শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (এসজেডিএ)-র বিভিন্ন প্রকল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় বৃহস্পতিবার গোয়েন্দা পুলিশ জেরা করল কংগ্রেসের বিধায়ক শঙ্কর মালাকারকে। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই ওই মামলায় ধৃত একাধিক ইঞ্জিনিয়ার, ঠিকাদারকে জেরার সময়ে কয়েকজন বোর্ড সদস্যের ‘ভূমিকা’ নিয়ে অভিযোগ মিলেছে। এমনকী, ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ারদের কারও কারও সঙ্গে বোর্ড সদস্যদের একাংশের লেনদেন হয়ে থাকতে পারে বলেও তদন্তকারী অফিসারদের সন্দেহ।
দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি শঙ্করবাবু এসজেডিএ-র একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ’ সদস্য। তাই তাঁর কাছে এই যোগসাজশ, এবং অন্যান্য ব্যাপারে মতামত চাওয়া হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। কয়েকটি প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে শঙ্করবাবু খানিকটা উত্তেজিত হয়ে পড়েন, বলছে পুলিশ। এ দিন শুরুতে দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তকারী অফিসার সেলিমা লামা শঙ্করবাবুকে জেরা করেন টানা দুই ঘন্টা। তার পর এসপি কারলিয়াপ্পন জয়রামন এবং অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার আভারু রবীন্দ্রনাথ জেরা করেন।
পরে শঙ্করবাবু বলেন, “আমি যা জানি তা বলেছি। বলেছি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। তা হলেই সব স্পষ্ট হবে।” শঙ্করবাবু অবশ্য জানান, এসজেডিএ বোর্ডের একমাত্র সদস্য তিনি নন। তাঁর মতো ৯ জন সদস্য রয়েছেন। পুলিশ সূত্রে খবর শঙ্করবাবু বারবার বোঝাতে চেয়েছেন বোর্ড সভায় কোনও বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাঁর মতামতের উপর নির্ভর করত না। তিনি সেখানে কংগ্রেসের একমাত্র বিধায়ক ছিলেন। |
গোয়েন্দা শাখায় জিজ্ঞাসাবাদের পর বেরিয়ে আসছেন শঙ্কর মালাকার। বৃহস্পতিবার। —নিজস্ব চিত্র |
পুলিশ সূত্রে খবর, প্রকল্পের দুর্নীতি এবং নানা অসঙ্গতির আঁচ শঙ্করবাবুরা পেতেন কি না, তিনি কোনও ব্যাপারে বোর্ড সভাতে এ সব প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কি না, জানতে চাওয়া হয়। রাজ্যে তৃণমূল-কংগ্রেস ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক শঙ্করবাবু রাজ্য সরকারের মনোনীত হিসেবে এসজেডিএ-র সদস্য হন। পরে কংগ্রেস মন্ত্রিসভা ত্যাগ করলেো শঙ্করবাবু এসজেডিএ সদস্যের পদ থেকে ইস্তফা দেননি। গত জানুয়ারি থেকে নানা প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে মুখ্যমন্ত্রী এসজেডিএ-র চেয়ারম্যান পদ থেকে সরিয়ে দেন শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এসজেডিএ’র মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদী মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি, এবং তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ করেন প্রধাননগর থানায়।
ইতিমধ্যেই জেরা করা হয়েছে অপসারিত চেয়ারম্যান রুদ্রবাবু-সহ বোর্ডের সদস্য তথ্য জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি চন্দন ভৌমিক, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মাকে। এসজেডিএ’র প্রাক্তন সিইও গোদালা কিরণ কুমারকেও দুই দফায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তিনি বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক। তাঁকে গ্রেফতার করতে রাজ্য পুলিশের ডিজি’র কাছে ইতিমধ্যে অনুমতি চেয়েও আবেদন করেছেন শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার। সেই অনুমোদন মিলবে বলে পুলিশকর্তারা আশাবাদী।
|