বালি মাফিয়াদের দাপট, মমতাকে নোট সেচমন্ত্রীর
দী থেকে অবৈধ ভাবে বালি এবং মাটি অবাধে তোলার ফলে বদলাচ্ছে নদীর গতিপথ। পাড় ভাঙছে নদী। সমস্যা হচ্ছে বাঁধে। মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে সেতু, নদী-পাড়ের রাস্তার। অবৈধ ভাবে বালি ও মাটি তোলা রুখতে রাজ্যের সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের গত ২৬ জুলাই চিঠি দিয়েছেন সেচ দফতরের যুগ্ম সচিব। কিন্তু তাতেও কমেনি বালি-মাফিয়াদের দাপট।
এ বার নোট পাঠিয়ে গোটা বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন সেচমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। সঙ্গে অবৈধ বালি তোলা এবং পাচার রুখতে সেচ দফতরের তরফে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।
বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, নদিয়া, মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন এলাকায় কোথাও নদীর পাড় ও চর থেকে মাটি কেটে, কোথাও বালি তুলে চলছে মাফিয়া-রাজ। মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে বিভিন্ন জেলা থেকে বালি ও মাটি মাফিয়াদের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ জমা পড়েছে। সেচ দফতরের আধিকারিকেরা সেই সব অভিযোগের তদন্ত নেমে হিমসিম খাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, সেচ দফতরের ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ (এনওসি) ছাড়াই নাম মাত্র টাকা কর নিয়ে নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি দিচ্ছে স্থানীয় প্রশাসন। অথচ, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে মাফিয়ারা সরকার নির্ধারিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি বালি তুলছে। তাদের জন্য বছরে প্রায় হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রাজ্য সরকারের।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলাশাসকের কাছে পাঠানো সেচ দফতরের যুগ্ম সচিবের চিঠির প্রতিলিপি।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় নদী থেকে বালি তোলার প্রক্রিয়ায় সেচ দফতরকে আরও বেশি করে জড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে গত ৫ অগস্ট পাঠানো সেচমন্ত্রীর নোটে। দু’পাতার নোটে এগারোটি বিষয় উল্লেখ করেছেন মন্ত্রী।
তার অন্যতম হল—
ক) সেচ দফতরের জেলার এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের কাছে নদী থেকে বালি-মাটি কাটার লিজ-প্রাপ্তদের তালিকা পরীক্ষার জন্য পাঠানো। কারও অবৈধ খননের জন্য নদীর পাড়, বাঁধের ক্ষতি হলে, তার লিজ এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারদের সুপারিশে খারিজ করা।
খ) সেচ দফতরের ‘এনওসি’ ছাড়া নতুন করে বালি বা মাটি খাদানের অনুমতি না দেওয়া।
গ) সেচ দফতরের হিসেবে কোনও ‘জীর্ণ’ সেতুর উপরে ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা।
ঘ) নদীর পাড় দিয়ে ট্রাক চলাচলে নিষেধাজ্ঞা। অবৈধ খনন রুখে রাজস্ব বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়া হয়েছে ওই নোটে।
বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা স্কুলশিক্ষক শক্তিপদ আশ দীর্ঘদিন ধরেই বালি-মাফিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। বেশ কয়েকবার আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। তাঁর ক্ষোভ, “প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গেই এলাকার বালি মাফিয়াদের দহরম-মহরম রয়েছে। তাই অন্যায় হচ্ছে জেনেও কেউ কিছু বলে না।” হুগলির বলাগড়ের বাসিন্দা সমাজকর্মী অশোক সাহা স্থানীয় চরগুলিতে গাছ লাগান। তাঁর অভিজ্ঞতা, “পাড় ছাড়াও নদীর চর থেকেও বালি কেটে নেওয়া হচ্ছে। তিন-চার টাকা বস্তা। একটি নৌকায় একশো বস্তা ধরে। চারশো টাকা ট্রাক্টর হিসেবে বালি পৌঁছে যায় স্থানীয় মাফিয়াদের কাছে।” স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাল বালি লাগে গাঁথনির কাজে। তুলনায় খারাপ মানের বালি ব্যবহৃত হয় নিচু জমি ভরাট বা বাড়ির ভিত মজবুত করতেমাটি মাফিয়ারাও একই ভাবে পাড় এবং চরকোনও কিছুই বাদ রাখছে না বলে অভিযোগ পেয়েছে সেচ দফতর। তারা নদীর পাড় লাগোয়া আবাদি জমিও ভয় দেখিয়ে কিনে সেখান থেকে মাটি কেটে ইটভাটাগুলিকে বেচে দিচ্ছে। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়ায় পুর-এলাকায় এমন অবৈধ মাটি খাদান খোদ সেচমন্ত্রীরই চোখে পড়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এ ব্যাপারে উত্তর ২৪ পরগনার জেলাশাসকের কাছে চিঠিও পাঠিয়েছে সেচ দফতর।
নোট পাঠানোর পরে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে কোনও জবাব পেয়েছেন কি? সেচমন্ত্রী বলেন, “বিষয়টি নিয়ে সরকারি স্তরে আলোচনা চলেছে। তাই সংবাদ মাধ্যমের কাছে কিছু বলব না।” তবে মহাকরণ সূত্রের দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর বিষয়টি নিয়ে নড়াচড়া শুরু করেছে। বালি ও মাটি মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণে রাজ্যে এ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে (ওয়েস্টবেঙ্গল মাইনর মিনারেলস রুলস, ২০০২), তা পরিবর্তনের কথাও ভাবা হচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.