দেখায়। ভারপ্রাপ্ত শিলিগুড়ি অতিরিক্ত মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট সন্তোষ পাঠক তাঁদের ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। |
অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় |
অমলকৃষ্ণ সাহা |
দেবব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় |
মৃগাঙ্কমৌলি সরকার |
অজয় মৈত্র |
শঙ্কর পাল |
সপ্তর্ষি পাল |
তাপস বসু |
|
|
আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত বাস্তুকার মৃগাঙ্কবাবু বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার সঙ্গে যোগসাজশ করে তাদের কাজ পাইয়ে দিতেন বলে পুলিশের সন্দেহ। শিলিগুড়িতে একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রেও ঠিকাদাররা তাকে টাকা দিয়েছেন বলেও পুলিশের সন্দেহ। বিভিন্ন জায়গায় জমিও কিনে রাখতে চেয়েছিলেন তিনি। জমি কিনতে শঙ্করবাবু জমির মালিককে মৃগাঙ্কবাবুর হয়ে টাকাও দিয়েছিলেন। শঙ্কর পালের আইনজীবী অখিল বিশ্বাস আদালতে জানান, শঙ্কর পালের বিরুদ্ধে যে টাকা লেনদেন করার অভিযোগ করা হয়েছে, সে ব্যাপারে শঙ্করবাবুর সই রয়েছে এমন কোনও নথি নেই। তিনি বলেন, “জমি কেনার জন্য যাঁকে টাকা দেওয়া হয়েছে, তাঁকে পুলিশ শঙ্করবাবুর বিরুদ্ধে সাক্ষী সাজাতে চাইছে। অথচ ওই ব্যক্তি টাকা নিয়ে থাকলে তিনিও দোষী।” নতুন করে একের পর এক মামলায় গ্রেফতার করে পুলিশ বিষয়টি দীর্ঘায়িত করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
এসজেডিএ-এর নানা প্রকল্পের অন্তত ৬০ কোটি টাকা কার্যত কাজ না-করেই হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগে সংস্থার বর্তমান চিফ এগজিকিউটিভ শরদ দ্বিবেদী চারটি অভিযোগ দায়ের করেন। ইতিমধ্যে সংস্থার চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে পদ থেকে অপসারণ করা হয়। ওই মামলার ব্যাপারে রুদ্রনাথবাবু ছাড়াও তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্কর মালাকার, জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করেছে পুলিশ। এঁরা সকলেই এসজেডিএ-এর সদস্য। প্রাক্তন সিইও-র বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করতে রাজ্য পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়ে অনুমতি চেয়েছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার কে জয়রামন। তিনি বলেন, “যা আইনি পদক্ষেপ করা দরকার সেটাই করছি।”
|