|
|
|
|
জলাধার বাঁচাতে গেলে ভাসবে হরিদ্বার
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
জুনের মাঝামাঝি প্রবল বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছিল পাহাড়ি রাজ্যটির বিরাট অংশ। প্রাণহানি যে কত, তার ঠিকঠাক হিসেব এখনও কষে ওঠা যায়নি। ক্ষয়ক্ষতির হিসেবও সারা হয়নি। অথচ সেই ক্ষত মেরামতির আগেই ফের অতিবৃষ্টিতে বিষম সঙ্কটের মুখে পড়েছে উত্তরাখণ্ড।
জুনের বিপর্যয়ে কেদারনাথ ও তার আশপাশের বিভিন্ন পর্যটনকেন্দ্র নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। তাই পুজোর ছুটিতে পর্যটক টানতে হরিদ্বার, হৃষিকেশকে সাজিয়ে তোলার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু গত ক’দিনের প্রবল বৃষ্টিতে টিহরী জলাধারে জল যে ভাবে বাড়ছে, তাতে সিঁদুরে মেঘ দেখছে প্রশাসন। তাদের আশঙ্কা, বৃষ্টি আরও বাড়লে হরিদ্বার-হৃষিকেশের মতো তুলনায় নিচু জায়গাগুলো বন্যায় ভাসতে পারে। বিগত বিপর্যয়ের পরে অভিযোগ উঠেছিল, জুনে অতিবৃষ্টির কেন্দ্রীয় পূর্বাভাসকে রাজ্য আমল দেয়নি। এ বার তাই আবহাওয়া দফতর অতিবৃষ্টির পূর্বাভাস দিতেই টিহরী জলাধারে নজরদারি বেড়েছে।
টিহরী জেলা প্রশাসনের খবর: জলাধারটিতে ৮৩০ মিটার পর্যন্ত জল ধরা যায়। জলস্তর ৮১০ মিটার ছাড়ালেই সতর্কতা জারি হয়, ৮২৫ মিটারে বিপদসঙ্কেত। জুনের প্রাকৃতিক তাণ্ডবের সময়ে টিহরীর জলস্তর ছিল ৭৭৭ মিটার। আর গত ক’দিনের বৃষ্টির ফলে তা ৮২৫ মিটার ছুঁতেই জারি হয়েছিল বিপদসঙ্কেত। “গত চার-পাঁচ দিন ধরে জলাধারে রোজ গড়ে ৯৫০ ঘনমিটার জল ঢুকছিল। হরিদ্বার-হৃষিকেশ প্রশাসনকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি।” জানাচ্ছেন টিহরী জেলার এক কর্তা। টিহরীর জেলাশাসক নীতেশকুমার ঝা সোমবার বলেন, “রবিবার থেকে বৃষ্টিটা ধরেছে। আমরা জল ছাড়ছি। দৈনিক ১ হাজার ১০০ ঘনমিটার জল ছাড়া হচ্ছে। লেভেল ৮১৮ মিটারে নেমে এসেছে।” |
ত্রাসের টিহরী |
ধারণক্ষমতা ৮৩০ মিটার
বিপদসীমা ৮২৫ মিটার
সতর্ক-সীমা ৮১০ মিটার |
শনিবার জলস্তর ৮২৫ মিটার
সোমবার জলস্তর ৮১৮ মিটার
রোজ গড়ে ছাড়ছে ১১০০ ঘনমিটার |
|
পরিণাম |
• সংলগ্ন ৫০টি গ্রামে প্লাবনের আশঙ্কা
• হরিদ্বারে গঙ্গার জল বিপদসীমায়
• টিহরী, পৌড়ি, হরিদ্বার জেলায় বন্যা-সঙ্কেত |
পূর্বাভাস |
দু’-এক দিনে ফের ভারী বৃষ্টি |
|
তবে এতেও নিশ্চিন্ত হওয়া যাচ্ছে না। কারণ মৌসম ভবন জানাচ্ছে, দিন দুয়েক বাদে উত্তরাখণ্ডে ফের ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা রয়েছে। তাতে টিহরী জলাধারে ফের জল বাড়ার সমূহ আশঙ্কা, যা হরিদ্বার-হৃষিকেশের কাছে অশনি সঙ্কেত। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, টিহরীর ছাড়া জলে ইতিমধ্যে গঙ্গা বিপদসীমা ছুঁয়েছে হরিদ্বারে। আরও বেশি জল ছাড়া হলে ওখানে বন্যা অনিবার্য বলে মনে করছেন রাজ্যের সেচ-কর্তারা। তাঁদের এক জনের কথায়, “জল না-ছাড়লে টিহরী ড্যামে ফাটল ধরবে, তাতে বিশাল বিপর্যয়ের সামনে পড়বে উত্তরাখণ্ড। আবার জল ছাড়লে হরিদ্বার-হৃষিকেশ বন্যায় ডুববে।”
অতএব, প্রশাসন পড়েছে সাঁড়াশি সঙ্কটে। রেকর্ড বলছে, ২০১০-এ টিহরীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়েছিল। সে বার প্রচুর জল ছাড়ায় হরিদ্বার, হর কি পৌড়ি, হৃষিকেশ ভেসে যায়। চাষের বিস্তর ক্ষতি হয়েছিল। হরিদ্বারের এক আশ্রমের কর্মী পরেশ দত্ত জানাচ্ছেন, “সে বছর হরিদ্বারের গঙ্গা বিপদসীমার তিন-চার মিটার উপর দিয়ে বইছিল। আমরা ঘরে আটকা পড়েছিলাম। এ বারও নদী ফুঁসছে। রোজই দেখছি, জল বাড়ছে!” উত্তরাখণ্ড সেচ দফতরের কর্তা ডি পি জুগরান অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছেন, “আমরা নজর রাখছি। এখনও লোক সরানোর মতো অবস্থা হয়নি।”
আবহাওয়ার পূর্বাভাস মিলে গেলে কী হবে? ভেবে পাচ্ছেন না প্রশাসনের অনেকে। ভূ-বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, ভারী বৃষ্টিতে টিহরীর জল আরও না-ছেড়ে উপায় নেই। হিমালয় নিয়ে কাজ করা জিএসআইয়ের এক বিজ্ঞানীর বক্তব্য, “টিহরী জলাধার রয়েছে ভূমিকম্পপ্রবণ জায়গায়। বারবার ভূকম্পে তার কতটা ক্ষতি হয়েছে, সেটা ঠিক বলা যাচ্ছে না। প্রশাসনকে এটাই দেখতে বলা হয়েছে যে, জলস্তর যাতে কোনও ভাবে বিপদসীমা না-ছাড়ায়।”
জলাধার-কর্তৃপক্ষ কী বলেন? টিহরী জলাধার-কর্তৃপক্ষ জানান, জলাধারটি রিখটার স্কেলে ৮.৪ শক্তির ভূকম্প সহ্যের ক্ষমতা রাখে। ১৯৯১-এ ৬.৮ তীব্রতার ভূমিকম্পেও তার কোনও ক্ষতি হয়নি বলে কর্তৃপক্ষের দাবি। এক কর্তার মন্তব্য, “বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মেনে জলধারণের ক্ষমতা বাড়ানো হচ্ছে না। বিশেষত জুনের বিপর্যয়ের পরে আমরা আরও সতর্ক।” যদিও ভূ-বিজ্ঞানীদের শঙ্কা, হিমালয়ের এ তল্লাটে অদূর ভবিষ্যতে ৮.৮ রিখটার মাত্রার ভূমিকম্পও হতে পারে।
তাই টিহরীর জলস্তর আরও নিয়ন্ত্রণে রাখায় জোর দিচ্ছেন ওঁরা। পাশাপাশি আশঙ্কার প্রহর গুনছে হরিদ্বার-হৃষিকেশ। |
পুরনো খবর |
• মুখ ফেরাবেন না বাঙালি পর্যটক, আশায় উত্তরাখণ্ড •
লাগামছাড়া বৃষ্টি, বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড-হিমাচল |
|
|
|
|
|