উত্তরপ্রদেশ-তামিলনাড়ুর বালি মাফিয়াদের ছায়া এ বার এ রাজ্যেও।
দামোদর উপত্যকায় বেআইনি বালি তোলা বন্ধ করতে কী পদক্ষেপ করা হয়েছে, সে বিষয়ে হলফনামা জমা দেওয়ার জন্য গত দু’বছরে রাজ্য সরকারকে মোট আট বার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। কিন্তু রাজ্য সরকার কোনও বারই হলফনামা জমা দেয়নি। এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অরুণ মিশ্র ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ। সরকার কেন বার বার হাইকোর্টকে অমান্য করছে, সে বিষয়েও একটি হলফনামা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতিরা।
উত্তরপ্রদেশে যমুনা থেকে মাফিয়াদের বেআইনি বালি তোলা আটকে অখিলেশ-সরকারের কোপে পড়েছেন আইএএস অফিসার দুর্গাশক্তি নাগপাল। তা নিয়ে শোরগোল চলছে দেশজুড়ে। তামিলনাড়ুতেও তুতিকোরিনের জেলাশাসক আশিস কুমার বালি মাফিয়াদের দৌরাত্ম্য প্রতিহত করতে গিয়ে সরকারের কোপে পড়ে বদলি হয়েছেন। একই বিষয় নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকাও এ বার প্রশ্নের মুখে পড়ল। ক্ষুদ্ধ আদালত বলেছে, বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকার আদালতের নির্দেশ অমান্য করেই চলেছে। এটি অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। বেআইনি ভাবে বালি তোলা কেন বন্ধ হয়নি, অবিলম্বে রাজ্য তা হাইকোর্টকে জানাক।
বেআইনি বালি তোলা নিয়ে ২০১১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা করেন গোপাল বালো। তিনি আবেদনে অভিযোগ করেন, উত্তরপ্রদেশ বা তামিলনাড়ুর মতো বেআইনি বালি তোলায় পিছিয়ে নেই এ রাজ্যও। বর্ধমান জেলায় গোটা দামোদর উপত্যকা জুড়েই বেআাইনি ভাবে বালি তোলা চলছে। এর ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। অপরিকল্পিত ভাবে বালি তুলে নেওয়ায় আশপাশের ঘরবাড়ি ও পথঘাট যে কোনও সময় ভেঙে পড়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি জেএন পটেলের ডিভিশন বেঞ্চ দামোদর থেকে বেআইনি বালি তোলা নিয়ে সরকারের বক্তব্য জানাতে চায়। তাঁর অবসরের পর প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব নেন অরুণ মিশ্র। কিন্তু বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য সরকার ওই হলফনামা জমা দেয়নি।
বৃহস্পতিবার মামলাটির শুনানি ছিল। বিচারপতিরা সেচ দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে এ দিন এজলাসে হাজির হতে বলেছিলেন। ওই ইঞ্জিনিয়ার প্রধান বিচারপতির এজলাসে হাজিরও হন। কিন্তু বিচারপতিদের প্রশ্নের উত্তরে জানান, হলফনামা তিনি নিয়ে আসেননি। এর পরেই ডিভিশন বেঞ্চ জানতে চায়, এটা কী চলছে! হাইকোর্ট বার বার নির্দেশ দেওয়া সত্ত্বেও রাজ্য প্রতিবারই তা অমান্য করে চলছে। বিচারপতিরা এ দিন বলেন, রাজ্য সরকার হাইকোর্টের নির্দেশ পালনের জন্য কোনও ব্যবস্থাই নিচ্ছে না। হাইকোর্ট বার বার রাজ্যের ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতর, সেচ দফতর-সহ বিভিন্ন দফতরের কাছে জানতে চাইছে, কেন এ ভাবে বেআইনি বালি তোলা চলছে এবং রাজ্য সরকার তা বন্ধ করতে কী ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু দু’বছরেও সরকারের কোনও দফতর থেকে একটি হলফনামাও হাইকোর্টে জমা দেওয়া হয়নি। আদালত বলে, এটা খুবই দুঃখজনক ঘটনা। বার বার নির্দেশ দেওয়ার পরেও শুনানির সময় সরকারি আইনজীবী এমন ভাব করেন, যেন এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। প্রতিবার শুনানির সময়ে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
এ দিনের নির্দেশে বলা হয়, আগামী ২০ অগস্ট বর্ধমানের জেলাশাসক, সেচ দফতরের অধিকর্তা, সেচ দফতরের এগ্জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার ও জেলা ভুমি ও ভূমি সংস্কার অফিসারকে হলফনামা দিয়ে জানাতে হবে, কেন তাঁরা বার বার হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করেছেন। বলতে হবে, বেআইনি হওয়া সত্ত্বেও কী ভাবে এই বালি তোলা চলছে এবং তা বন্ধ করার জন্য রাজ্য সরকার কী পদক্ষেপ করেছে। দামোদরের যে সব এলাকা থেকে বালি তোলা যাবে না, সেই সব এলাকাকে কেন ‘নিষিদ্ধ এলাকা’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়নি, রাজ্য সরকারকে সে বিষয়েও জবাবদিহি করতে হবে হাইকোর্টে। |