একাধিক প্রকল্পে প্রায় ৬০ কোটি টাকা দুর্নীতির মামলায় শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অপসারিত চেয়ারম্যান তথা শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক রুদ্রনাথ ভট্টাচার্যকে জেরা করল পুলিশ। সোমবার শিলিগুড়ি পুলিশের গোয়েন্দা শাখায় তাঁকে ডেকে প্রায় দু’ঘণ্টা ধরে পুলিশ কমিশনার এবং তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিকেরা জেরা করেন। এ দিনই জেরা করা হয় জলপাইগুড়ি জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা এসজেডিএ’র বোর্ড সদস্য চন্দন ভৌমিককেও। পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “ওই দুর্নীতির মামলার ব্যাপারে নানা তথ্য মিলেছে। তা নিয়েই রুদ্রবাবু এবং চন্দনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।” এই দু’জন ছাড়াও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকতে চিঠি পাঠানো হয়েছে দার্জিলিং জেলা কংগ্রেস সভাপতি (সমতল) তথা মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক শঙ্কর মালাকার, শিলিগুড়ি পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র রঞ্জন শীলশর্মাকে। |
এ দিন টানা দু’ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় রুদ্রবাবুকে। তার পর শুরু হয় চন্দনবাবুকে জিজ্ঞাসাবাদের পালা। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে পুলিশ কমিশনার, তদন্তকারী পুলিশ আধিকারিক সেলিমা লামা-সহ পুলিশ কর্তারা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। কংগ্রেসের একটি সূত্র জানিয়েছে, শঙ্করবাবু আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য বাইরে গিয়েছেন। গত শনিবার শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে ডেকে দিনভর জেরা করা হয় এসজেডিএ’র প্রাক্তন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমারকে। তিনি বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক। কিছু ক্ষেত্রে সন্তোষজনক উত্তর না-পাওয়ায় তাঁকে ফের ডাকা হয়েছে। যে সমস্ত প্রকল্পের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে সে সব তাঁর আমলে হয়েছে। এসজেডিএ’র অন্য সদস্যদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
এ দিন জেরায় কী জানতে চাওয়া হল জিজ্ঞাসা করলে রুদ্রবাবু বলেন, “এসজেডিএ-র বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ নিয়ে তদন্ত চলছে। আগেই বাড়িতে সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলাম তদন্তে সাহায্য করব। তাই এ দিন এসেছি। ভবিষ্যতেও সমস্ত রকম সহায়তা করব।” চন্দনবাবু জানান, যে সব কাজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে সে সমস্ত বিষয়ে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। ওই সমস্ত কাজের বিস্তারিত পুলিশ জানার চেষ্টা করছে। দফতরের অনেকেই প্রকল্পগুলির কাজে যুক্ত। সে সব ক্ষেত্রে কী হয়েছে তদন্তের পরেই স্পষ্ট হবে। তবে চন্দনবাবুদের কাছে পুলিশের তরফে এও জানতে চাওয়া হয়েছে কোথাও কোনও অনিয়মের বিষয় নজরে আসলে তাঁরা সে সব কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন কি না। চন্দনবাবু জানান সে ব্যাপারটিও তিনি পুলিশ আধিকারিকদের জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রের খবর, রুদ্রবাবু দাবি করেছেন, এসজেডিএ’র একটি প্রকল্পে বাস্তুকারদের একাংশ অনিয়ম করার বিষয়টি তাঁর নজরে আসায় তিনি গত জানুয়ারি মাসেই উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবকে লিখিতভাবে জানান। তার মাস চারেক পরে এসজেডিএ’র তরফে অন্য চারটি প্রকল্পের ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ জানানো হয়। এসজেডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান গৌতম দেব বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী কাজে স্বচ্ছতা চান। বিভিন্ন প্রকল্পে অনিয়ম নজরে আসায় বিষয়টি তাঁকে জানানো হয়। তাঁর নির্দেশে পুলিশে অভিযোগ করা হয়। বাম জমানায় এটা স্বপ্নেও ভাবা যেত না।”
বস্তুত, ত্রিফলা বাতি বসানো থেকে জোড়াপানি নদী খাত সংস্কার করা-সহ নানা প্রকল্পের কাজ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে এসজেডিএ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গত মার্চের শেষ সপ্তাহে নগরোন্নয়ন দফতরের মুখ্য সচিব ফ্যাক্স পাঠিয়ে চেয়ারম্যান পদ থেকে রুদ্রবাবুর অপসারণের কথা জানান। একই ফ্যাক্স বার্তায় ওই পদে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের নাম ঘোষণা করা হয়। মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানে নিকাশি (এসটিপি-১ এবং এসটিপি-২) তৈরি এবং বাগডোগরা, মালবাজার এবং ময়নাগুড়ি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজে প্রায় ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ মেলে। তার মধ্যে ৩০ কোটি দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে তিনটি শ্মশানে বৈদ্যুতিক চুল্লি বসানোর কাজেই। ক্লোজড সার্কিট টিভি বসানোর ব্যাপারেও বহু কোটির দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে।
ওই মামলায় এসজেডিএ’র বাস্তুকার মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল এবং প্রবীণ কুমারকে ধরা হয়। ওই সমস্ত প্রকল্পের কাজে যুক্ত কলকাতার ঠিকাদার সংস্থা ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায়, তাঁর ছেলে দেবব্রতবাবু গ্রেফতার হন। ধরা হয় শিলিগুড়ির বিভিন্ন ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শঙ্কর পাল, অজয় মৈত্র, তাপস বসুকে। সিসিসি ক্যামেরা বসানোর বরাতপ্রাপ্ত সংস্থার ঠিকাদার সুব্রত দত্তকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ এখনও কয়েকজনকে খুঁজছে। |