কেন্দ্রীয় সরকারের তেলঙ্গানা-সিদ্ধান্তের প্রভাব আছেই। কিন্তু দার্জিলিঙে গোর্খাল্যান্ড সমস্যা মাথাচাড়া দেওয়ার পিছনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দায় অস্বীকার করতে পারেন না বলে মত সিপিএমের। মমতাকে আক্রমণ করলেও সিপিএম নেতৃত্ব একই সঙ্গে আলোচনার পথে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করার দাবি জানাচ্ছেন।
কলকাতায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য থেকে শিলিগুড়িতে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, গোর্খা আঞ্চলিক প্রশাসনের (জিটিএ) চুক্তি করার সময় গোর্খাল্যান্ডের উল্লেখ রাখাতেই ভবিষ্যতে বিপদের বীজ লুকিয়ে ছিল। জিটিএ চুক্তি এবং তার পরে বিধানসভায় জিটিএ বিল পাশের সময় এই বিপদের আশঙ্কার কথা তুলেছিলেন বাম নেতারা। রাজ্য সরকার শোনেনি। এখন তেলঙ্গানার হাওয়ায় সেই বিপদই মাথা তুলেছে বলে মনে করছেন বুদ্ধবাবু-অশোকবাবুরা। |
মহাজাতি সদনে সোমবার মুজফ্ফর আহমেদের ১২৫তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে বুদ্ধবাবু দার্জিলিং সমস্যার জন্য দায়ী করেছেন কেন্দ্রকেই। তাঁর কথায়, “রাজ্যের মাথার উপরে নতুন বিপদ! কংগ্রেস একের পর এক অন্যায় করছে! ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনর্গঠনের সূত্র বহু দিন ধরেই ছিল। কংগ্রেস হঠাৎ তেলঙ্গানা চেয়ে হাত পোড়াতে গেল কেন? কংগ্রেস ওটা না-করলে এখানে গোর্খাল্যান্ড নিয়ে আন্দোলন এই ভাবে মাথাচাড়া দিত না।” রাজনৈতিক ফায়দার জন্য পৃথক তেলঙ্গানা করতে গিয়ে এখন কংগ্রেসকে যে পাল্টা চাপের মুখে পড়তে হচ্ছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন বুদ্ধবাবু। তবে এখানেই না থেমে এক হাত নিয়েছেন তৃণমূলকেও। বুদ্ধবাবু বলেছেন, “তৃণমূল কী করল? গোর্খাল্যান্ড তারা চুক্তিতে রেখে দিল। বিমল গুরুঙ্গেরা তখন থেকেই বলছে, আমাদের গোর্খাল্যান্ড থাকল, তার উপরে জিটিএ-ও করছি। তখনই বলেছিলাম বিপদ। এখন সেই বিপদ বেরিয়ে এসেছে!” আর সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুর কটাক্ষ, “পাহাড় অট্টহাসি হাসছে!”
প্রশাসনিক অদূরদর্শিতার পাশাপাশি তৃণমূলের রাজনৈতিক কৌশলকেও দায়ী করছেন বুদ্ধবাবু-অশোকবাবুরা। সিপিএমের উত্তরবঙ্গের নেতা এবং রাজ্য কমিটির সদস্য অশোকবাবু যেমন বলেছেন, “বাম-বিরোধী হাওয়া বুঝে গত বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রী তো গুরুঙ্গদের সঙ্গে নিয়েছিলেন। গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে সমঝোতা ছাড়া এই অঞ্চলে ওঁদের জয় কি সহজ হত?” একই ভাবে বুদ্ধবাবুরও বক্তব্য, “গত বিধানসভা ভোটের আগে রাজ্যে যত বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ছিল, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করেছিল তৃণমূল।”
তেলঙ্গানার সঙ্গে গোর্খাল্যান্ডের পৃথক রাজ্যের দাবিকে যে এক করে দেখা উচিত নয়, তা-ও বোঝাতে চেয়েছেন অশোকবাবু। গোর্খাল্যান্ডের দাবির সঙ্গে জাতিসত্তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের সম্পর্ক মাথায় রেখে সংবেদনশীল ভাবে সমস্যা মোকাবিলার কথা বলেছেন দীর্ঘ দিন পাহাড়ে গোর্খা পার্বত্য পরিষদ পরিচালনার প্রক্রিয়ার বিষয়ে অভিজ্ঞ প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী কড়া হচ্ছেন, এ সব কথার এখন চর্চা হচ্ছে। কিন্তু আমরা তো গোর্খাল্যান্ড ঠেকিয়ে রেখেছিলাম ১৯ বছর। সেটা অস্বীকার করা সম্ভব?”
মমতার সরকারের সম্পাদিত চুক্তিতেই সমস্যার বীজ নিহিত থাকার কথা বলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। তবে সল্টলেকে এ দিন মুজফ্ফর আহমেদের জন্মদিনের অনুষ্ঠানের অবসরে শাসক দলের রাজনৈতিক সমালোচনা করলেও পাহাড়ে শান্তি বজায় রাখার আবেদন করেছেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর বক্তব্য, জনজীবন বিঘ্নিত করে, মানুষের রুজি-রোজগার বিপন্ন করে পাহাড়ের টানা বন্ধ তাঁরা সমর্থন করেন না। কিন্তু রাজ্য সরকারের দায়িত্ব অনেক বেশি। সূর্যবাবুর কথায়, “বলপ্রয়োগ করলে শান্তি আসবে না। রাজ্যের অখণ্ডতা বজায় রাখতে সর্বদল বৈঠক করে, কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পথ খুঁজে বার করা হোক। কিন্তু রাজ্য সে পথে হাঁটছে না।” |