রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সংসদে হট্টগোল বাধাল বিজেপি। ‘চোর হ্যায় তো চোর হ্যায়/দামাদ হ্যায় তো কেয়া হুয়া’ স্লোগান দিলেন দলীয় সাংসদদের একাংশ। এমনকী লোকসভায় যশবন্ত সিন্হা থেকে রাজ্যসভায় রবিশঙ্কর প্রসাদরা সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে বিশেষ তদন্তকারী দল গড়ারও দাবি তুললেন। কিন্তু সনিয়া গাঁধীর জামাই প্রসঙ্গে সংসদে সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ এর চেয়ে বেশি উচ্চগ্রামে নিয়ে যেতে চাইছে না প্রধান বিরোধী দল। সুষমা স্বরাজ আজ বিকেলে জানিয়ে দিয়েছেন, “আমরা আগামিকাল আর বঢরার বিষয়টি না তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা চাইছি সংসদ চলুক।”
কেন আক্রমণে এই রাশ বিজেপির? কারণ মূলত দু’টো। প্রথমত, রবার্ট-প্রসঙ্গে সংসদে শোরগোল করায় অন্য বিরোধী এমনকী সরকারের সমর্থক দলগুলিরও অনীহা। দ্বিতীয়ত, বিজেপি শাসিত বিভিন্ন রাজ্যে নেতাদের পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ কংগ্রেস খুঁচিয়ে তুলতে পারে বলে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেরই আশঙ্কা। বস্তুত, সেই কারণেই বিজেপির তরফে প্রথম সারির কোনও নেতা সংসদে বিষয়টি তোলেননি। লোকসভায় সুষমা নীরব থেকেছেন। রাজ্যসভায় জেটলি প্রসঙ্গ ওঠার আগেই বেরিয়ে যান।
অথচ কমনওয়েলথ থেকে টুজি কেলেঙ্কারির সময় প্রায় সব বিরোধী দলই এককাট্টা হয়েছিল। গোটা অধিবেশন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এ বার বিরোধীদের মধ্যে তৃণমূল আগেই জানিয়ে দেয়, রবার্ট-প্রসঙ্গ নিয়ে তারা সংসদে সরব হবে না। আর সরকারের বিপদের দুই সঙ্গী, মায়াবতী ও মুলায়ম সিংহের দল সরাসরি বলে, রবার্টের বিরুদ্ধে যতই অভিযোগ থাক, তার জন্য সনিয়া গাঁধীকে দায়ী করা যায় না। মায়াবতী নিজেই বলেছেন, “যদি কেউ ভুল করে থাকে, তার জন্য পরিবারের কাউকে শাস্তি দেওয়া যায় না। রবার্ট বঢরার ক্ষেত্রেও সনিয়া গাঁধীকে কী করে দায়ী করা যায়?” মুলায়মের দলের নেতা নরেশ অগ্রবাল বলেন, “যে ভাবে রবার্ট বঢরাকে ‘সরকারি জামাই’ বলে বিজেপি অহেতুক রাজনীতি করছে, আমরা তার সঙ্গে একমত নই। সনিয়া গাঁধীকে এর মধ্যে টেনে আনার কোনও অর্থ হয় না।”
বিজেপির এক নেতার কথায়, “ভোটের আগে মায়াবতী-মুলায়ম ও কংগ্রেস একে অপরের উপর নির্ভরশীল। কংগ্রেসের যেমন তাঁদের সমর্থনের প্রয়োজন রয়েছে, তেমনই অনেকগুলি মামলা-মোকদ্দমায় উত্তরপ্রদেশের এই দুই নেতা-নেত্রী জর্জরিত। তাঁদের বিরুদ্ধে সিবিআই কোন পথে এগোবে, তা-ও স্থির করে দেবে কংগ্রেসই। ফলে সনিয়া গাঁধীকে আড়াল করা ছাড়া তাঁদের গতি কী?” ঘরোয়া স্তরে অবশ্য বিজেপি নেতারাও কবুল করছেন, সরাসরি সনিয়াকে ইট ছুড়লে পাটকেলটাও খেতে হবে তাঁদের দলকেও। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী কমল নাথ, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারিরা ইতিমধ্যেই সেই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, রবার্টের বিষয়টি রাজ্যের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে সংসদে কোনও আলোচনা হতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তো কর্নাটকে খনি বণ্টন কেলেঙ্কারি, গুজরাতে বেসরকারি সংস্থাকে জমি দেওয়া, এমনকী খোদ লালকৃষ্ণ আডবাণীর কন্যা প্রতিভা আডবাণীর জমি পাওয়া, মধ্যপ্রদেশে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহানের স্ত্রীর বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ সব নিয়েই আলোচনা করতে হয় সংসদে।
তবে এই বিতর্ক ভোটের আগে যে কংগ্রেসের রাজনৈতিক ক্ষতি করে দিল, তা মানছে দল। বিজেপি এ নিয়ে সংসদে আক্রমণে ইতি টানলেও লোকসভা ভোটের প্রচারে তারা বিষয়টিকে হাতিয়ার করতে চলেছে। কাজেই রবার্ট-বিতর্ক থেকে দূরত্ব বাড়াতে কংগ্রেস মুখপাত্র সন্দীপ দীক্ষিতকে বলতে হয়েছে, “এটা এক জন ব্যক্তির বিষয়। কংগ্রেসের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই। তাই কংগ্রেস প্রতিক্রিয়া দেবে না।” কংগ্রেসের কোনও নেতা যাতে রবার্ট প্রসঙ্গে বেফাঁস মন্তব্য না করেন, সে ব্যাপারে দলে নির্দেশ জারি হয়েছে। যদিও গুরগাঁওয়ের কংগ্রেস সাংসদ রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ রাজ্যের বিরুদ্ধে তোপ দেগে আজও বলেছেন, “সাম্প্রতিক কালে গুরগাঁওয়ের সব জমি লেনদেন নিয়েই তদন্ত হওয়া উচিত।” কংগ্রেস নেতাদের বক্তব্য, ব্যক্তিগত অসন্তোষ থেকেই তিনি এই মন্তব্য করছেন। কিন্তু রাওয়ের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপও করতে পারছে না হাইকম্যান্ড। কারণ, সে ক্ষেত্রে রাও বলার সুযোগ পাবেন যে, গাঁধী পরিবারের বিরুদ্ধে মুখ খুলেই তাঁকে শহিদ হতে হল। |