চলতি খাতে বাণিজ্য লেনদেন ঘাটতিতে রাশ টানার লড়াই হিসেবে সোমবারই একগুচ্ছ পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম। যার অন্যতম ছিল সোনায় আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির পরিকল্পনা। সেই ঘোষণার ২৪ ঘন্টা কাটতে না কাটতেই যুদ্ধ আরও জোরদার করে সোনা, রুপো, প্ল্যাটিনামে আমদানি শুল্ক বাড়িয়ে ১০% করার কথা জানাল কেন্দ্র। সংশ্লিষ্ট মহলের দাবি, সোনার উপর এত চড়া হারে এই শুল্ক আগে কখনও বসেনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্র মনে করছে শুল্ক বাড়লে ওই তিন দামি ধাতুর মূল্য বাড়বে। পড়বে চাহিদা। তাই তা আমদানির জন্য দেশ থেকে ডলারও কম বেরোবে। সুতরাং অন্তত কমানো সম্ভব হবে দেশে ডলার ঢোকা ও বেরোনোর মধ্যে ফারাক (চলতি খাতে বাণিজ্য লেনদেন ঘাটতি)। বেশ কিছু দিন ধরেই যাকে পাখির চোখ করছে কেন্দ্র ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। তা ছাড়া, এর ফলে সরকারের ঘরেও বাড়তি ৪,৮৩০ কোটি টাকা আসবে বলে দাবি কেন্দ্রের। এ দিন কিছু ক্ষেত্রে বাড়ানো হয়েছে সোনার উৎপাদন শুল্কও। |
আরও বাড়বে সোনার দাম। আলোচনা কি তা নিয়েই? ছবি: রয়টার্স |
উল্লেখ্য, আমদানি কমাতে চলতি বছরে এই নিয়ে তিন বার বাড়ানো হল আমদানি শুল্ক। মঙ্গলবার সংসদে অর্থমন্ত্রী চিদম্বরমের পেশ করা বিবৃতি অনুযায়ী, সোনা ও প্ল্যাটিনামের ক্ষেত্রে শুল্ক বৃদ্ধির হার ২% এবং রুপোর ক্ষেত্রে ৪%। পরে কেন্দ্রীয় রাজস্ব সচিব সুমিত ঘোষ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, এর পাশাপাশি অনাবশ্যক পণ্যগুলির আমদানি শুল্ক বাড়ানোর লক্ষ্যেও আলাপ-আলোচনা চালাচ্ছেন তাঁরা। যার ইঙ্গিতও সোমবার চিদম্বরম দিয়েছিলেন।
গত পাঁচ দিন ধরেই সোনার দাম অল্প-বিস্তর ঊর্ধ্বমুখী। তার উপর এ দিন শুল্ক বৃদ্ধির ঘোষণার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যাশা মতোই সারা দেশে আরও বেড়ে গিয়েছে তার দাম। যেমন, এ দিন দিল্লির বাজারে সোনা গত চার মাসের সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছে যায়। ১০ গ্রামের দর ৫৬৫ টাকা বেড়ে হয় ২৯,৮২৫। কলকাতাতেও প্রতি ১০ গ্রাম পাকা সোনার দাম ৬০০ টাকা বেড়ে দাঁড়ায় ২৯,৯৬৫। স্বর্ণ ব্যবসায়ী মহলের ধারণা, চলতি সপ্তাহে দর আরও অনেকটাই বাড়বে।
তবে একই সঙ্গে শিল্প মহলের আশঙ্কা, কেন্দ্রের এই শুল্ক বৃদ্ধির পদক্ষেপ আগামী দিনে দেশের বাজারে সোনার চোরাচালান আরও বাড়াবে। যার ফলে সমস্যায় পড়তে পারে গয়না শিল্প। এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সুমিতবাবু জানান, “সব দিক বিবেচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” কিন্তু তা সত্ত্বেও অনেকেই মনে করছেন, ঘাটতি কমিয়ে অর্থনীতিকে বাঁচাতে চোরাপথে সোনা আসার বিষয়টি আপাতত এড়িয়ে যেতে হচ্ছে কেন্দ্রকে। সুমিতবাবুও আশ্বাস দেন, “কেন্দ্র চোরাচালান রুখতে বিমানবন্দর, সীমান্ত, বন্দরে বাড়তি সতর্কতা জারি করেছে।”
প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম তিন মাসেই সোনা চোরাচালানের ২২০টি ঘটনা ধরা পড়েছে। আটক হয়েছে ৫৯.৮২ কোটি টাকার সোনা। যেখানে গত বছরের একই সময়ে ২০৪টি ঘটনা ধরা পড়েছিল এবং আটক সোনার মূল্য ছিল মাত্র ১২.৮৬ কোটি।
|