টানা বৃষ্টি, জনজীবন বিপর্যস্ত জলপাইগুড়িতে
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হল জলপাইগুড়ি শহরের জনজীবন। সোমবার সকালে শহরের অন্তত ১০টি ওয়ার্ড সোমবার সকাল থেকে জলমগ্ন হয়ে পড়ে। উঁচু এলাকা বলে পরিচিত জলপাইগুড়ি টাউন স্টেশন লাগোয়া তিন নম্বর ঘুমটি এলাকার রাস্তাতেও জল জমে যায়। আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শহর ও লাগোয়া এলাকায়। যার জেরেই সোমবার সকালে শহরের অধিকাংশ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে।
রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ বৃষ্টি শুরু হয় জলপাইগুড়িতে। রাতভর বজ্র বিদ্যুৎ-সহ টানা বৃষ্টিপাত চলে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, রাত থেকে সোমবার সকাল ৮টা পর্যন্ত শহর এলাকায় ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা কিনা সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ড।
টানা বৃষ্টিতে শহরের নেতাজি পাড়া, শান্তিপাড়া, পরেশ মিত্র কলোনী, পান্ডাপাড়া, অশোকনগর, রায়কত পাড়া, নিউ টাউন পাড়ার একাংশ জলমগ্ন হয়ে পড়ে। টানা বৃষ্টি চলতে থাকায় পুরসভার বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগ থেকে সোমবার ভোর রাতেই প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে শহরে পরিদর্শন শুরু করা হয়। তবে সকালের পরে বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হয়নি। দুপুরের পর থেকেই শহরের সব এলাকার জল নেমে যায়।
জলমগ্ন মহামায়াপাড়া।
শহরের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইন্দিরাকলোনি, পরেশমিত্র কলোনি, ১৫ এবং ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের মহামায়াপাড়া, কংগ্রেসপাড়া, পাণ্ডাপাড়া এলাকাগুলিতে কোথাও এক হাঁটু, কোথাও এক কোমর জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। শহরের হাইড্রেনগুলি ভরে গিয়ে জল উপচে রাস্তায় চলে এসেছে। রবিবার রাত সাড়ে ১০ টা থেকে সোমবার সকাল পর্যন্ত টানা বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি থামার পর নতুনপাড়া, জয়ন্তীপাড়া এলাকার জল নেমে গেলেও এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত জলবন্দি হয়ে থাকে মহামায়াপাড়া, পাণ্ডাপাড়া এলাকার বাসিন্দারা। অন্য দিকে এ দিন বাঁধ নির্মাণের দাবিতে সেচ দফতরে বিক্ষোভ দেখান ১ এবং ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, করলার দু’ধারে দ্রুত বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ১নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়ন্তী পালের নেতৃত্বে সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার বিপ্লব রায়কে স্মারকলিপি দেন তারা। তাঁদের দাবি, দ্রুত করলা নদী সংস্কার করতে হবে। নেতাজিপাড়া এবং পরেশ মিত্র কলোনির কাছে এবং হাসপাতালপাড়া এলাকায় করলা নদীর বাঁধ তৈরি করতে হবে। এই সমস্যা খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন সেচ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার।
ওই সমস্ত ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটু বৃষ্টিতেই জলমগ্ন হয়ে পড়ছে। রবিবার রাত থেকে বৃষ্টিতে ভোর রাতের দিকেই বিভিন্ন বাড়িতে জল ঢুকতে শুরু করে। ফি বছর বর্ষার সময় এই পরিস্থিতি হয়। অথচ নিকাশি ব্যবস্থা ঠিক করতে পুর কর্তৃপক্ষের কোনও হেলদোল নেই। তাদের উদাসীনতার জন্যই বাসিন্দাদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। মহামায়াপাড়া, কংগ্রেসপাড়া, পাণ্ডাপাড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় বিকেল পর্যন্ত হাঁটু জল জমে ছিল। বাড়িতে জল ঝুকে পড়ায় রান্না করতে না পেরে শুকনো খাবার খেয়েই দিন কাটাতে হয়েছে অনেককে। এলাকাবাসীদের ক্ষোভ প্রতি বর্ষাতেই এ ভাবে জল হলেও সমস্যা মেটাতে কোনও স্থায়ী ব্যবস্থা করা হয়নি। অনেক এলাকায় ন্যুনতম কোনও নিকাশি ব্যবস্থাও নেই। সামান্য বৃষ্টিতেই তাই এলাকায় জল দাঁড়িয়ে যায়। এলাকার বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু রায় চৌধুরী বলেন, “ঘুম ভেঙে দেখি ঘরের ভিতরে জল ঢুকেছে। মেঝেতে রাখা জিনিপত্র ভিজে গিয়েছে।” বাড়ির াসমনে জল জমে ছিল তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী সাইনি কুণ্ডুদের। স্কুলে পরীক্ষা থাকায় এ দিন বাবার কাঁধে চেপেই তাকে বাড়িতে থেকে বার হতে হয়। বর্ষায় বাড়িতে জল জমে গেলে মাঝেমধ্যেই তার স্কুলে যাওয়া বন্ধ হয়ে যায়।
বৃষ্টি চলতে থাকায় রাতের বেলাতেই শান্তিপাড়া, নেতাজি পাড়া, পরেশ মিত্র কলোনীর বাড়িগুলিতে জল ঢুকতে শুরু করে। এ দিন সকালে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা জেলা সেচ দফতরে গিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। বাসিন্দাদের দাবি, এলাকায় বাঁধ না থাকার কারণে, লাগোয়া করলা নদী থেকে জল ঢুকে যাওয়ায় গোটা এলাকা প্লাবিত হয়ে গিয়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বাসিন্দাদের দাবি নিয়ে আলোচনা চলেছে।
কদমতলা বালিকা বিদ্যালয়ের সামনে জল পেরিয়ে যাচ্ছে ছাত্রীরা। সোমবার।
জলপাইগুড়ি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান পিনাকী সেনগুপ্ত বলেন, “শহরের অধিকাংশ এলাকাই জলমগ্ন হয়ে পড়ে। পুরসভার তরফে রাতের বেলাতেই শহরের বিভিন্ন এলাকায় পুরসভার প্রতিনিধি দলকে পাঠানো হয়েছিল। তবে দুপুরের পরে শহরের জল কমতে শুরু করায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।” তিনি জানান, যাঁদের বাড়িতে জল জমে রয়েছে, বা ঘড় ছাড়া, রান্নার ব্যবস্থা করতে পারেননি তাঁদের জন্য শুকনো খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
অন্য দিকে, রবিবার রাতের ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে জেলার মালবাজার ব্লকেও। রাত ১১টার পর থেকে ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে বৃষ্টিও হয়েছে। মালবাজার শহর ছাড়াও ডামডিম, ওদলাবাড়ি, তারঘেরা এলাকাতে শতাধিক গাছ উপড়ে পড়েছে। চা বাগানেরও বেশ কিছু ছায়াগাছ উপড়ে পড়েছে। ওদলাবাড়ি, তারঘেরা এলাকাতে বেশ কিছ বাড়ির টিনের চাল ঝড়ে উড়ে গিয়েছে। গাছ পড়ে বিদ্যুতের খুঁটিও পড়ে যাওয়ায় মালবাজার ব্লকের বহু এলাকা বিদ্যুতহীন হয়ে পড়ে। মালবাজার মহকুমাশাসক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, “কোন এলাকায় কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তার তালিকা তৈরি করতে সমীক্ষা শুরু হয়েছে।”

ছবি: সন্দীপ পাল।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.