শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন কাজে ৬০ কোটি টাকা আর্থিক দুর্নীতির মামলার ব্যাপারে জেরা করা হল শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র তথা তৃণমূলের কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মাকে। মঙ্গলবার শিলিগুড়ি গোয়েন্দা শাখায় তাঁকে প্রায় ঘন্টা দুয়েক জেরা করা হয়েছে। রঞ্জনবাবু এসজেডিএ’র বোর্ডের সদস্য। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এসজেডিএ’র আর্থিক দুর্নীতির মামলায় একাধিক ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের কাছ থেকে ওই সমস্ত প্রকল্পের ব্যাপারে বিভিন্ন তথ্য পেয়েছে পুলিশ। সে ব্যাপারেই রঞ্জনবাবুকে এ দিন জিজ্ঞাসাবাদ করেন পুলিশ আধিকারিকরা।
এ দিন বেলা সাড়ে ১১ টা থেকে শিলিগুড়ি থানার একাংশে থাকা গোয়েন্দা শাখার অফিসে রঞ্জনবাবুকে ডাকা হয়। তাঁকে জেরা করেন তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক সেলিমা লামা। বেরিয়ে যাওয়ার সময় তাঁকে জেরার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “এ ব্যাপারে কিছু বলব না। যা বলার পুলিশই বলবে।” |
জেরার পরে শিলিগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দা দফতর থেকে বেরোচ্ছেন
তৃণমূল কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক |
শিক্ষক সংগঠনের নেতা রঞ্জনবাবুর বিরুদ্ধে শিলিগুড়ি প্রাথমিক স্কুল পরিদর্শকের মুখে থুতু ছেটানোর অভিযোগ উঠেছিল। গত পুর নির্বাচনে নির্দলের টিকিটে শিলিগুড়ির ৩৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে জিতে রঞ্জনবাবু ফের তৃণমূলে যোগ দেন। পুরসভায় কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের বোর্ড গড়লে ডেপুটি মেয়র হন। রাজ্যে পরিবর্তনের পর নতুন বোর্ড গঠিত হয় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের। তারও সদস্য হন রঞ্জনবাবু।
কিন্তু এসজেডিএ বোর্ডের বিরুদ্ধে ত্রিফলা আলো, জোড়াপানি নদী, মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি তৈরি, তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি তৈরি এবং শহরের নিরাপত্তার স্বার্থে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তারই তদন্ত করছে পুলিশ। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “প্রকল্পের কাজ নিয়ে বেশ কিছু তথ্য মিলেছে। সে ব্যাপারে আরও কিছু জানা যায় কি না সে জন্য রঞ্জনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। বাকি সদস্যদেরও শীঘ্রই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” পুলিশেরই একটি সূত্র জানায়, এ দিনই এসজেডিএ-র অপর সদস্য মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির কংগ্রেস বিধায়ক তথা দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) শঙ্কর মালাকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা ছিল। তবে শঙ্করবাবু এ দিন শিলিগুড়িতে ফিরছেন কি না, তা নিয়ে দিনভর নাটক চলে। শেষ অবধি তিনি আসেননি।
পুলিশেরই একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার এসজেডিএ-র অপসারিত চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, বোর্ডের সদস্য তথা জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি চন্দন ভৌমিককে জেরা করা হয়। এর আগে প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে জেরা করা হয়েছে। এ দিন রঞ্জনবাবুকে জেরা করা হয়। তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন তথ্য জানতে চাওয়া হয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে বোর্ড মিটিংয়ে ওই সমস্ত প্রকল্প বিস্তারিত তথ্য ছাড়াই কী ভাবে পাস করা হত। তা নিয়ে সদস্যরা কিছু জানতে চেয়েছিলেন কি না? কেন না শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি, ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো কোনও ক্ষেত্রেই বোর্ড মিটিংয়ে অনুমোদন করা পরিকল্পনায় বিস্তারিত তথ্য ছিল না।
অন্য দিকে গত ১৬ মে পুলিশে নিকাশি প্রকল্প এবং শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজ নিয়ে অভিযোগ করার পর এখন পর্যন্ত এসজেডিএ’র ৩ বাস্তুকার গ্রেফতার হন। বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার অন্তত ৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ওই মামলায় প্রথম দু জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। একই মামলায় ধৃতদের কোনও এক জনের বিরুদ্ধে ৯০ দিনের মধ্যে চার্জশিট পেশ না করলে বাকিরা সকলেই একযোগে জমিন পাবেন। এ ক্ষেত্রে প্রায় ৭০ দিন হয়ে গেলেও কারও বিরুদ্ধে চার্জশিট পেশ হয়নি। পুলিশ কমিশনার অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তাঁরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। |