নির্মীয়মাণ সেপটিক ট্যাঙ্কে ঢুকে কাজ করতে নেমে মৃত্যু হল ছয় জনের। মৃতদের মধ্যে একই পরিবারের তিন ভাই রয়েছেন। গুরুতর অসুস্থ এক জনকে বীরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ছয়টা নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে ডুয়ার্সের বানারহাটে রিয়াবাড়ি চা বাগানের শ্রমিক বস্তিতে।
বানারহাট প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অক্সিজেন সিলিন্ডার না থাকার কারণে কয়েক জনকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা যায়নি বলে অভিযোগ তুলেছে ভারত মিল্লাতে ইসলামিয়া নামে এক সংগঠন। তাঁরা সকাল সাড়ে ৯টা থেকে টানা চার ঘণ্টা বানারহাটের পাশে শিলিগুড়ি-অসম যাতায়াতে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ও ভুটানের সামচি যাতায়াতের পূর্ত সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। তাঁরা ডাকঘর, ব্যাঙ্ক-সহ কোনও দোকানও খুলতে দেননি। জলপাইগুড়ির এএসপি জেমস কুজুর আন্দোলনকারীদের তদন্তের আশ্বাস দিয়ে অবরোধ তোলেন। |
সেপটিক ট্যাঙ্কটিকে ঘিরে স্থানীয় বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র |
এএসপি বলেন, “বিষাক্ত গ্যাসে ৬ জন মারা গিয়েছেন। হাসপাতালের অক্সিজেন নিয়ে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত হবে।” পুলিশ জানায়, মৃত শাকিল মিঁয়া (২৬), রিজওয়ান মিঁয়া (২৯), মকসদ আলম মিঁয়া (৩৫), তৈয়ব মিঁয়া (৩২), শাহবান মিঁয়া (৩৩) ও জামাল মিঁয়া (২৯) রাজমিস্ত্রি ও শ্রমিকের কাজ করতেন।
পুলিশ জানাচ্ছে, এ দিন সকালে রিয়াবাড়ি বাগানের নৈশপ্রহরী সুভান মিয়াঁর বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কের কাজ করতে গিয়েই বিপত্তি ঘটে। মৃত রিজওয়ান, জামাল, শাহবান সুভান বাবুর ৩ ছেলে। তাঁরা আলিপুরদুয়ারে ঠিকাদার সংস্থায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ইদের ছুটিতে বুধবার বাড়ি এসেছিলেন। দেড় মাস আগে তাঁরা বাড়িতে শৌচালয় তৈরির পাশাপাশি একটি সেপটিক ট্যাঙ্ক তৈরির কাজে হাত দেন। সিমেন্টের দেওয়াল দেওয়া ১১ ফুট গভীর ওই ট্যাঙ্কের ভিতরে কিছু কাজ বাকি ছিল। ট্যাঙ্কটিতে যাতে কেউ পড়ে না যায়, সেই জন্য ট্যাঙ্কের মুখ সিমেন্টের ঢালাই করে বন্ধ ছিল।
এ দিন ট্যাঙ্কের মুখের একটি অংশ খুলে ঢালাইয়ের কাজের কাঠ খুলতে মই দিয়ে ভিতর নেমে সুভান মিয়াঁর ৩ ছেলে জ্ঞান হারান। তাঁদের গোঙানির শব্দ শুনে সুভানবাবু নামলে তিনিও জ্ঞান হারান। পাশেই জোগাড়ে হিসাবে থাকা সুভানবাবুর ছেলে জামালের স্ত্রী নাসিরিন চিৎকার করলে প্রতিবেশী ছুটে আসেন। তাঁদের চার জন নীচে নেমে জ্ঞান হারান। এর পরে এলাকার লোকজন ট্যাঙ্কের মুখ ভেঙে সবাইকে দড়ি দিয়ে টেনে তোলেন। তার পরে বাগানের গাড়িতে তাঁদের ৫ কিমি দূরে বানারহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সুভান মিঁয়া এবং তৌসিব মিঁয়া বীরপাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, যেখানে ট্যাঙ্কটি তৈরি হয়েছিল, সেখানে এক সময় গোবর মজুত হত। নির্মীয়মাণ ট্যাঙ্কটির ভিতরে নোংরা জল ছিল। আলিপুরদুয়ার কলেজের রসায়নের শিক্ষক শুভ্র মিশ্র জানান, বহুদিন ধরে বদ্ধ ট্যাঙ্কে জমা জল থাকার কারণে মিথেন গ্যাস তৈরি হয়। ওই গ্যাসের প্রভাবে ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। জলপাইগুড়ি জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকারও বলেন, “ট্যাঙ্কের নোংরা জলে মিথেন গ্যাস উৎপাদন হয়। এর জেরে এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটতে পারে।”
এই ঘটনার জেরে আজ, শুক্রবার রিয়াবাড়ি মসজিদে ইদের নমাজ ছাড়া, সমস্ত অনুষ্ঠান স্থগিত করা হয়েছে। |