বাংলাই পারে পাশে দাঁড়াতে, বড় ভরসা নিয়ে বলছে উত্তরাখণ্ড!
পর্যটনের উৎকর্ষে এ দেশে বরাবরই উত্তরাখণ্ড রীতিমতো কুলীন রাজ্যের মর্যাদা পেয়ে থাকে। পর্যটন মেলা মাত্রেই তারা যেন তারকা। এ বার ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ফেয়ার-এর (টিটিএফ) আয়োজনেও অন্যতম শরিক হওয়ার কথা ছিল তাদের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সেটা আর হয়ে ওঠেনি। তবু সংখ্যায় কিছুটা কম হলেও উত্তরাখণ্ডের প্রতিনিধিরা এ বারও কলকাতায় হাজির হয়েছেন। জানান দিচ্ছেন, প্রকৃতির রোষে ভেঙে-গুঁড়িয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে অনেক কিছুই। তবু এখনও ফুরোয়নি সব।
উত্তরাখণ্ড ট্যুরিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের মুখপাত্র অজয় ভার্গব বলছিলেন, “বাংলা ছাড়া আমাদের গতি নেই। বছর-বছর শতকরা ২৫ ভাগ পর্যটকই
বাংলা থেকে আসেন। বাংলাই পারে এই অবস্থায় আমাদের পাশে দাঁড়াতে...!” মেলায় পোস্টার চোখে পড়ছে, ‘হরিদ্বার-ধামাকা’। তাতে তিন-চার দিনের প্যাকেজ ট্যুরের ফিরিস্তি। বেশ কয়েকটি হোটেলও এসেছে দেহরাদূন, মুসৌরি, হরিদ্বার থেকে।
সংগঠকদের তরফে সিইও সঞ্জীব অগ্রবাল বললেন, “উত্তরাখণ্ডের বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা ছড়াচ্ছে। কিন্তু গঢ়বালের কয়েকটি জায়গা বাদ দিয়ে এখনও ওই রাজ্য থেকে নিরাপদে বেড়িয়ে আসা যায়।” মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে মেলার সংগঠকদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ভার্গব শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, “দয়া করে মনে রাখবেন, আমাদের রাজ্যে দু’টি জেলা (চামোলি ও রুদ্রপ্রয়াগ) ক্ষতিগ্রস্ত হলেও আরও ১১টি জেলা রয়েছে। সেখানে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক।”
হরিদ্বারের এক হোটেল-কর্তা সলিল অরোরা বলছিলেন, “হরিদ্বার শহরের কোনও ক্ষতি হয়নি। শহর ঘেরা খালের ব্যবস্থা বাঁচিয়ে দিয়েছে।” চিল্লা অভয়ারণ্য ঘিরেই খালের উপস্থিতি। হরিদ্বার থেকে টিহরি অবধি উপরে ওঠায় সমস্যা নেই। ভার্গবের কথায়, “ক্ষতি যা হয়েছে তা সবই সাত হাজার ফুট থেকে উপরের অংশগুলিতে। তাই পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের জায়গা মুসৌরি, নৈনিতাল, দেহরাদূন, হৃষীকেশ, হরিদ্বারে নিশ্চিন্তে ঘুরে আসা যায়।”
পর্যটন-কর্তারা বলছিলেন, দুর্যোগের পরে পর্যটকদের জন্য কিছু ছাড়ের পরিকল্পনাও রয়েছে সরকারের। আপাতত বাংলার ভ্রমণ-পিপাসুরা অবশ্য সে সবের খোঁজ করছে না। বরং কে কী ভাবে উত্তরাখণ্ডের দুর্গতদের সাহায্য করতে পারেন, সেই তাগিদও বহাল। যেমন, সল্টলেকের বাসিন্দা বিশ্বনাথ সাহা। এ বার ঠিক বিপর্যয়ের সময়েই কেদারে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। হঠাৎ অসুস্থতায় টিকিট বাতিল করেন। টিটিএফ-এর আসরে বাংলার ভ্রমণ সংস্থাগুলোর উদ্যোগে তহবিল গড়ার ডাকে সাড়া দিয়ে এ দিন ১৪০০ টাকার একটি চেক তিনি জমা দিয়ে এলেন।
বাঙ্গুর অ্যাভিনিউ থেকে এসেছিলেন কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক স্বপ্না গঙ্গোপাধ্যায়। ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন দেওয়ালে সাজানো উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন ছবি। স্বপ্নাদেবী অস্ফুটে বললেন, ‘‘মনের মতো সব জায়গা ছিল। দোষটা শুধু প্রকৃতির নয়, পাহাড়ে সভ্যতা গড়ার নামে মানুষই সব নষ্ট করে ফেলল।’’
|