বঢরার জমি-প্রশ্নে সংসদে বিজেপির সঙ্গে নেই তৃণমূল
বিজেপির একাংশ চাইলেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল কিন্তু রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে সংসদে শোরগোল তুলতে রাজি হল না।
বিজেপি লোকসভা এবং রাজ্যসভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনার দাবি করলেও কংগ্রেস সেই দাবি মানতে নারাজ। এই টানাপোড়েনের মধ্যেই তৃণমূল আজ রাজ্যসভার কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে কার্যত কংগ্রেসের পাশে দাঁড়ালো। তৃণমূলের তরফে রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যানকে জানিয়ে দেওয়া হল, এই বিষয়টি নিয়ে তারা সংসদে আলোচনা চাইছে না।
তৃণমূলের এই অবস্থানে সংসদে শোরগোল পড়ে যায়। প্রশ্ন ওঠে, তবে কি লোকসভা নির্বাচনের আগে মমতা সুকৌশলে সনিয়া গাঁধীর কাছে বার্তা পৌঁছে দিলেন আজ? তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা মুকুল রায় কিন্তু বলছেন, “এমন ভাবাটাই অবান্তর। আমরা এ ব্যাপারে সংসদে আলোচনা চাইছি না, তার কারণ সনিয়া গাঁধী বা তাঁর জামাই নন। যদি দুর্নীতির অভিযোগ প্রমাণিত হয়, তা হলে সংসদের বাইরেও বিষয়টি উত্থাপন করা যায়। কিন্তু বিষয়টি একান্ত ভাবেই রাজ্য সরকারের এক্তিয়ারভুক্ত।” রবার্টের প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, “হরিয়ানার এক তদন্তকারী অফিসার রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দিয়েছেন। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা তা খারিজ করে জানিয়েছে, সেটি ভ্রান্ত। এখন বিষয়টি যদি আমরা সংসদে উত্থাপন করতে রাজি হই, তা হলে তো রাজ্য সরকারের স্বাধিকারে হস্তক্ষেপ করা হয়। পশ্চিমবঙ্গে আমরা সরকারে ক্ষমতাসীন। যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় রাজ্যের এই স্বাধিকারের নীতি লঙ্ঘন করব কী করে?”
মুকুল রায় এ কথা বললেও কংগ্রেস নেতারা কিন্তু তৃণমূলের অবস্থানে আশান্বিত। কংগ্রেসের নেতা বলেন, “মমতা ’৯৮ সালে পৃথক দল করলেও সনিয়া তথা গাঁধী পরিবারের প্রতি সর্বদাই শ্রদ্ধাশীল। রাজীব গাঁধীর ছেলেমেয়েদের ব্যাপারেও তিনি সংবেদনশীল। বরং তৃণমূল এই কৌশল নিয়ে দেখিয়ে দিল যে, কেন্দ্র সিবিআই দিয়ে কে ডি সিংহ বা চিটফান্ডের বিষয়ে তৃণমূলকে প্যাঁচে ফেলার চেষ্টা করলেও মমতা কিন্তু কখনওই ঘোলা জলে মাছ ধরতে ইচ্ছুক নন।” তবে তৃণমূলের নেতারা বলছেন, এই সিদ্ধান্তের পিছনে একটা বড় কারণ হল রাজ্যের স্বাধিকার। আজ বিষয়টি নিয়ে তাঁরা বিজেপির সঙ্গে হাত মিলিয়ে সংসদে আলোচনার দাবি জানালে ভবিষ্যতে সিপিএম-কংগ্রেস মিলে পশ্চিমবঙ্গের বিষয় নিয়ে সংসদে আলোচনা চাইতে পারে। পশ্চিমবঙ্গের আইনশৃঙ্খলা, আর্থিক অনিয়ম, চিটফান্ডের মতো বিষয়ে আলোচনার দাবি উঠলে তৃণমূল তখন কী করবে?
আজ কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে তৃণমূল এমন অবস্থান নেওয়ায় বিষয়টির উত্তাপ অনেকটাই কমে যায়। অন্যান্য আঞ্চলিক দলগুলিও এই যুক্তি অনেকটাই মেনে নেয়। বিজেপির মধ্যে অবশ্য প্রথম থেকেই বিষয়টি নিয়ে মতপার্থক্য ছিল। এর আগের সংসদীয় অধিবেশনে যখন রবার্টের বিষয়টি সামনে আসে, তখন লোকসভার বিরোধী নেতা সুষমা স্বরাজ এটি সংসদে উত্থাপন করতে রাজি ছিলেন না। তা নিয়ে বিজেপিতে গোলমালও হয়। দলের একাংশ সুষমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেন যে, তিনি গাঁধী পরিবার ও ডিএলএফ দু’টি ব্যাপারেই নরম মনোভাব নিচ্ছেন। এ বার বিষয়টি আবার যখন এল, তখন সংসদীয় মন্ত্রী কমল নাথ বিজেপি নেতাদের জানিয়ে দেন, কংগ্রেস বা ইউপিএ সরকারের কেউ নন রবার্ট। তিনি এক জন ব্যবসায়ী। সুতরাং কোনও বাণিজ্যিক সংস্থা কোনও ব্যবসায়ীকে কী সুযোগ দেবে, তা একান্তই দু’পক্ষের ব্যাপার। এখানে সরকারের কিছু করার নেই। বিষয়টি রাজ্য সরকারের তদন্তের পরিধির মধ্যে রয়েছে, যা সংসদে টেনে আনা অনুচিত।
সুষমা নিজে কংগ্রেসের এই যুক্তি মানলেও বিজেপি-র একটা জঙ্গি অংশ মনে করেন, বিষয়টি যদি একেবারেই না তোলা হয়, তা হলে সাধারণ মানুষের কাছে ভুল বার্তা যেতে পারে। মনে হতে পারে, বিজেপি গাঁধী পরিবারের দুর্নীতিকে আড়াল করার চেষ্টা করছে। আর তাই, বিজেপি আজ সংসদে এই বিষয়ে আলোচনার প্রস্তাব আনতে চেয়েছিল। বিজেপি-র মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকর আজ সাংবাদিক বৈঠক করেন মূলত কাশ্মীর নিয়ে। সাংবাদিক বৈঠকের শেষ দিকে তিনি বলেন, “আগামিকাল দেশের ‘সরকারি জামাই’-এর জমি সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে আমরা সংসদে সরব হব। আজ সম্ভব হয়নি, কিন্তু কাল তোলা হবে।” তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ‘সরকারি জামাই’ বললেও সরাসরি রবার্টের নাম নেননি বিজেপি মুখপাত্র।
মুলায়ম সিংহ যাদব, মায়াবতী, শরদ পওয়ারের দলও আজ কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে রবার্টের বিষয়টি সংসদে তোলার ব্যাপারে সরব হয়নি। বসপা বা ডিএমকে-র মতো আঞ্চলিক দলের নেতারা জানেন যে, এটা নিয়ে সরব হওয়া তাঁদের পক্ষে বুদ্ধিমানের কাজ হবে না। এমনিতেই সিবিআই নিয়ে সমস্যা রয়েছে মুলায়ম-মায়াবতীদের। তাই কাচের ঘরে বসে ঢিল ছোড়াটা বুদ্ধিমানের কাজ নয় বলেই মনে করছেন তাঁরা।
রবার্ট-প্রসঙ্গে এমন অবস্থান নেওয়ার মানে মমতা কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা চাইছেন, এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ মুকুলবাবু। তাঁর বক্তব্য, “রাজ্যে কংগ্রেসের ভোট কমতে কমতে তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় কংগ্রেস এবং বিজেপি কোনও দলের সঙ্গেই আমরা আগ বাড়িয়ে জোট করার প্রয়োজনীয়তা দেখছি না।”
তৃণমূল এই অবস্থান নিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়রাম রমেশ যে ভাবে রাজ্য সরকারের জন্য অর্থ বরাদ্দ করেছেন, তাতে কংগ্রেসের তরফে পরিবর্তন আসছে বলে মনে করছেন অনেকেই। কংগ্রেসের একাংশও মনে করে, লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হলে লাভ দু’পক্ষেরই। কিন্তু দু’দলই এখনও পরস্পরের প্রতি নরম মনোভাব দেখাতে রাজি নয়।

বঢরার বিরুদ্ধে সিবিআই চান কংগ্রেস সাংসদই
হরিয়ানার জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে রবার্ট বঢরা এবং ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের দাবি জানালেন সাংসদ রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ। সনিয়া গাঁধীর জামাই বঢরার বিরুদ্ধে কংগ্রেস সাংসদেরই এই দাবিতে অস্বস্তিতে দল। দু’দিন আগে হরিয়ানার জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে আইএএস অফিসার অশোক খেমকার একটি রিপোর্ট ফাঁস হয়ে যায়। খেমকার অভিযোগ, নথিপত্র জাল করে হরিয়ানার গুড়গাঁও অঞ্চলে বেশ কিছু জমি কেনাবেচায় মোটা টাকা মুনাফা করেছেন বঢরা। গাঁধী পরিবারের আশীর্বাদ পেতে তাতে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা পূর্ণ মদত দিয়েছেন বলেও অভিযোগ করেছেন খেমকা।
গুড়গাঁওয়ের সাংসদ রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ বলেন, “রাজ্যের ওই আইএএস অফিসার যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তা নিয়ে সিবিআই তদন্ত হওয়া উচিত।” শুধু রবার্ট বঢরার জমি কেনা বেচা নয়, সামগ্রিক ভাবে হুডা সরকারের আমলে জমি কেলেঙ্কারি নিয়ে তদন্তের দাবি জানান তিনি।
স্বাভাবিক ভাবেই আজ অস্বস্তিতে পড়ে যান কংগ্রেস নেতৃত্ব। আগামিকাল বিজেপি বিষয়টি নিয়ে সংসদে সরব হওয়ার তৈরি হচ্ছে। ইন্দ্রজিৎ সিংহের বক্তব্য তাদের হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা কংগ্রেসের। কংগ্রেস মুখপাত্র রেণুকা চৌধুরি আজ বিষয়টি লঘু করতে তৎপর হন। তিনি বলেন, “জমি কেলেঙ্কারির অভিযোগ নিয়ে হরিয়ানা সরকার ইতিমধ্যেই তদন্ত করছে। এ ব্যাপারে কী তদন্ত হবে তা রাজ্যই স্থির করবে।” রেণুকার এই যুক্তি বিরোধীদের আক্রমণ মোকাবিলার জন্য যথেষ্ট কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে কংগ্রেসেই।

পুরনো খবর:


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.