সেতুর পায়ে বালি সরছে, মাফিয়া রুখতে চায় রাজ্য
বৈধ ভাবে বালি তোলার জেরে রাজ্যে প্রায় ১০০টি সেতু ও রাস্তা বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। বর্ধমানের পলেমপুরের কৃষক সেতু থেকে শুরু করে কলকাতা ছোঁয়া বিবেকানন্দ সেতুর অবস্থা সঙ্গীন। রাজ্যের অন্তত ২৪৮টি এলাকায় বালি তোলা হচ্ছে বলে চিহ্নিত করেছে সেচ দফতর।
এই নদী-চুরি আটকাতে অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। সদ্য উত্তরপ্রদেশে বালি মাফিয়াদের কড়া হাতে সামলাতে গিয়ে কিছু হর্তাকর্তার চোখের বালি হয়েছেন আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপাল। কিন্তু এই রাজ্যে আপাতত সেচ দফতর সমস্ত সেতু ও রাস্তার তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে ওই তালিকা পাঠানো হবে। সিআইডি কর্তাদেরও বালি মাফিয়াদের বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মহাকরণ সূত্রের খবর, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ ও সেচমন্ত্রীর নোট পাওয়ার পরে বালি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্রিয় হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর দফতর থেকে বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভুমের পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে প্রায় আড়াইশোটি জায়গা থেকে বালি তোলা হচ্ছে, সেই সব এলাকায় নদীখাতের অবস্থা ভয়াবহ বলে সেচ দফতরের একটি সাম্প্রতিক রিপোর্টে দেখা যাচ্ছে।

জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতুর কাছে কারালা ঘাটে
অবৈধ ভাবে তোলা হচ্ছে বালি। ছবি: উদিত সিংহ
মহাকরণ ও সেচ দফতরের কাছে খবর, ছ’টি জেলার বেশ কয়েকটি ব্লকে বালি মাফিয়াদের রমরমা। সেই ব্লকের ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক এবং বিডিওদের সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকের অফিসে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। গোটা দামোদর উপত্যকা জুড়ে বেআইনি ভাবে বালি তোলা চলেছে। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে বালি তোলায় আশেপাশের সেতু ও বাঁধ ভেঙে যে কোনও সময়ে বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। নদীর পাড়ের ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাটেরও ক্ষতি হচ্ছে। বর্ধমানে পাল্লা রোড, ইদিলপুর, জামালপুরের হরেকৃষ্ণ কোঙার সেতু, হুগলির আরামবাগে কালীপুর সেতু, নদিয়ার কল্যাণী থেকে হুগলি যাওয়ার ঈশ্বর গুপ্ত সেতু তালিকায় রয়েছে।
শতাধিক সেতু ও রাস্তার যে তালিকা সেচ দফতর তৈরি করছে, তার সংস্কারে কয়েকশো কোটি টাকা খরচ হবে বলে মনে করছেন সেচ কর্তারা। তাঁদের মতে, বালি চুরিতে রাজস্বের ক্ষতি তো হয়েইছে, সরকারি সম্পত্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেচমন্ত্রী বলেন, “দামোদরের বাঁ পাড়ের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। তার ফলে ওই এলাকার সেতু-রাস্তার ক্ষতিও বেশি।”
সিআইডি সূত্রের খবর, তাদের প্রাথমিক অনুসন্ধান রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। কোন জেলায় কারা অবৈধ বালি খাদানের ব্যবসা করে, রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বাহিনীকে সেই বিষয়ে খোঁজ নিতে বলা হয়েছে। সেচ কর্তারা অবশ্য দাবি করছেন, ২০০২ সালে হওয়া ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল মাইনর মিনারেল অ্যাক্ট’-এ বেশ কিছু গলদ রয়েছে। সেই ফাঁকফোকর দিয়ে কেউ কেউ গলে যেতে পারে।
রাজীববাবুর দাবি, “মাফিয়াদের সুযোগ করে দিতে বামফ্রন্ট সরকার ওই আইনে অনেক ফাঁক রেখেছিল। তবে এ ভাবে চলতে পারে না।” তাঁর নির্দেশে ইতিমধ্যেই সক্রিয় হয়েছে হাওড়া জেলা প্রশাসন। গত শনিবার আমতা ও বাগনান ব্লকে রূপনারায়ণ ও দামোদরে চলা পাঁচটি অবৈধ বালি খাদ বন্ধ করা হয়েছে। সেচমন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গোটা বিষয়টি নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.