এবার শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (এসজেডিএ) ই-টেন্ডারে জালিয়াতি করে দুটি প্রকল্পে অন্তত ১৮ কোটি টাকার বরাত একটি সংস্থাকে পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার এসজেডিএ-এর তরফে মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক শরদ দ্বিবেদীর অনুমতিক্রমে শিলিগুড়ির প্রধাননগর থানায় ওই অভিযোগ দায়ের করেছেন এসজেডিএ-র সুপারিন্টেডেন্ট ইঞ্জিনিয়র দীপেশ বনিক। যে সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, সেই ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরোর অন্যতম কর্ণধার অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর ছেলে দেবব্রতবাবু ইতিমধ্যেই ৫০ কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন।
ওই মামলায় এসজেডিএ-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়র মৃগাঙ্কমৌলি সরকার, সপ্তর্ষি পাল, আরেকটি ঠিকাদার সংস্থার কর্ণধার শঙ্কর পালও গ্রেফতার হয়েছেন। এসজেডিএ-এর তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক তথা বর্তমানে মালদহের জেলাশাসক গোদালা কিরণ কুমারকেও পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। এসজেডিএ সূত্রের খবর, ধৃতদের জেরার সময়ে পুলিশ একই সংস্থা কী ভাবে বারেবারে বরাত পেয়েছে তা নিয়ে তদন্ত করতে গিয়ে কিছু সূত্র পায়। সেই সুবাদে পুলিশ ই টেন্ডারে জালিয়াতি হয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে এসজেডিএ-কে জানিয়ে দেয়। এসজেডিএ-এর তরফে তদন্ত হলে ওই সন্দেহ জোরদার হয়। এর পরেই পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের হয়। শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনার কারলিয়াপ্পন জয়রামন বলেন, “এসজেডিএ-এর অভিযোগ পেয়েছি। সবই খতিয়ে দেখে আইনি ব্যবস্তা নেওয়া হবে। তদন্তের স্বার্থে এখন বিশদে কিছু বলতে পারব না।”
এসজেডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজের বরাত নিয়ে ‘দাদাগিরি’ ও দুর্নীতি ঠেকাতে গোড়া থেকেই ই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় জোর দেওয়া হয়। ওই প্রক্রিয়ায় একাধিক সংস্থা নিজেদের অফিসে বসেই অংশ নিতে পারে। ফলে, দরপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়ার সুযোগ থাকে না। বিধি অনুযায়ী, প্রতিটি সংস্থা ই টেন্ডারে অংশ নিয়ে নিজেদের দর দাখিল করে। নির্দিষ্ট সময়ের পরে এসজেডিএ-এর ভারপ্রাপ্ত কর্তা ‘পাসওয়ার্ড’ দিয়ে দরপত্র গুলি খুলে যাচাই করেন। সব কটি দরপত্রের ‘প্রিন্ট আউট’ নিয়ে সর্বনিম্ন দর প্রদানকারী ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দেওয়া হয়।
পুলিশের সন্দেহ হওয়ার কারণ, ইউরেকা ট্রেডার্স ব্যুরো মহানন্দা অ্যাকশন প্ল্যানের পর পর দুটি প্রকল্পে যথাক্রমে ১০ কোটি ৭ লক্ষ টাকা এবং ৭ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকার বরাত পায়। একই সংস্থা বারবার সর্বনিম্ন দর দিয়ে কী ভাবে বরাত পাচ্ছে তা নিয়ে পুলিশের সন্দেহ হয়। সেই সময়ে এসজেডিএ-কে পুলিশ বিষয়টি জানায়। এসজেডিএ বিভাগীয় তদন্তে নেমে জানতে পারে, ইউরেকা সংস্থাটি ওই দুটি প্রকল্পে যথাক্রমে ৮ কোটি ৭ লক্ষ টাকা ও ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকা দর ই টেন্ডারে লিখেছিল।
তা হলে বরাত দেওয়ার সময়ে কী ভাবে ইউরেকাকে বাড়তি ২ কোটি টাকা দেওয়া হল? কে বা কারা, কী ভাবে ওই টাকা ই টেন্ডারের ফর্মে জুড়ে দিলেন? খোঁজখবর করতে গিয়ে এসজেডিএ-এর তদন্তকারী অফিসাররা দেখেন, নিয়ম মেনে দরপত্র খোলার পরে ই টেন্ডারের প্রিন্ট আউট নেওয়া হয়নি। একশ্রেণির ইঞ্জিনিয়র ও কর্তার যোগসাজশে বাড়তি টাকা বরাতে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। সে ক্ষেত্রে জাল প্রিন্ট আউট তৈরি হয়েছে বলে এসজেডিএ-এর সন্দেহ। এমনকী, সংস্থার ‘ই টেন্ডার পোর্টাল’ পরীক্ষা করে এসজেডিএ দেখেছে, সেখানে ওই সংস্থার দুটি তাদের দেওয়া দরপত্রে ৮ কোটি ৭ লক্ষ ও ৫ কোটি ৬৭ লক্ষ টাকাই লিখেছে। তাই ইঞ্জিনিয়র-ঠিকাদার ও কর্তাদের একাংশের যোগসাজশের বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যায় এসজেডিএ-এর তদন্তকারী অফিসারদের কাছে।
এই ব্যাপারে এসজেডিএ-এর তৎকালীন মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক গোদালা কিরণ কুমার বলেন, “দফতরের বাস্তুকারই পুরো বিষয়টি দেখতেন। তাঁরা সই করলে তবেই আমি করতাম। তবে ঠিক কী হয়েছে না দেখে বলতে পারছি না।” |