খুঁটির জোরে কোষাগার রক্ষার ছক বণ্টন সংস্থার
ক দিকে বিপুল অনাদায়ী বিল, অন্য দিকে আয় ছাপানো ব্যয়ের বোঝা দুইয়ে মিলে হিমসিম। পাহাড়প্রমাণ রাজস্ব ঘাটতির তলায় কার্যত চাপা পড়ার দশা রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানির। পরিত্রাণের পথ খুঁজতে মরিয়া কর্তারা এ বার নিজেদের জায়গা ভাড়া দিয়ে আয় বাড়াতে চাইছেন। ওঁদের পরিকল্পনা, বণ্টন কোম্পানির অফিস বা সাবস্টেশনের ছাদে বিভিন্ন কর্পোরেট সংস্থাকে বিজ্ঞাপন বসাতে দেওয়া হবে। একই কাজে লাগানো হবে বিদ্যুতের খুঁটিগুলোকেও।
এবং এর বিনিময়ে যা ভাড়া মিলবে, মুমূর্ষু কোষাগারকে তা কিছুটা হলেও অক্সিজেন জোগাবে বলে আশা করছেন কর্তারা। এই মুহূর্তে ওঁরা কার্যকরী মূলধন জোগাড় করতে নাজেহাল। কেন্দ্রীয় গ্রামীণ বিদ্যুদয়ন নিগম থেকে পাঁচশো কোটি টাকা ধার নিতে হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মহলের আশঙ্কা, হাল না-বদলালে বছর শেষে রাজস্ব ঘাটতির অঙ্ক আড়াই হাজার কোটি টাকা ছুঁয়ে ফেলবে।
হালবদলের লক্ষ্যে তাই ছক ভেঙে বেরোনোর প্রয়াস। এমনিতেই বকেয়া বিল আদায়ে বিস্তর খামতি। এ জন্য বেসরকারি সংস্থা নিয়োগের প্রস্তুতি চললেও ফল পেতে সময় লাগবে। উপরন্তু মগরাহাটে হুকিং-বিরোধী অভিযান ঘিরে গণ্ডগোলের পরে বিদ্যুৎ-চুরি রুখতে পুলিশ-প্রশাসন কার্যত হাত গুটিয়ে নিয়েছে। এমতাবস্থায় আয়ের নতুন উৎস সন্ধান ছাড়া পথ দেখছেন না বণ্টন-কর্তারা। বণ্টন সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাজেশ পাণ্ডের কথায়, “বাজারে পড়ে থাকা টাকা তুলতে কিছু কড়া
পদক্ষেপ হয়েছে। তাতে কাজও হচ্ছে। তবে আয় বাড়াতে নতুন উদ্যোগের কথাও ভাবা হচ্ছে।”
সেই ‘নতুন পরিকল্পনার’ই অঙ্গ হিসেবে স্থির হয়েছে, কোম্পানির বিভিন্ন বড়-মাঝারি সাবস্টেশন ও অফিসবাড়ির ছাদে, এমনকী বিদ্যুতের খুঁটিতেও কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে প্রচার-বিজ্ঞাপন লাগাতে দেওয়া হবে, নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে। বস্তুত বিদ্যুতের খুঁটি বিজ্ঞাপনের আদর্শ জায়গা হতে পারে বলে মনে করছেন বণ্টন-কর্তৃপক্ষ। তাঁরা বলছেন, এখনকার প্রচারসর্বস্ব যুগে কর্পোরেট সংস্থারা একটা বড় হোর্ডিং বা ব্যানার লাগানোর জন্য ‘চোখে পড়ার মতো’ জায়গা খুঁজে বেড়ায়। শহরে কিংবা হাইওয়ে বরাবর দীর্ঘ পথে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের বড় বড় খুঁটি তাদের চাহিদা অনেকটা মেটাতে সক্ষম। উপরন্তু গুরুত্বপূর্ণ নানা জায়গায় সাবস্টেশন সংলগ্ন উদ্বৃত্ত জমি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনের জন্য ভাড়া দেওয়া যেতে পারে। একই ভাবে সাবস্টেশন বা অফিসবাড়ির ছাদকেও ব্যবহার করা যায়। “এতে কোনও খরচ নেই। অথচ আয় ভালই।” মন্তব্য এক বণ্টন-কর্তার।
পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তোড়জোড় শুরু হয়েছে। বিদ্যুৎ ভবনের খবর, এই পথে আয় বাড়াতে হলে ঠিক কী কী করা দরকার, তার রূপরেখা বানাতে সংস্থার পদস্থ কর্তাদের নিয়ে গড়া হয়েছে ছ’সদস্যের কমিটি। তারা উদ্যোগটি সম্পর্কে বিভিন্ন মহলের, বিশেষত প্রচার-বিশেষজ্ঞদের মতামত নেবে, এবং ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেবে। সেই মতো এগোনো হবে।
পাশাপাশি বকেয়া বিলের কয়েক হাজার কোটি টাকা আদায়ের কাজটা যে বণ্টন কোম্পানির নিজস্ব পরিকাঠামো দিয়ে সম্ভব নয়, তা বুঝে বেসরকারি হাতে ওই ভার ছাড়ার সিদ্ধান্ত প্রায় পাকা। বিদ্যুৎ-সূত্রের খবর: চলতি মাসে বণ্টন পরিচালন পর্ষদের বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদিত হলে টেন্ডার ডেকে এজেন্সি নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে। এক কর্তা জানান, বিল আদায় বাড়াতে রাজ্যকে পাঁচটি জোনে (কলকাতা, বর্ধমান, শিলিগুড়ি, বহরমপুর ও মেদিনীপুর) ভাগ করে পাঁচ ডিরেক্টরকে বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লাইন কাটার পুরনো ব্যবস্থাও ফের চালু হয়েছে কিছু জায়গায়।
রাজ্য প্রশাসন অবশ্য মনে করে, নজরদারির দীর্ঘলালিত গলদেই বিল আদায়ের ব্যবস্থা নড়বড়ে। মহাকরণের নির্দেশে বণ্টন সংস্থার উচ্চপদে রদবদলও হয়েছে। সংস্থার নতুন ম্যানেজিং ডিরেক্টর হতে চলেছেন নারায়ণস্বরূপ নিগম, যিনি বর্তমানে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক। সংবহন সংস্থার চিফ ইঞ্জিনিয়ার রঞ্জিত মজুমদারকে বণ্টনের ডিরেক্টর (ডিস্ট্রিবিউশন) করা হয়েছে। কর্তব্য সম্পর্কে বিদ্যুৎকর্মীদের সচেতন করতে তৃণমূল ইউনিয়ন ১৭ অগস্ট বিদ্যুৎ ভবনে এক সম্মেলন করছে। সংগঠনের নেতা অরিজিৎ দত্তের কথায়, “আয় বাড়ানোর সঙ্গে সঠিক মানের পরিষেবা দেওয়াও আমাদের লক্ষ্য।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.