জিটিএ চুক্তি বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার সঠিক পথেই এগোচ্ছে বলে জানালেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। রবিবারই জিটিএ চুক্তির রূপায়ণ ত্বরাণ্বিত করতে ফের গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ। তাই রাজ্যপালের এ দিনের মন্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মোর্চা নেতৃত্ব রবিবার এ-ও জানিয়েছিলেন, রাজ্যপাল ডাকলে তাঁর সঙ্গে দেখা করে জিটিএ চুক্তি দ্রুত বাস্তবায়িত করার আর্জি জানানো হবে। ঘটনাচক্রে সোমবারই ‘ব্যক্তিগত’ সফরে দার্জিলিঙে পৌঁছেছেন রাজ্যপাল। এনজেপিতে নেমে দার্জিলিঙে রওনা হওয়ার মুখে তিনি বলেন, “জিটিএ চুক্তি বাস্তবায়িত করতে রাজ্য সরকার সঠিক পথেই এগোচ্ছে। আশা করছি, দ্রুত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হবে। মোর্চার প্রতিনিধিদল আমার সঙ্গে দেখা করতে চাইলে, দেখা করব।” মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে আলোচনার পরেই রাজ্যপালের কাছে যাওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। |
যে চুক্তি বাস্তবায়িত করার জন্য মোর্চা বলছে, তা গত ১৮ জুলাই স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী, সুবাস ঘিসিংয়ের আমলে থাকা দার্জিলিং গোর্খা পার্বত্য পরিষদের চেয়েও শক্তিশালী হবে জিটিএ। মোর্চার দাবি মেনে তরাই-ডুয়ার্সের কোনও এলাকা তাতে সংযোজিত করা যায় কি না, সেটাও খতিয়ে দেখার প্রক্রিয়া শুরু করেছে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শ্যামল সেনের নেতৃত্বাধীন কমিটি। কিন্তু, কমিটির মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ায় সম্প্রতি তার সময়সীমা ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে। তাতে তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা জিটিএ-র অন্তর্ভুক্তির আওতার আনার দাবি ঝুলে গিয়েছে কি না, সেই প্রশ্নে মোর্চার মধ্যেই জল্পনা চলছে। এমনকী, মোর্চার নিচুতলার কর্মীদের একাংশের মধ্যেও ক্ষোভ বাড়ছে।
দলের মধ্যে ক্ষোভ যে বাড়ছে সে খবর পেয়েছেন মোর্চার শীর্ষ নেতারাও। মোর্চা সূত্রের খবর, একই ভাবে পাহাড়ের নানা এলাকায় নিঃশব্দে একাধিক মোর্চা-বিরোধী দল জিটিএ চুক্তি রূপায়ণে টালবাহানার প্রশ্নে প্রচারও চালাচ্ছেন। দলের অন্দরে ও বাইরের চাপ সামাল দেওয়ার জন্য মোর্চার পক্ষ থেকে মহাকরণে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়। মোর্চা নেতারা জানতে পারেন, রাজ্যের তরফে প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পূর্ণ করার চেষ্টা চললেও কেন্দ্রের পক্ষে সে ভাবে সাড়া মিলছে না। মোর্চা সূত্রের খবর, তার পরেই মোর্চার পক্ষ থেকে জিটিএ নিয়ে চাপ বাড়ানোর জন্য ফের আলাদা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের হুমকি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
মোর্চার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি পাহাড়ে শহিদ সভা করবে মোর্চা। ওই দিন পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় মোর্চার পতাকা তোলা হবে। মোর্চা সদস্যেরা কালো কাপড় মাথায় বেঁধে প্রতিবাদ জানাবেন।
মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বিনয় তামাং বলেন, “আমাদের অবস্থান রাজ্য সরকারের কাছে পরিষ্কার করা হয়েছে। আশা করছি ২৭ মার্চের মধ্যে জিটিএ চুক্তি কার্যকর হবে। না হলে আমরা আন্দোলনে নামব।”
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, রাজ্যপাল তিন দিন থাকবেন দার্জিলিঙে। এ বারের সফর পুরোপুরি ‘ব্যক্তিগত’। আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্যপাল কলকাতায় ফিরবেন। |